দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ পেরু এমনিতেই এক আজব দেশ, যার মধ্যে না জানি এখনো কত রহস্য লুকিয়ে আছে। যার মধ্যে অন্যতম হল নাজকা, কিন্তু এই জায়গাটা সেই বিখ্যাত নাজকা লাইন নয়। বরং নাজকা লাইনের ওপর দিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই জায়গাটি, যার নাম চৌচিলা। বলে রাখা ভালো যে এটি একটি প্রসিদ্ধ কিন্তু আসলে আনকোরা কবরস্থান।
কবরস্থানে ঢোকার জন্য সামান্য ফি আছে। কিন্তু সেই ফি এই জায়গার তুলনায় কিছুই নয়। আর এটিই হয়তো পৃথিবীর একমাত্র কবরস্থান পিরামিড বাদ দিয়ে যেখানে গাইড ভাড়া করা যে এলাকার ঐতিহাসিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে পারে। এই কবরস্থানের ইতিহাস খুবই আকর্ষণীয়। ঐতিহাসিকদের মতে এই কবরস্থানটি ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের আর এখানে যা যা কবর দেওয়া হয়েছে সেই ইতিহাস নাকি পরের আরো ৬০০ থেকে ৭০০ বছরের।


আরো পড়ুনঃ ইউরোপীয় শিল্প ভাবনার ছোয়া বাঁকুড়ার ঐতিহাসিক ‘হিঙ্গুল পুতুল’ এ
অনেক ঐতিহাসিক স্থানের মতো, এই কবরটিতেও ডাকাতরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ডাকাতি করে এর সব শিল্পকর্ম এবং মমির ক্ষতি করে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, কবরস্থানটি এখন পেরু সরকার আইন করে সুরক্ষিত করে দিয়েছে।


কবরস্থানের আশেপাশের এলাকা মরুভূমি, ধুলোপথ বরাবর যেতে হয় কবরস্থান অবধি। এই হাঁটার সময় দেখা যায় যে চারিদিকে মানুষের হাড় আর পুরানো কাপড় মাটি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কবরস্থানে অবস্থিত অধিকাংশ মমি নাজকার আশেপাশের অন্যত্র থেকে আবিষ্কৃত হয়। তারপর সময়ের সাথে সাথে এই খোলা কবরস্থানে তাদের সরানো হয়েছে। কবরস্থানের দিকে তাকালে যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু মমিও দেখা যাবে। প্রতিটি সমাধি কক্ষ যাতে সূর্য-এর আলো থেকে রক্ষা পায় তার জন্য একটি কাঠের কাঠামো দ্বারা আবৃত করা আছে।
যেখানে শিশুদের কবর কাঠ দিয়ে ঘেরা সেখানে মায়েরা খোলা রোদে পোড়া ইটের দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। দেখলে মনে হয় যে এটি কবর নয় কোনো পুরোনো সভ্যতার একটি গ্রামের পাড়া। ১৯২০ সালে আবিষ্কার হলেও এর পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করতে করতে ১৯৯৭ অবধি গড়িয়ে যায় ফলে নাজকা সভ্যতার এই অমূল্য ইতিহাসকে সঠিকভাবে ধরা যায় না এখানে, কিন্তু যতটুকু আছে তাতেই বোঝা যায় যে এ যেন একই পৃথিবী…মায়েরা তাদের সন্তানদের সূর্যের প্রখরতা থেকে বাঁচাচ্ছে জন্মের ওপারেও।