দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আজ দীপাবলি’র শেষ লগ্নে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে নক্ষত্র পতন। দীর্ঘ ৪০ দিন লড়াইয়ের পরে রবিবার দুপুর ১২:১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫। শিল্পীর মৃত্যু হয় না। তিনি অমর, তাঁর বিচরণ যুগ পেরিয়ে তাই বাঙালির হৃদয়ে ও স্মৃতিতে যে তিনি চিরকালীন তা বলাই বাহুল্য। তিনি বাঙালির ‘একম এবং অদ্বিতীয়ম ফেলুদা’।
‘অপূর্ব’র মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা বিনোদন জগত। শোকের ছায়া রাজনৈতিক মহলেও। বর্ষীয়ান এই অভিনেতার মৃত্যুতে টুইট বার্তায় শোকজ্ঞাপন করেছেন দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। রবিবার দুপুরে একটি টুইট বার্তায় ছয় দশকেরও বেশি সময়ের উজ্জ্বল এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, ‘সত্যজিত্ রায়ের মাস্টারপিসে ‘অপু’ ট্রিলজি এবং অন্যান্য সিনেমায় তাঁর স্মরণীয় অভিনয়ের জন্য সৌমিএ চট্টোপাধ্যায়কে আজীবন স্মরণ করা হবে।’
এদিন তিনি আরও বলেন, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার সঙ্গে, সঙ্গে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগত আরও একজন কিংবদন্তি নায়ককে হারাল। সত্যজিত্ রায়ের মাস্টারপিসে ‘অপু’ ট্রিলজি এবং অন্যান্য স্মরণীয় অভিনয়ের জন্য তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হবে। অভিনয়ের নৈপুণ্যে তিনি ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন।’
কিংবদন্তি অভিনেতার পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন যে, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, পদ্মভূষণ এবং লেজিয়ান ডি’হ্নেউর সহ একাধিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরষ্কার এনে দিয়েছে। তাঁর পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা রইল। চলচ্চিএ জগত্ এবং বিশ্বজুড়ে তাঁর অগনিত ভক্তদের জন্য রইল আমার সমবেদনা।’
শুধু রাষ্ট্রপতি নয়, প্রবীণ অভিনেতার মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং রাজনৈতিক মহলের বিভিন্ন দলের নেতা-মন্ত্রীরা।
এদিন দুপুরে টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগত, পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কাজের মধ্যে বাঙালির চেতনা, ভাবাবেগ ও নৈতিকতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। তাঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত। শ্রী চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই। ওঁ শান্তি ।’
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে টুইট বার্তায় শোকজ্ঞাপন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন টুইটারে তিনি লেখেন, ‘কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়জির মৃত্যুর খবরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। বাংলা চলচ্চিত্রকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সৌমিত্র দার মৃত্যু ভারতীয় রুপালি পর্দার অপূরণীয় ক্ষতি। আরও এক রত্নকে হারাল দেশবাসী। আমার সমবেদনা এবং প্রার্থনা তাঁর পরিবার এবং অগণিত অনুগামীদের সঙ্গে রয়েছে। ওম শান্তি শান্তি শান্তি।’
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট বার্তায় শোক জ্ঞাপন করে লিখেছেন, ‘ দাদাসাহেব ফালকে পুরষ্কারপ্রাপ্ত শ্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবরে দুঃখিত। তিনি বহু বছর ধরে গোটা জাতির কাছে শ্রদ্ধার পাএ ছিলেন। তাঁর পরিবার, বন্ধু এবং ভক্তদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল।’
বাঙালির ফেলুদার প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এদিন বেলভিউ নার্সিংহোমে পৌঁছানোর আগে সৌমিএ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবরে টুইট করে তিনি বলেন, ‘ চলে গেলেন ফেলুদা। ….. আন্তর্জাতিক, ভারতীয় ও বাংলা সিনেমা এক বিশাল ব্যক্তিত্বকে হারাল। অনাথ হয়ে গেল বাংলা সিনেমা।’
‘বেলাশেষে’র অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পাশের রাজ্য ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত শোরেন। এদিন দুপুরে একটি টুইট বার্তায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করে তিনি লেখেন, ‘পরিবারের সদস্য ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধুদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। সত্যজিত্ রায়ের মাস্টারপিসের সমার্থক বাংলার অন্যতম সেরা অভিনেতা। আমরা তাঁর ভারতীয় সিনেমায় অসাধারণ অবদানের মধ্য দিয়ে ‘অপুকে’ স্মরণ করব। তার আত্মা শান্তি কামনা করি।’
ফেলুদার আত্মার শান্তি কামনা করে টুইট করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘ প্রবীণ চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং দাদাসাহেব ফালকে ও পদ্মভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর সম্পর্কে জানতে পেরে গভীরভাবে দুঃখিত। কিংবদন্তি সত্যজিত্ রায়ের সঙ্গে তাঁর ফেলুদা ও কালজয়ী সহযোগিতায় অন-স্ক্রিন চিত্রায়নে অমর হয়ে রয়েছে। তিনি একটি দুর্দান্ত উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছেন।’