25 C
Kolkata
Monday, March 20, 2023
More

    বাংলাকে শোকস্তব্ধ করে বিদায় নিলেন স্বর্ণযুগের শেষ কিংবদন্তী, গান স্যালুট এ শেষ শ্রদ্ধা

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ‘শুটিং’ আর এটা না করলে তাঁর চলবেই না। এটাই যে তাঁর ধ্যান জ্ঞান পেশা নেশা সব কিছু। তাই এবারও তিনি বেরিয়ে পড়লেন। আর ৮৬ বছর বয়সেও করোনা আবহে শুটিং এ ব্যস্ত হলেন নিজের জীবন কে সকলের সামনে তুলে ধরবেন বলে। আর এরপর করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবনের সর্বশেষ লড়াইটা লড়তে হল দীর্ঘ ৪০ দিন ধরে। এই লড়াই এবার জীবনকে হারতেই হলো।

    বাংলার স্বর্ণযুগের শেষ কিংবদন্তী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যিনি বাঙালীর আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। যাঁর প্রতি মানুষের ছিল অধিকারবোধ ও যিনি ছিলেন বাংলার গর্ব। যেভাবে সত্যজিত রায়, ঋত্বিক ঘটক ও উত্তম কুমারের বাঙালি নক্ষত্রের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে, তেমনই সৌমিত্রের নামও সেই লিস্ট এ ধ্রুবতারার মত। সুদীর্ঘ অভিনয় জীবনে তাঁর অভিনীত চরিত্র গুলি বাংলার মানুসের মননে, সংস্কৃতির সিঞ্চনে বেঁচে থাকবে যুগ থেকে যুগ। প্রথম ছবি ‘‌অপুর সংসার’ থেকে তাঁর নিজের অসমাপ্ত বায়োপিক ‘‌অভিযান’ই হোক না কেন, সবেতেই তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন।

    See the source image

    উত্তর কলকাতার সূর্যসেন স্ট্রিটে ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্ম হয় সৌমিত্র বাবুর। এরপর বাবার ট্রান্সফারের কারণে কৃষ্ণনগরে চলে যাওয়া। সেখানেই ঠাকুর্দা ও বাবার কাছ থেকে মঞ্চ শিক্ষা। ভালবাসতে শুরু করলেন মঞ্চকে। তাঁর উচ্চারণ শুদ্ধই হয় আবৃত্তি শিখে। এরপর কলেজে পড়াশোনা করতে করতেই বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব অহিন্দ্র চৌধুরীর কাছ থেকে হাতে কলমে মঞ্চের তালিম নিতে শুরু করেন। কলেজের শেষ দিকে প্রথম শিশির ভাদুরীর নাটক দেখতে গিয়েছিলেন তিনি।

    See the source image

    আর সেই মঞ্চ দেখে বুঝলেন এটাই তাঁর স্থান। এই জগতেই তাঁর প্রবেশের প্রয়োজন। ভাদুরীর মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে যোগ্য শিষ্য’র মতো তালিম নিলেন সৌমিত্র। এর পর বাচিক পটুতার কারণে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সুযোগ কিন্তু অভিনয় নিয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি তিনি। আর এমনই এক সময়ে জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণ টিতে এসে দাঁড়ালেন।

    See the source image
    See the source image

    কফি হাউজে জায়রা পথে রাস্তা থেকেই পাকড়াও হন সৌমিত্র। সত্যজিত রায়ের সহকারী পরিচালক বগল দাবা করে সত্যজিতের বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু অপরাজিত’র জন্যে কাস্টিং এ সৌমিত্রকে দেখে ‘রায় বাবু’ বলেছিলেন ‘‌এবাবা, তুমি তো কলেজের অপুর তুলনায় বয়সে অনেকটাই বড়।’ হয়তো প্রথম বারের আলাপে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ পূরণ হলো না। কিন্তু তারপর থেকে যতবারই তাঁদের দেখা হয়েছিল, সৌমিত্র কথা বলতেন চুপ করে শুনতেন সত্যজিৎ। এভাবেই মাণিক বাবু পাক জহুরির মত পরখ করেছিলেন সৌমিত্রকে। সৌমিত্রের ভাষা, চালচলন এগুলোকে ধরেই চিত্রনাট্য লিখলেন মানিকবাবু। বয়সের কারণে ‘‌অপরাজিত’ (‌১৯৫৬)‌–তে কাজ করতে পারলেন না বটে। ‌কিন্তু ‘‌অপুর সংসার’ (‌১৯৫৯)‌‌ থেকে সেই যে মানিকবাবুর সাথে পথ চলা শুরু, ইতিহাস না হওয়া অবধি থামলেন না।

    See the source image

    সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের যাত্রা শুরু। সালটা ১৯৫৮। সৌমিত্র গিয়েছেন সত্যজিতের ‘জলসাঘর’ ছবির শুটিং দেখতে। সেট ছেড়ে বেরোবেন, রায় হাঁক পাড়েন। এর পর যা হয় তার জন্য বোধ হয় প্রস্তুত ছিলেন না সৌমিত্র নিজেও। অভিনেতা ছবি বিশ্বাসের কাছে সৌমিত্রকে পরিচয় করান সত্যজিৎ। ‘‌এই হল সৌমিত্র। আমার পরবর্তী ছবি অপুর সংসারে ও অপু করছে।’‌ তৈরি হল নতুন জুটি। সৌমিত্র–মানিকদা। তৈরি হল কিছু মাস্টারপিস। দেবী (‌১৯৬০)‌, তিন কন্যা (‌১৯৬১)‌, ‘‌চারুলতা’‌ (‌১৯৬৪)‌, ‘কাপুরুষ‌’ (‌১৯৬৫)‌‌, ‘‌জয় বাবা ফেলুনাথ’‌ (‌১৯৭৮)‌, ‘হীরক রাজার দেশে‌’‌ (‌১৯৮০)‌, ‘সোনার কেল্লা‌’‌ (‌১৯৭৪)‌, ‘ঘরে বাইরে‌’‌ (‌১৯৮৪)‌, ‘অভিযান‌’ (‌১৯৬২)‌‌, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি‌’ (‌১৯৭০), ‘‌অশনি সংকেত‌‌’‌ (‌‌১৯৭৩), রায়ের সঙ্গে মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন।

    See the source image

    তবে কেবলমাত্র এই জুটির মধ্যেই আটকে ছিলেন না সৌমিত্র। ‘‌অপুর সংসার’ দেখার পর পরিচালকেরা বুঝে গিয়েছিলেন তিনি একজন ‘‌অভিনেতা’। আর তাই মৃণাল সেনের ‘‌পুনশ্চ‌’‌ (‌১৯৬১), ‘‌প্রতিনিধি’ (‌১৯৬৪)‌‌‌‌, ‘‌আকাশ কুসুম’‌ (‌১৯৬৫)। তপন সিন্‌হার ‘‌ক্ষুধিত পাষাণ’‌ (‌১৯৬০)‌, ‘‌ঝিন্দের বন্দী’‌ (‌১৯৬১), ‘‌হাটে বাজারে’ (‌১৯৬৭)‌‌। অসিত সেনের ‘‌স্বয়ম্বর‌‌’‌ (‌১৯৬১), ‌‘‌স্বরলিপি’‌ (‌১৯৬১), ‘‌আগুন’‌ (‌১৯৬২)। ‌অজয় করের ‘‌অতল জলের আহ্বান’‌ (‌১৯৬২), ‘‌সাত পাঁকে বাঁধা’‌ ও ‘বর্ণালী’ (‌১৯৬৩)। অরূপ গুহঠাকুরতার বেনারসি (‌১৯৬২)‌। নিত্যানন্দ দত্তের ‘‌বাক্স বদল’‌ (‌১৯৬৫)। তরুণ মজুমদারের ‘‌একটুকু বাসা’ (‌১৯৬৫)‌‌, ‘‌গণদেবতা’‌ (‌১৯৭৯)। আশুতোষ বন্দোপাধ্যায়ের ‘‌তিন ভুবনের পারে’ (‌১৯৬৯)‌‌। দিনেন গুপ্তের ‘‌বসন্ত বিলাপ’‌ (‌১৯৭৩)। সরজ দের ‘‌কোণি’ ‌(‌১৯৮৪)। অপর্ণা সেনের ‘‌পারমিতার একদিন’‌ (‌২০০০)‌। অভিজিত চৌধুরির ‘‌পাতালঘর’‌ (‌২০০৩)। প্রভাত রায়ের ‘‌লাঠি’ (‌১৯৯৬)। অতনু ঘোষের ‘‌অংশুমানের ছবি’ (‌২০০৯), ‘‌ময়ুরাক্ষী’ (‌২০১৭)। গৌতম ঘোষের ‘‌শূন্য অংক’‌ (‌২০১৩)। শিবপ্রসাদ মুখার্জি ও নন্দিতা রায়ের ‘‌বেলাশেষে’ (‌২০১৫)। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল চ্যাটার্জির ‘‌সাঁঝবাতি’ (‌২০১৯)‌‌‌‌‌‌‌‌‌ সহ আরও অগুনতি ছবি।

    See the source image
    See the source image

    তিনি সবার প্রিয় ‘‌অপু’‌। নিয়তির কাছে পরাজিত হলেও তিনি মানুষের মনে সদা ‘‌অপরাজিত’‌। সেই সৌমিত্র চ্যাটার্জিকে গান স্যালুটে শেষ শ্রদ্ধা জানালো রাজ্য সরকার। চলছে অভিনেতার শেষকৃত্য। রবিবার বেলভিউ নার্সিংহোম চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‌মহানায়কই শুধু নয়, চলচ্চিত্র জগতের এক মহা প্রতিভাবান বরণীয়, স্মরণীয় মানু্ষ। গণ আন্দোলনেরও নায়ক সৌমিত্রদা। কোভিড কিন্তু তাঁর কাছে হেরে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা তাঁকে ধরে রাখতে পারিনি। সৌমিত্রদার মৃত্যু বেদনাদায়ক। বাংলার আজ এ এক বড় দুঃখের দিন।’

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    সরে গেল ‘এটিকে’ , পরের মরশুমে ঝড় তুলতে আসছে ‘মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস’

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে বড় ঘোষণা করলেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। মোহনবাগানের নামের শুরু থেকে সরে গেল...

    ভারতসেরা ‘মোহনবাগান’ ! বাঙালির গর্বের দিন

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাপ বনাম পাল্টা চাপ। পেনাল্টি বনাম পাল্টা পেনাল্টি। অফুরান দৌড় আর স্কিলের ফুলঝুরি দেখাতে...

    ISL চ্যাম্পিয়ন এটিকে মোহনবাগান

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : আই এস এল ফাইনালে রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিলো এটিকে মোহনবাগান । বেঙ্গালুরু এফসিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো...

    বাড়িতে আনুন বেশকিছু হোমিওপ্যাথি ঔষধ , পাবেন বহু সমস্যা মুক্তি

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : হোমিওপ্যাথি এক পুরনো চিকিৎসা পদ্ধতি। আয়ুর্বেদের সঙ্গেও এই চিকিৎসা পদ্ধতির বেশ কিছু মিল...

    বড় বড় মার্কিন ব্যাংকের পতন ! আসছে মহামন্দা ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক এবং সিগনেচার ব্যাঙ্ক – পর পর দুই বড় মাপের মার্কিন ব্যাঙ্কের...