26 C
Kolkata
Saturday, April 1, 2023
More

    “আমার জন্যে ঈদের আয়োজন করেছিলেন দাদা” সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে স্মৃতিচারণায় ‘অশনি সংকেত’এর বিদেশী নায়িকা

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বাংলাদেশি অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার পপি, দর্শকদের কাছে যিনি ববিতা নামেই পরিচিত আজ বললেন -“বাংলা চলচ্চিত্রের একজন অভিভাবক তিনি, এক বিশাল বটবৃক্ষ, তার তলায় বিরাজ করছে বর্তমান বাংলা সিনেমার দুনিয়া।”

    ১৯৭৩ সালে সত্যজিত্‍ রায়ের অশনি সংকেত ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অনঙ্গ বউ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা। তিনি আজ বিশ্বজনীন সংবাদ মাধ্যমের সাথে এক সাক্ষাত্‍কারে সৌমিত্রর সঙ্গে তাঁর অভিনয়ের স্মৃতিচারণ করেছেন।

    তিনি জানালেন অশনি সংকেত ছবিতে অভিনয় করতে বীরভূমের শান্তি নিকেতনে গিয়েছিলেন ববিতা। তখন তিনি বেশ ছোট। বয়স ছিল ১৫ কী ১৬ বছর। এমন কী শুটিং এ যাওয়ার আগেও সৌমিত্র বাবু (ওনার সম্পর্কে সৌমিত্র দা) সম্পর্কে তিনি খুব একটা জানতেন না। তবে অভিনয়ে যাওয়ার আগে অপুর সংসার ছবিটি দেখে গিয়েছিলেন। আর এই ছবিতে অভিনয়ের আগে তিনি ঢাকাতে মাত্র একটি ছবি করেছিলেন। ফলে সে সময়ে চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা খুব কমই ছিল।

    See the source image
    বাংলাদেশি অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার পপি, দর্শকদের কাছে যিনি ববিতা নামেই পরিচিত

    আর এই ছবির জন্যে ভারতে শুটিং করতে আসাই ছিল ববিতার প্রথম বিদেশে যাওয়া। এবং ভারতে শুটিং করতে যাবেন বলেই তখন বিশেষভাবে তাঁর পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম বিদেশ ভ্রমণের সময়ে খুব ভয় পেয়েছিলেন। এক তো সত্যজিত্‍ রায়ের ছবিতে অভিনয় তার পর এতো বড় একজন অভিনেতা সৌমিত্রদার সঙ্গে কাজ। তিনি পারবেন কী পারবেন না এই দোলাচালে ছিলেন। আর সেখানেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ববিতার প্রথম পরিচয় হয়।

    ববিতা বললেন :”ওনাকে দেখলাম গঙ্গাচরণ চরিত্রের পোশাক পরা- ধুতি পরা। গোল গোল চশমা। আমি দাঁড়িয়ে আছি। ওনার সঙ্গে আমি শট দিলাম। তার পর উনি বললেন, বাহ তুমি তো খুব সুন্দর শট দিয়েছ! খুব সুন্দর!”

    সৌমিত্রর সেই প্রশংসা ববিতার মনে তখন সাহস যুগিয়েছিল। এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে সৌমিত্র তাঁকে আপন করে নিয়েছিলেন। ববিতা জানান শুটিং এর অবসরে, যখন সবকিছুর আয়োজন করা হচ্ছে, সৌমিত্র হয়তো বসে বসে কবিতা আবৃত্তি করছেন। আবার কখনো তিনি শরীর চর্চা করছেন। আর এটা দেখে ববিতার বেশ মজা লেগেছিল

    অশনি সংকেত ছবির একটি দৃশ্যের প্রসঙ্গ তুলে ববিতা বলেন, “একটি দৃশ্য না বললেই নয়। আমি স্নান করে এসে দাঁড়িয়ে আছি। আর সৌমিত্রদা পা ধুচ্ছেন। একটি ট্রলি শট হবে। শটটি এরকম- আমি হেঁটে হেঁটে আসবো। এসে সৌমিত্রদার দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে আমি ওনার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বো। এবং চোখের জল টসটস করে পড়বে।”

    See the source image

    সেসময় সত্যজিত্‍ রায় ববিতাকে বললেন, গ্লিসারিন ব্যবহার না করে তাকে সত্যি সত্যি কেঁদে দেখাতে হবে। মি. রায় তাকে বলেন, “দেখবো তুমি কেমন শট দিতে পারো। কেমন অভিনেত্রী তুমি দেখবো!”

    See the source image

    ববিতা বলতে লাগলেন, “তার পর আমি হেঁটে হেঁটে সৌমিত্রদার বুকের ওপর এসে পড়লাম এবং ঠিক জায়গা মতো চোখের অশ্রুটাও পড়লো। তখন সৌমিত্রদা, মানিকদাসহ সবাই হাততালি দিয়ে উঠলেন। বললেন, বাহ খুব অপূর্ব শট হয়েছে, অপূর্ব শট হয়েছে।” ববিতা জানালেন, শুটিং এর কোন একদিন তিনি কাঁদছিলেন। কারণ সেদিন ছিল ঈদ। আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দের কথা মনে করে তার চোখ ছলছল করছিল।

    “সৌমিত্রদা সেটা খেয়াল করেছেন- কী ববিতা, তোমার চোখ ছল ছল করছে কেন, কী হয়েছে তোমার? আমি বললাম সৌমিত্রদা আজকে তো আমাদের ঈদ, আমি আজকে শুটিং করছি, তাই একটু মনটা খারাপ লাগছে। তখন উনি বললেন যে মোটেও ভেবো না, দেখ আমরা কী করি।” সেদিন সন্ধ্যার সময় ববিতা দেখলেন তার জন্য ঈদের আয়োজন করা হয়েছে।

    ববিতারা যে গেস্ট হাউজের রুমে ছিলেন সেখানে দেখলেন সন্ধ্যার সময় বাজি পটকা ফাটানো হচ্ছে, তারাবাতি জ্বালানো হয়েছে। বাবুর্চিকে বলা হয়েছে সেমাই পাকাতে। সৌমিত্র বাবু ববিতাকে ডেকে বললেন এই দেখ আমরা আজ ঈদ করছি।”

    See the source image

    উল্লেখ্য, অশনি সঙ্কেত ছবিটি বার্লিন চলচ্চিত্র উত্‍সবে গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার পায়। সেখানে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সত্যজিত্‍ রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ববিতাও উপস্থিত ছিলেন।

    অশনি সংকেত ছবির সূত্রেই সৌমিত্র্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিল প্রথম পরিচয়। এর পরে তারা দুজন একসঙ্গে কোন ছবিতে অভিনয় না করলেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল বলে ববিতা জানান।

    তিনি বলেন, “সৌমিত্রদার সঙ্গে আমার যেন একটা আত্মার সম্পর্ক। আমি যখনই গেছি, তিনি হয়তো কলকাতায় কোন ছবির শুটিং করছেন, আমি বললাম যে দাদা আপনাদেরকে দেখার জন্য এলাম।”

    “তিনি ঠাট্টা করে বললেন, কী ববিতা শুনলাম তুমি নাকি বাংলাদেশে প্রচুর ছবি করছো। তুমি নাকি ইদানীং খুব পুরস্কার টুরস্কার পাচ্ছো! অবশ্য আমরা জানতাম। তুমি যখন অশনি সঙ্কেত করেছ তখনই বুঝতে পেরেছি তুমি আসলে একদিন অনেক বড় হবে।”

    আজ তাঁর মৃত্যুর দিনে এই কথা গুলো বলতে গিয়ে ববিতার চোখ ভারী হয়ে এল। তিনি শুধু বললেন তিনি যে এভাবে চলে যাবেন তাঁর একটু খানিও সংকেত পেলে হয়তো আর একবার মুখোমুখি দেখা করতাম।

    তথ্য সুত্র: বিবিসি

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    জানেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ কোনটি ? কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : পার ক্যাপিটা জিডিপি, জনস্বাস্থ্য, আয়ু, সামাজিক ন্যায়, যাপনের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিহীনতা-- এই একক গুলির...

    কেন্দীয় পুলিশে কয়েক হাজার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর। কারণ, কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা...

    আসন্ন IPL-এ কোন দলের অধিনায়ক কে হলেন ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কলকাতা নাইট রাইডার্স সোমবার তাদের দলের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি আইপিএল দলের...

    বাড়ল প্যান ও আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চলতি মাসের মধ্যেই প্যান ও আধার লিংক করিয়ে...

    মোদীর লক্ষ্য ৪০০ পার ! বঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ২৫

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : দিল্লি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। আব কি বার ৪০০ পার। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা...