“ভারতবর্ষে রবি ঘোষের থেকে বড় কমিক টাইমিং আর কোনও অ্যাক্টরের না কোনও দিন হয়েছে, না কোনও দিন হবে। ” বক্তার নাম অমিতাভ বচ্চন।
পঞ্চাশ এর দশকে উৎপল দত্তের পরিচালনায় ‘সাংবাদিক’ নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে, সেখানে একজন বেঁটে মোটা, শ্যামলা, বলিষ্ঠ চেহারার ছেলে সংবাদপত্র বিক্রেতার চরিত্রে মঞ্চের এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে প্রস্থান করে, ওটাই ছিলো তাঁর নাটকের ভূমিকা, মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মুহূর্ত। তাঁর আসল নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার। যারা পোক্ত অভিনেতা তাঁরা ওই টুকু মুহূর্তেই বাজিমাত করেন। মৃণাল সেন ওই নাটকটি দেখতে এসে ৩২ সেকেন্ডের একটা চরিত্রের প্রতি মুগ্ধ হন। কলেজের বন্ধু সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শেই উৎপল দত্তের নাটকের দল লিটল থিয়েটার গ্রুপের সংস্পর্শে আসেন। যিনি রবি ঘোষ হিসেবে পরিচিত হন আপামর বাঙালির কাছে।


নায়কোচিত চেহারা না হলেও সে যুগের বাংলা ছবির সমস্ত পরিচালকের প্রিয় পাত্র ছিলেন রবি। উত্তমকুমার-সৌমিত্রদের যুগেও ভেঙে ফেলেছিলেন স্টিরিওটাইপ তকমা। লিটল থিয়েটার গ্রুপের নিবেদিত উৎপল দত্ত পরিচালিত ‘অঙ্গার’ নাটকে অভিনয় করে ১৯৬০ সালে ‘ উল্টোরথ ‘ পুরষ্কার পান। এই নাটক দেখেই পরিচালক তপন সিংহ ” হাঁসুলিবাঁকের উপকথা “এবং অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় এর ” কিছুক্ষণ ” এর জন্য ডাক পান। তারপরে সত্যজিৎ রায় ” অভিযান ” সিনেমার জন্য রবিবাবু কে ডাকেন। তিনি ‘ চলাচল ‘ নামে একটি নাটকের দল তৈরী করেন। তিনি লিটল থিয়েটার গ্রুপের নিবেদিত দুটি নাটক – ” নবসংস্করণ ” ও “শোধবোধ” পরিচালনা করেন। ১৯৭২ সালে ‘ বিবর ‘ নাটকের মাধ্যমে তিনি নাট্য পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।


রবিবাবু বাংলা চলচ্চিত্রে কমেডির অন্য এক রূপরেখা তৈরি করেন। তিনি শুধু কমেডিয়ান নয় একজন ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে বাংলা ছবির জগতে ছাপ ফেলেন। তিনি ” বাঘিনী ” সিনেমায় ভিলেনের পার্ট করে চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তোলেন। রবিবাবু শুধু চোখ মুখ নয় গোটা দেহ দিয়ে অভিনয় করতেন।
তরুণ বয়সে অভিনয় শুধু নয় বডিবিল্ডার হিসেবে বেশ নামডাক করেন। এটি ছিলো তার কলেজ জীবনের নেশা৷ যদিও পরবর্তী কালে তিনি বডিবিল্ডার হয়ে থেকে গেলে আমরা এরকম অভিনেতা কে হারাতাম। নাটকের জন্য বহুবার তাঁকে বাড়ি ছাড়া থাকতে হয়, কারণ তাঁর বাবার একেবারেই পছন্দ ছিলো না তাঁর অভিনয় জগৎ নিয়ে। এতো গেলো তাঁর নাটক জগৎ নিয়ে চর্চা। সিনেমা জগৎ নিয়ে না বললেও তাঁর বাংলা ছবির প্রতি আজীবন ভাবাবেগ – অভিনয় অনস্বীকার্য। ‘ গুপী গাইন বাঘা বাইন ‘ ছবির জন্য রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পান। আজ তাঁর জন্মদিনে এটুকুই থাক।