দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আগামী সপ্তাহে সিবিআইকে সুশান্ত মামলার ভিসেরা পরীক্ষার চূড়ান্ত মতামত জানাবে AIIMS ফরেনসিক টিম। উল্লেখ্য, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে তিন মাস। মুম্বই পুলিশ এই মামলাকে নিছক আত্মহত্যার ঘটনা বলে উড়িয়ে দিলেও সেই তত্ত্ব মেনে নিতে চায়নি সুশান্তর পরিবার ও ভক্তরা। দীর্ঘ ৬০ দিন এই মামলা নিয়ে বিস্তর নাটকের পর আপতত সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত তিনটি পৃথক মামলার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই, ইডি এবং নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুন সুশান্তের বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয় অভিনেতার দেহ। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই মামলার তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর গত ২০’শে আগস্ট মুম্বইয়ে পৌঁছেছিল সিবিআইয়ের ১৫ সদস্যের একটি দল। এরপর সিবিআইয়ের আধিকারিকরা দফায় দফায় এই মামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জেরা করেছেন। আর এই মামলায় সিবিআইয়ের আধিকারিকদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসাবে দেখা দিয়েছে- সুশান্তের মৃত্যুর মামলা সুইসাইড নাকি হোমিসাইড? এই রহস্য’র জট খুলতেই এইমসের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চেয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। AIIMS এর ফরেনসিক টীম সুশান্তের ভিসেরা টেস্ট করছে।
এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার এইমসের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ সুধীর গুপ্তা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানান, ‘মেডিক্যাল বোর্ড আগামী সপ্তাহে সুশান্ত মামলায় সিবিআইকে তাঁদের চূড়ান্ত মতামতা জানাবে। আমি আশা করছি এই রিপোর্ট ‘নিঃসন্দিগ্ধ’ (conclusive) হবে। রিপোর্ট সম্পর্কে এই মূহুর্তে কিছু শেয়ার করা সম্ভবপর নয়,কারণ বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন’। অর্থাত্ সুধীর গুপ্তা এদিন স্পষ্টতই জানিয়ে দিলেন সুশান্তের ফরেনসিক রিপোর্টে কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকবে না। সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন নাকি খুন করা হয়েছে তাঁকে, তা জানিয়ে দেবেন এইএমসের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রের খবর, আজকেই সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সঙ্গে এইমসের চার সদস্যের বিশেষ দল বৈঠকে বসবে। গতকালই মুম্বই থেকে সিবিআইয়ের একটি টিম রওনা দিয়েছে দিল্লির উদ্দেশ্যে। AIIMS সুত্রে জানা গিয়েছে সুশান্তের ভিসেরা রিপোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। আজ সেটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেবে এইমসের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, সুশান্ত মামলার এক ফরেনসিক চিকিত্সক আগেই জানিয়েছিলেন ১৭ সেপ্টেম্বর সিবিআইয়ের টিমের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০ সেপ্টেম্বরের (আসন্ন রবিবার) মধ্যে চূড়ান্ত ফরেনসিক রিপোর্ট ও মতামত জমা দেওয়া হবে।
সুশান্তের ভিসেরা রিপোর্টে পরীক্ষা করা হয়েছে অ্যাম্ফিটামিনস, ক্যানাবিস, ওপিয়ডস, কোকেন, হিরোইনের মতো নিষিদ্ধ মাদকের উপস্থিতি সুশান্তের শরীরে ছিল কিনা।ভিসেরা হল শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নমুনা যা মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে পরীক্ষা করে থাকেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। শরীরের ভিতর কোনও বিষ কিংবা ড্রাগস ছিল কিনা তাও নিশ্চিত করে এই রিপোর্ট।
উল্লেখ্য, সুশান্তের পোস্টমর্টেমে কোনো মৃত্যুর সময় উল্লেখ ছিল না। যা তদন্তকারীদের মনে আরও সন্দেহ দৃঢ় করেছে। অন্যদিকে সুশান্ত এর প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সাইলানের আত্মহত্যাও ক্রমশ খুনের দিকে মুখ ঘোরাচ্ছে। যে কারণে মাদক ও খুন নিয়ে এই মূহুর্তে বলিউডের প্রথম সারির অনেক অভিনেতাই বেশ চিন্তায় আছে।
এর আগে মুম্বই পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল সুশান্তের ময়না তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টে ‘ঝুলে পড়বার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু’ হয়েছে অভিনেতার বলে জানিয়েছেন কুপার হাসপাতালের পাঁচ চিকিত্সক। তাছাড়া সুশান্তের গলার ‘লিগেচার মার্ক’ নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ ছিল না। সেই সব খতিয়ে দেখতে এইমসের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কুপার হাসপাতালের চিকিত্সকদের।
এছাড়া সিবিআই সুশান্তের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে কমপক্ষে তিনবার ক্রাইম সিনের পুনঃনির্মাণ করেছে। যা সিবিআই এর ইতিহাসে সত্যই বিরল। সিবিআইয়ের পাশাপাশি এইএমসের ফরেনসিক টিমও সুশান্তে কার্টার রোডের অ্যাপার্টমেন্ট এর বিষয়টা খতিয়ে দেখেছে। এখন সিবিআই ও সুশান্ত ভক্তরা এইএমসের চিকিত্সকদের ফরেনসিক রিপোর্ট ও মেডিকো -লিগাল বক্তব্যর দিকে তাকিয়ে।