দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ আজ আমরা সকলে ফর্মুলা-ওয়ান রেস দেখে অভ্যস্ত। সেখানে ছুটছে সব ঝাঁ চকচকে রেসিং কার, সেগুলো চালাচ্ছে বিশ্বের নামকরা সব রেসিং ড্রাইভাররা। কিন্তু ডুকার্টি, ফোর্ড –এই লড়াইয়ের আগের ইতিহাস কি? তা আমরা জানিনা। ১৮৯৫ সালের জুলাই মাসের ১০ তারিখ ‘চিকাগো ট্রিবিউন’-এর পাতা জুড়ে যখন যুদ্ধ আর শিল্প-বিপ্লবের খবর তখন এককোণে একটি খবর সকলের মাথা ঘুড়িয়ে দিল। সেটা হল ‘কার রেস’, আর তার পুরস্কার মূল্য নাকি ৫০০০ ডলার! আজকের দিনে হিসেব করলে প্রায় ১,৫৫,০০০ ডলার। ট্রিবিউন এই খবরটি করলেও এই প্রতিযোগিতা স্পনসর করছিল অন্য একটি নিউজপেপার তার নাম ‘চিকাগো টাইমস্-হেরাল্ড’।
যে সময়ের কথা তখন লোকে ইঞ্জিনে চলা গাড়ি প্রায় দেখেনি। তখন চিকাগো শহরে ৮০০০০ হাজার ঘোড়া আর নিউইয়র্কে প্রায় দুলাখ ঘোড়া, তারাই সব যানবাহন টেনে নিয়ে যায়। এই সময় টাইমস হেরাল্ডের পাবলিশার এইচ.এইচ.কোলসাট করলেন কি তার পত্রিকার বাজার ধরবার জন্য আয়োজন করলেন এক গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু সেই গাড়ি ঘোড়ায় টানবে না, তা চলবে ইঞ্জিনে। তখন চিকাগোর রাস্তায় এইসব গাড়ির চলার কোনো নিয়ম নেই। কোলসাট অনেক বলে কয়ে সেই গাড়ি চালানোর আদেশ পেয়ে গেলেন। ঠিক করলেন যে এই রেস হবে চিকাগো থেকে মিল্কুইক পর্যন্ত, দূরত্ব হল প্রায় ৯২ মাইল মানে ১৪৮ কিলোমিটার।
কিন্তু যে দেশে গ্যাসইঞ্জিনে গাড়িই চলে না সেখানে কে চালাবে এই গাড়ি! প্রথম যার নাম এলো সে তার সারাটা জীবন এমন ইঞ্জিনে চলা গাড়ি তৈরিতে লাগিয়ে দিয়েছে। ফ্রাঙ্ক ডুরিয়া আর তার ভাই চার্লস ডুরিয়া এই দুজনে মিলে যে গাড়িটি তৈরি করেছিল তার নাম দিয়েছিল ‘রোড ওয়াগন’। এছাড়া চিকাগোর রাস্তায় মুলার তার মোটরসাইকেল চালাত, কিন্তু সেইজন্য তাকে পুলিশ অনেকবার গ্রেফতার করেছিল। কোলসাট পুলিশের থেকে আদেশ পেয়ে যাওয়াতে সেই অসুবিধে আর রইল না। মুলার যে গাড়িটি নিয়ে প্রতিযোগিতায় এলো তার নাম হল ‘বেঞ্জ’। তিন নম্বর প্রতিযোগী হিসেবে যোগ দিল পেনিংটন সাহেব। এরই মধ্যে রেসের রুট বদল হয়ে গেছে। এবার রেস হবে চিকাগো থেকে এভানস্টন অবধি, দূরত্ব ৫৪ মাইল।


রেসের দিনক্ষণ যখন ঠিক হল তখন চিকাগোর রাস্তা জুড়ে পাঁচ ইঞ্চি পুরু বরফ, নভেম্বর মাস। শেষ অবধি ছ’খানা গাড়ি নাম লেখাল প্রতিযোগিতায়, যার মধ্যে দুটো হল ডুরিয়ার। তার একটা চালাবে জেরি ও’কনর। রেস যখন শুরু হল আম্পায়ারের শটগানের আওয়াজে আর যখন শেষ হল তখন মাত্র তিনটি গাড়ি। ডুরিয়ার গাড়িতেই শহরবাসী বাজি লাগিয়েছিল কিন্তু যান্ত্রিক গোলযোগে সেই গাড়ি ও’কনরের গাড়ির পেছনের পরে যায়। কিন্তু শেষ হাসি হাসে ডুরিয়াই। বিকেল সাড়ে সাতটায় ফিনিশিং লাইন টাচ করে ডুরিয়ার ‘রোড ওয়াগন’। পরে রেসের আম্পায়রা হিসেব করে দেখে ডুরিয়া আর ও’কনরের গাড়ির গড় গতিবেগ ছিল মাত্র সাত মাইল প্রতি ঘন্টা।


ট্রিবিউন পত্রিকা থেকে জানা যায় যে ডুরিয়ার গাড়ি রেস প্রথমে শেষ করলেও ততক্ষণে তার গাড়িতে অনেক গোলযোগ দেখা দেয়। কিন্তু ততক্ষণে শহরের সমস্ত অধিবাসী স্বাগত জানিয়েছে ডুরিয়াকে। সুদূর ব্রিটেনের ‘দ্য অটোকার’ ম্যাগাজিনে ছাপা হয় এই রোমহর্ষক কাররেসের কাহিনি। এই ছিল ফর্মুলা ওয়ানের শুরুর বৃত্তান্ত।
কিন্তু এইসবের মধ্যে চাঞ্চল্যকর হেডলাইন ছেপে বেরোয় রেসের পরের দিন। রেসের কাহিনির আগে প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা হয় – ঘোড়াদের দিন শেষ