পাশা খেলার কথা আমরা শুনেছি ও পড়েছি মহাভারতে। বলা চলে মহাভারতের যুদ্ধের মূলেই ছিল এই পাশাখেলা। আজ জেনে নেওয়া যাক এই খেলার ঐতিহাসিক উৎপত্তি নিয়ে। বৈদিক যুগের শেষের দিকে উত্তরভারতে ১৬টি আঞ্চলিক রাজ্যের কথা আমরা জানি যেটি ষোড়শ মহাজন পদ নামে পরিচিত ছিল। তখনকার ভারতবর্ষের সীমানা বহুদূর অবধি বিস্তৃত ছিল। সেই বিস্তৃত মহা- ভারতের একটি পদ অর্থাৎ বৃহৎ রাজ্য ছিল গান্ধার। তখনকার গান্ধার দেশ, আজকের আফগানিস্তান। যা মহাভারতে অতি পরিচিত একটি রাজ্যের নাম। তো কিভাবে এই পাশা খেলার সূএপাত তা মহাভারত না ঘাটলে আমরা জানতেও পারতাম না।


গান্ধারের রাজা ছিলেন সুবল। তাঁর ১০০জন সন্তান ছিলেন। ৯৯ জন পুত্র এবং একটি মাত্র রূপসী কন্যা গান্ধারী। যে সবার বড় আর পুত্রদের মধ্যে সবথেকে ছোট ও কূটকৌশলী এবং মেধাবী ছিলেন শকুনি। অন্যদিকে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের জন্য কন্যা হিসেবে ভীষ্ম গান্ধারীকে র্নিবাচন করেন। সুবল এবং শকুনি, অন্ধ রাজার সঙ্গে গান্ধারীর বিবাহ দিতে অস্বীকার করলে, গান্ধারীকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে সুবল গান্ধারীর কোষ্ঠীবিচার করে জানতে পেরেছিল তার প্রথম স্বামীর তারাতারি মৃত্যু হবে।তাই তিনি এক ছাগলের সাথে তার বিয়ে দেন।জোর করে মেয়ের বিয়ে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের সঙ্গে হয়েছে শুনে তিনি ছাগলটিকে হত্যার নির্দেশ দেন। এই খবর হস্তিনাপুরে পৌঁছায় যে বিধবার সঙ্গে ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ হয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়েক দশক পেরিয়ে আজও উজ্জ্বল উপস্থিতি নটরাজ উদয় শঙ্করের
এই খবরে হস্তিনাপুরের সেনাদের কাছে নির্দেশ আসে, রাজা সুবল এবং তাঁর পুত্রদের বন্দি করে অনাহারে রেখে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হোক। তারা ১০০জন বন্দি ছিলেন কিন্তু খাবার দেওয়া হত ১জনের। বুদ্ধি করে রাজা সুবল ঐ খাবার খাওয়াতো তার কনিষ্ঠ পুত্র শকুনি কে। যাতে সে বেঁচে থেকে প্রতিশোধ নিতে পারে। কথিত আছে মৃত্যুর পর পিতার পায়ের গোড়ালির হার থেকে তৈরী করেছিলেন এই পাশার গুটি। তাই সে গুটি তার কথা শুনত। পাশা খেলায় দারুন দক্ষতা অর্জন করেছিলেন এবং দুর্যোধনকে হারিয়ে প্রতিশোধের খেলায় মত্ত হয়েছিলেন। সেই এই সর্বনাশি পাশা এত বিখ্যাত।
আরও পড়ুন: সিঁদুর পরার ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক তত্ব- প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল
বর্তমানে এ খেলার আর প্রচলন নেই যেটা চালু আছে সেটা দাবা। দুটি খেলাতেই বুদ্ধি আর সৌভাগের প্রয়োজন হয়। পাশা খেলায় একটা কথা প্রচলন আছে সেটা হল পোয়া বারো। পাশার তিনটি গুটি একসাথে চাল দিলে যদি সম্বলিত সমষ্টি হয় ৯ তাহলে খেলা শুরু হয়। তবে যদি দুটা গুটিতে ৬ আর অন্যটিতে ১ হয় সব মিলিয়ে হয় ১৩। এটি সবচেয়ে দামি চাল, সবচেয়ে দুর্লভও বটে। পাশা খেলায় ১ কে বলা হয় পোয়া, আর বাকি দুটা ৬ মিলে হয় ১২ সব মিলিয়ে সেটা হয়, পোয়া বারো। আগেই তো বলেছি এটা খুবই দামই চাল এবং পরম সৌভাগ্যের চাল।লোক মুখে আজও পোয়া বারে কথা টা প্রচলিত আছে।