27 C
Kolkata
Saturday, April 1, 2023
More

    খনা’র জীবন কাহিনীর সাথে ‘টিকটিকি’র নাম জড়ালো কেনো! জেনে নিন সে ইতিহাস- প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল

    মহেঞ্জোদারো-হরপ্পা ঋকবেদ হতে শুরু করে বিস্ময়কর ভারতের ইতিহাসে অজস্র মানব কীর্তির কথা আমরা জেনে আসছি। বুদ্ধ থেকে মহাবীর বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক নানা কালে নানা মুনি, ঋষি, জ্ঞানী,ব্যক্তিত্বের কথা আমরা জেনে আসছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে দুঃখ, দৈন্য,নিরর্থক ধ্বংসের এবং লজ্জার কোনো কাহিনী নেই সেই ইতিবৃত্তে। তবে এটাও ঠিক যে সব কাহিনীর সঠিক তথ্য প্রমাণ মেলেনি। কিছু কিছু কাহিনী লোক মুখে প্রচলিত। প্রাচীন বাংলার এমনই এক বিচক্ষণ ও কিংবদন্তি মেধাবী নারী ছিলেন খনা।

    আধুনিক সোশাল মিডিয়ার যুগে দাঁড়িয়েও আমরা অনেকেই প্রাচীন সনাতন ধর্মাবলম্বী কাহিনী জানতে ও পড়তে আগ্রহী। খনা নাম শুনলেই দুটি কথা সহজেই মাথায় আসে তা হল খনার বচন আর খনার জিহ্বা কাটার বেদনা। নারীরা যুগ যুগ ধরেই নিপিড়ীত লাঞ্চিত হয়ে এসেছে আজও হচ্ছে। প্রাচীন কালে বহু নারীর বহু প্রতিভাই জ্বলাঞ্জলি দিতে হয়েছে পুরুষ শাসিত সমাজের পায়ে।খনার জ্ঞানের পরিধি এতটাই বিস্তার লাভ করেছিল যে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার জিব কেটে দেওয়ার হয়েছিল।

    আরো পড়ুনঃ শারদীয়া দুর্গাপূজা যে কারণে অকালবোধন – জয়ন্ত কুমার সরকার

    তার জন্ম সময় ও জন্ম স্থান নিয়ে দ্বিধা আছে। সূত্র মারফত জানা গেছে তিনি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের দেওলী গ্রামে জন্মেছিলেন। তাঁর পিতার নাম অটলাচার্য একথা তাঁর বচন থেকে জানা যায়।এটা ছিল রাজা ধর্মকেতুর আমল।তবে আর এক সূএ মারফত জানা য়ায় তিনি সিংহলের রাজকুমারী ছিলেন। কিভাবে তিনি সিংহলে এলেন এ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। শোনা যায় তাঁর পিতা অটনাচার্য বানিজ্য সূত্রে সিংহল অর্থৎ শ্রীলঙ্কা গিয়েছিল। সেখানে প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে য়াওয়ার কারনে সিংহল রাজের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ বাধে। সেই যুদ্ধে অটনাচার্য মারা যায় এবং তাঁর কন্যা খনা সিংহল রাজের কাছে নানুষ হয়। জ্যোতিষবিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করে খনা তথা লীলাবতী। শুধু জ্যোতিষবিদ্যাই নয় কৃষি ভূবিদ্যা শাস্ত্র চর্চা গননা ইত্যাদি নানা বিষয়ে আগাদ জ্ঞান ছিল তাঁর। তাঁর বচন গুলি অক্ষরে অক্ষরে ফলে যেতে মানুষের জীবনে। তাঁর কত গুলি বহু প্রচলিত বচন যা কৃষক সহ সকল মানুষের খুব উপকারে লাগতো।

    খনার বহুপ্রচলিত বচনঃ
    (ক) যদি হয় সুজন
    এক পিড়িতে ন’জন।

    (খ) ইদুরে গর্ত খুঁড়ে
    সাপ এসে দখল করে।

    (গ) চোরের মায়ের বড়গলা
    লাফ দিয়ে খায় কাঁচকলা।

    (ঘ)নদীর জল ঘোলা ভালো
    জাতের মেয়ে কালো ভালো।

    ইত্যাদি খনার বহুবচন লোকমুখে আজও প্রচলিত যা লিখে শেষ করা যাবেনা।

    চাষবাস সম্মন্ধে খনার জ্ঞানঃ
    চাষবাস সম্মন্ধে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। তা তাঁর বচন থেকে স্পষ্ট।
    ১।শীষ দেখে বিশ দিন
    কাটতে মাড়াতে দশ দিন।

    অর্থাৎ ধানের শীষ বের হওয়ার ২০ দিনের মধ্যে ধান কেটে নেওয়া উচিত ও কাটাই মারাই করতে ১০ দিন লাগবে।
    ২)শুনরে বাপু চাষার বেটা
    মাটির মধ্যে বেলে যেটা
    তাতে যদি বুনিস পটল
    তাতে তোর আশা সফল।

    অর্থাৎ যদি বেলে মাটিতে পটল চাষ করা তাহলে পটলের অধিক ফলন হবে।
    ৩।ষোলো চাষে মূলা
    তার অর্ধেক তূলা
    তার অর্ধেক ধান
    বিনা চাষে পান।

    অর্থাৎ মূলার ক্ষেত্রে ষোলো বার তূলার ক্ষেত্রে আটবার ধানের ক্ষেত্রে চার বার হাল চালনা করা দরকার। আর পান চাষ করতে হাল লাগে না।
    এই ভাবে তিনি জনপ্রিয় হতে থাকেন।

    খনার বিবাহ কালঃ
    খনার জীবনকাহিনী বলবো অথচ মিহিরের নাম আসবে না তা কখনো হয়। অনুমান করা হয় খনার কাল ৮০০ থেকে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দ। যদি বরাহ (৫০৫-৫৮৭) খনার শশুর হন তবে খনার আরও কয়েক শতক আগে জন্ম হওয়া উচিৎ। কিন্তু এদিকে খনার বচন গুলির ভাষা, আঙ্গিক ও বাক্য গঠনের রীতি দেখে ভাষা বিশেষজ্ঞদের মতামত বচনগুলির প্রাচীনত্ব চারশত বছরের বেশি হবে না। এটা ধরে নিলে খনার জীবনকাল ৮০০-১১০০ এর থেকে আরও কয়েক শতক পরে হওয়ার কথা।

    তবে এটা সম্ভব যে বচন গুলির ভাষা কালের নিয়মে পরিবর্তিত ও পুনর্লিখিত হয়েছে কারন সেগুলি শ্রুতি রূপেই প্রচলিত ছিল। বরাহ ছিলেন রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভার রাজ জ্যোতিষি নবরত্নের এক রত্ন।তিনি গননা করে জানতে পারেন তার পুত্র ১ বছর বয়সে মারা যাবে। তাই পুত্র জন্মের পর তার স্ত্রী যখন মারা যায় তিনি তাঁর পুত্র মিহির কে তামার পাত্রে বিদ্যাবতী নদীতে দৈববশে প্রান রক্ষার জন্য ভাসিয়ে দেন। পুত্র ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌঁচ্ছায় এবং সিংহল রাজ তাকে লালন পালন করেন। লীলাবতী ও মিহির এক সাথে বড় হতে থাকে। দুজনেই জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। পরবর্তী কালে দুজনের বিবাহ সম্পন্ন হয়। নিজের পিতার খোঁজে পরে মিহির ও খনা বরাহের কাছে ফিরে আসে।

    খনার থেকে টিকটিকির সত্য বলার ক্ষমতা অর্জনঃ
    বরাহ বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার পঞ্চরত্নের এক রত্ন ছিলেন। সেই সভায় খনারও ডাক পরে এবং দশমরত্নে ভূষিত হয় খনা।এদিকে একদিন নক্ষত্র গননায় মিহির ও বরাহ জটিল সমস্যা পরে তার সহজ সমাধান করে দেয় খনা। ফলত নিজের পুত্রবধূর কাছে হারতে হয়েছিল বরাহকে সেই লজ্জা সহ্য করতে না পেরে ও পুত্রবধূর নাম যশ খ্যাতিতে ঈর্ষান্নিত হয়ে তিনি মিহির কে আদেশ দেন খনার জিভ কেটে দেবার। মিহির পিতার আদেশ পালন করে ও খনার জিহ্বা কেটে নেয়। অতিরিক্ত রক্তপাতের জন্য তাঁর মৃত্যু হয়। পরে থাকা সেই জিহ্বা টিকটিকি তে খেয়ে ফেলেছিল। তাই কথিত আছে খনার সত্য বলার ক্ষমতা টিকটিকির বংশধের মধ্যে ছরিয়ে পরেছিল। তাই আজও কোনো কথা বলার পর যদি টিকটিকি ডাকে ধরে নেওয়া হয় কথা টা সত্য। তাঁর জিভ ছিলনা বলে তিনি পরবর্তী কালে খনা নামে পরিচিত হয়েছিলন। তবে তিনি যেই হন তার বচন লোক মুখে আজও প্রচলিত।

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    জানেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ কোনটি ? কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : পার ক্যাপিটা জিডিপি, জনস্বাস্থ্য, আয়ু, সামাজিক ন্যায়, যাপনের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিহীনতা-- এই একক গুলির...

    কেন্দীয় পুলিশে কয়েক হাজার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর। কারণ, কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা...

    আসন্ন IPL-এ কোন দলের অধিনায়ক কে হলেন ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কলকাতা নাইট রাইডার্স সোমবার তাদের দলের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি আইপিএল দলের...

    বাড়ল প্যান ও আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চলতি মাসের মধ্যেই প্যান ও আধার লিংক করিয়ে...

    মোদীর লক্ষ্য ৪০০ পার ! বঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ২৫

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : দিল্লি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। আব কি বার ৪০০ পার। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা...