দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার কয়েক বছর পর১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর বিধিবদ্ধভাবে চালু হয় ভারতীয় সংবিধান।দেশের নেতারা ভারতের জনগণকে সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে এবং সকল নাগরিক যাতে সঠিক সুযোগ-সুবিধে ন্যায়বিচার পায় তারই জন্যে সংবিধান তৈরি করেছিলেন কিন্তু এই সংবিধান তৈরির ইতিহাসটা অনেকের কাছেই অবগত নয়।
সংবিধানের ক্যালিওগ্রাফির কাজ:
সংবিধান তৈরির ইতিহাসে আরেকজনের নাম না বললে চলে না তিনি ছিলেন দিল্লির বাসিন্দা ব্রজবিহারী নারায়ণ রায়ের পুত্র প্রেমবিহারী নারায়ণ। তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ ক্যালিগ্রাফার। ইংরাজি,রোমান ইত্যাদি ভাষায় তিনি দক্ষ ছিলেন। অতিব সুন্দর হাতের লেখার জন্য গোটা সংবিধানটি নিজের হাতে লেখার দায়িত্ব দেওয়া হল তাঁর উপর।


নন্দলাল বসুর পরিচয়ঃ
নন্দলাল বসুর জন্ম ৩রা ফেব্রুয়ারি ১৮৮২-মৃত্যু ১৬ই এপ্রিল ১৯৬৬। নন্দলাল বসু কএজন কিংবদন্তি চিত্রকার ছিলেন। তাঁর শিক্ষা গুরু ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি তৎকালীন শান্তিনিকেতনের প্রখ্যাত শিল্পী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের বইয়ে (অলঙ্করণ) আঁকা গুলোও তাঁর হাতে সৃষ্টি। ১৯৫৪ সালে তিনি পদ্মভূষণ পুরষ্কার পান।
আরো পড়ুনঃ মালদার পাঁচশো বছরের ঐতিহ্যবাহী রামকেলির মেলা’র নেপথ্য ইতিহাস
সংবিধানে চিত্র অঙ্কনঃ
ছবি নকশা ও চিত্র কলার কাজ ঠিক যেমন মগল পুথি কংবা পাল ও জৈন পুঁথির চিত্রকলায় থাকতো সেসব ভাবনার দায়িত্ব নিলেন তৎকালীন প্রাধানমন্ত্রী জওরলাল নেহরু। তিনি নন্দলাল বসুকে দায়িত্ব দিলেন এই সংবিধানের পাতায় পাতায় নিজের চিত্র ফুটিয়ে তোলার।তিনি ও শান্তিনিকেতনে তাঁর অনান্য সহকর্মীরা মিলে এমন ভাবে সংবিধানকে চিত্রায়িত করলেন যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।সংবিধানের মূল পান্ডুলিপির অলঙ্ককরনের জন্য তিনি বাঙালীর গর্ব। এখানে যেমন সম্রাট আকবরের বিবিধ কাজ কর্মের ছবি তেমনি গান্ধিজির নোয়াখালির দাঙ্গা কবলিত এলাকা ভ্রমনের ছবিও আছে।আরো যে সব ছবি আছে সেগুলি হল মহেঞ্জোদারের সিল, বৈদিক আশ্রমের দৃশ্য, রামায়ণের ও মহাভারতের দৃশ্য, বুদ্ধও মহাবীর, বৌদ্ধধর্মের প্রসার ও সম্রাট অশোকের ভূমিকা, গুপ্ত যুগের শিল্পধারার বিবিধ পর্যায়, বিক্রমাদিত্যে রাজসভা, ওড়িশার ভাস্কর্য শিল্প, নালন্দা, নটরাজের নৃত্য, মহাবলীপুরম, আকবর ও মুঘল স্থাপত্য, শিবাজি ও গুরু গোবিন্দ সিং, টিপু সুলতান ও ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, নেতাজি ইত্যাদির ছবি।


মরুভূমির দৃশ্য থেকে সমুদ্রের দৃশ্য পাহার থেকে নদী সবই স্থান পেয়েছে তাঁর আঁকায়।ধর্ম,ঐক্যবোধ,জাতীয়তাবাদ,সমাজ,দেশগঠন,দেশপ্রেম, জাতীর স্বপ্ন সব কিছু তাঁর দৌলতে স্থান পেয়েছে সংবিধানের পাতায়। সবশেষে বলেরাখি দেরাদুনের সার্ভে ইন্ডয়ার তত্বাবধানে পুরো সংবিধানটি ফটোলিথোগ্রাফ পদ্ধতিতে ছাপা হয়েছে।।