ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ স্বদেশি আন্দোলনের সময় থেকে দেশনায়করা বুঝেছিলেন দেশের কুটির শিল্পকে যদি বা্চাঁনো না যায় তবে ভারতের প্রাণপ্রবাহ রুদ্ধ হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে অনেক অসাধারন শিল্পকীর্তির স্রষ্টারা। বড় বড় শিল্পের সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে কুটির শিল্পকে হয়ে উঠতে হবে আরো বেশি সুষমামন্ডিত আরো বেশি ভারতীয় ঐতিহ্যমণ্ডিত। এমনি এক কুটিরশিল্পে সমৃদ্ধ বাঁকুড়ার বিষ্ণুপর। এখানের মন্দির গুলিতে যেমন অসাধারণ শিল্প নিদর্শন পাওয়া যায় তেমনি যেকোনো মেলা পার্বণেও শিল্পী তাঁর শীল্পের পসরা নিয়ে হাজির হন। এটি মুখ্যত মৃৎশিল্পের জন্যই বিখ্যাত।
এরা মাটি দিয়ে নানা রকম পুতুল বানিয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হিঙ্গল পুতুল। হিঙ্গল বা হিম পুতুলের খ্যাতি ছড়িয়ে বহু জায়গাতে। হিঙ্গুল বা হিম এক ধরনের খনিজ পদার্থ। এক সময়ে বিষ্ণুপুরের পুতুলগুলো রাঙিয়ে তুলতে লালচে রঙের এই পদার্থ ব্যবহৃত হত। এই রং দিলে বেশ চকচকে হত পুতুলগুলো। তাই পুতুলগুলোর এমন নাম।


তবে, এখন আর এই খনিজ রং ব্যবহার করা হয় না অন্য রং দিয়ে এদের রাঙানো হয়। কাঁচা মাটিকে পুতুল রুপে বানিয়ে তাকে রোদে শুকনো করা হয়। তাতে পরে ভেষজ রং দেওয়া হয়। এই পুতুলের বৈশিষ্ট্য হল এদে হাতের সবকটি আঙুল সমান। পুতুলগুলি মাত্র ৪-৫ ইঞ্চি র মত লম্বা হয়। ষষ্ঠীপুজো ও জিতাষ্ঠমীর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে হিঙ্গুল পুতুল কাজে লাগে।
কেউ কেউ মানত করার জন্য হিঙ্গুল পুতুল ব্যবহার করে থাকেন। এদের পরনে শাড়ি নয়, আছে ফ্রক, মাথায় টুপি যা ইউরোপীয় ভাবনার বার্তা বহন করে। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ভারতে বহু ইউরোপীয় বনিকেরা বানিজ্য করতে এসেছিল,ভারতবর্ষে, হয়তো এই শিল্পকলায় তাদের পোশাকের ছাপ রয়ে গেছে।
বর্তমানে বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাস যারা বানায় সেই পরিবারই হিঙ্গুল পুতুল তৈরি করে থাকে। পরাধীন ভারতবর্ষের আমল থেকে তৈরী হওয়া এই শিল্পের স্বর্ণময় দিন আবারও ফিরে আসুক।