দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: জানেন কি সম্পূর্ণ মহিলা চালিত গ্রামে শুধুমাত্র মহিলারাই থাকেন! কোনো পুরুষদের সেখানে যাওয়া নিষেধ।এমন কি শিশু বালকদের ১৮বছর হলেই ছাড়তে হয় সেই গ্রাম! জেনে কি সেই গ্রাম! কেনিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম সাম্বুরু। এই গ্রামে সাম্বুরু আদিবাসীদের বাস। এ ছাড়াও তুর্কানা এবং অন্যান্য আদিবাসীও থাকেন কয়েক জন।
বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের নানা আদিবাসী মহিলাদের মতো সাম্বুরু মহিলারাও সমাজের পিছিয়ে পড়া সারিতে ছিলেন। তাঁদের গণ্য করা হত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে। সাম্বুরুর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের উপর প্রায় নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতেন পুরুষেরা।কিছু সামাজিক কুপ্রথার জন্য তাঁদের অকথ্য নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হত। জোর করে নাবালিকাদের বিয়েও দিয়ে দেওয়া হত। এমনকি একাধিক পুরুষের ধর্ষণের শিকারও হতেন তাঁরা। অথচ তাঁদের কথা তখন শোনার জন্য কেউ ছিলেন না।
এমনকি স্বামীর ইচ্ছা হলে স্ত্রীকে হত্যাও করতে পারতেন। মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ ছিলেন না। বরং স্বামীকে সমর্থন করার জন্য আরও অনেক পুরুষ থাকতেন। মহিলাদের জন্য এ রকমই নিষ্ঠুর ছিল একসময়ের সাম্বুরু।
এই নির্যাতন সহ্য করতে করতে এক সময় অধৈর্য হয়ে উঠলেন সাম্বুরু মহিলারা। গড়ে উঠল উমোজা—যেটা হল মহিলাদের নিজস্ব গ্রাম। যেখানে পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হল। জানা যায়,১৯৯০ সালে রেবেকা ললোসলি নামে মহিলা নির্যাতিত এবং বিতাড়িত আরও কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে এই পুরুষমুক্ত গ্রাম গড়ে তুলেছিলেন।রেবেকা নিজেও একজন নির্যাতিতা ছিলেন। তিনি আশ্রয়হীন ১৫ জন মহিলাকে নিয়েই নিজেদের জন্য আশ্রয় গড়ে তোলেন।
এখন সাম্বুরুর সমস্ত নির্যাতিতারা এই উমোজাতেই আশ্রয় নেন। এই গ্রামে শুধুমাত্র মহিলাদের কথাই চলে। মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচেন তাঁরা।বহু অন্তঃসত্ত্বাও এখানে ঠাঁই নেন। যদি তাঁরা পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, তা হলে সন্তানের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত সেই সন্তান এই গ্রামে থাকার অনুমতি পায়। ১৮ বছর হয়ে গেলে তাঁকে উমোজা ছেড়ে চলে যেতে হয়।
এরপরে ধীরে ধীরে তাদের কথা দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের স্থান হয়ে উঠল উমোজা। পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠার ফলে তাঁদের উপার্জনের রাস্তাও খুলে যায়। সমস্ত দিক থেকেই স্বনির্ভর হয়ে ওঠেন সেখানকার মহিলারা। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে রাষ্ট্রপুঞ্জ, কেনিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রক। আইনত ওই উমোজার জমি এখন মহিলাদের দখলে। অর্থ দিয়ে সাহায্যের পাশাপাশি উপার্জনের বিভিন্ন উপায় জানাতে মহিলাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় সেখানে।
পর্যটনের পাশাপাশি কুটির শিল্প এবং চাষবাস করেও তারা উপার্জন করেন।নিজেদের জমি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছেন তাঁরা। তার ভিতরে মাটি, গোবর আর ঘাস দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে থাকেন। মহিলাদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আরও বহু সামাজিক কাজে নিযুক্ত তাঁরা। ২০১৫ সালে লোকগণনা হয়েছিল এখানে। সেই অনুযায়ী, তখন ৪৭ জন মহিলা এবং শ’দুয়েক শিশু ছিল উমোজায়।
সাম্বুরুর শিশুরা যেখানে শৈশব কাটায় গবাদিপশু বিচরণ করিয়ে। উমোজার শিশুরা পড়াশোনা শেখে। উমোজাতে তাদের জন্য স্কুলও রয়েছে একটা।২০১৫ সালে কেনিয়ায় এসেছিলেন বারাক ওবামা। উমোজার এই গ্রামে ঘুরে আপ্লুত হয়েছিলেন, এবংতিনি বলেছিলেন, “বিশ্ব জুড়েই মহিলাদের দমিয়ে রাখার একটি রীতি রয়েছে। মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করা হয়। এ সমস্ত কু-রীতিনীতি বদলানোর প্রয়োজন। অঙ্গহানি, বালিকা বিবাহের মতো প্রথাগুলো অনেক পুরনো। এই শতাব্দীতে এগুলোর কোনও জায়গা থাকা উচিত নয়।”