দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি মালদা। আর মালদার একটি বিখ্যাত মেলার সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলেই অবগত। মালদা পর্যটন কেন্দ্রের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই মেলার নাম ‘রামকেলির মেলা’। মালদার পাঁচশো বছর পুরনো এই মেলা এক অন্যতম পর্যটন উত্সবগুলির মধ্যে একটি। মূলত প্রাচীন বাংলার রাজধানী ‘গৌড়’ হিসেবে এই সম্পূর্ণ অঞ্চলটি ঐতিহাসিক সৌধ এবং স্থাপত্যের জন্য ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে বিশেষ আকর্ষণের হলেও, জুন মাসের এই রামকেলির মেলা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক বিশেষ তীর্থকেন্দ্র।
বলা হয়, বৈষ্ণব মহলে এই মেলা “গুপ্ত বৃন্দাবন” নামে পরিচিত। মেলা সাধারনত সাত দিন থাকে। আর সাত দিনের এই মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু সাধারণ পূণ্যার্থী ও সাধু-সন্ন্যাসীরা আসেন। ভ্রমণপিপাসু মানুষও বাদ যান না এই মেলার রসাস্বাদন করতে। এই রামকেলির মেলার এক বিশেষত্ব আছে। আর তা হলো ‘সংকীর্তন’। যা এই মেলার সাংস্কৃতিক আকর্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম এবং অভিনব।
তবে এই মেলার সূত্রপাত কীভাবে?
আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগেকার কথা। সম্ভবত সালটা ছিল ১৫১৫ খ্রীষ্টাব্দ। এই সময় শ্রীচৈতন্যদেব গৌড়ের রামকেলি গ্রামে পদার্পণ করলে, তখনকার বাংলার সুলতান হুসেন শাহ তাঁর দুই রাজকর্মচারী সাকর মল্লিক এবং দবির খাসকে এই নতুন আগত বৈষ্ণব ধর্মপ্রচারকের সেবাযত্নের জন্য পাঠান। তাঁরা আসলে, শ্রীচৈতন্যদেবের ভক্তিবাদের প্রভাবে এসে এই দুই রাজকর্মচারী জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তি তিথিতে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হন এবং এরপরবর্তীকালে তাঁরা রূপ এবং সনাতন গোস্বামী নামে পরিচিতি লাভ করেন।


এই উপলক্ষেই জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তির দিনটিতে রামকেলির মেলার সূত্রপাত ঘটে। তবে এই মেলার সূত্রপাতের আলোচনা শুরু করলে একদিকে যেমন লোককথা এবং অন্যদিকে তেমন ইতিহাস মিলে মিশে এক হয়ে যায়। আর এই সূএ ধরেই এখানে ভক্তদের আগমন ঘটে। বহু ভক্ত একবার এই মেলায় এসে নিজেকে ধন্য মনে করেন।
ভক্তদের সমাগম স্বরূপ এই তীর্থকেন্দ্রটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে গত বছর এই জেলার প্রশাসনমন্ডলীর উদ্যোগে স্থাপিত হয় শ্রীচৈতন্যদেব, রূপ এবং সনাতন গোস্বামীর অনন্য মূর্তি। শুধুমাত্র এই একটি কারন নয়, অন্য যে কারণে এই মেলাটির বিশেষ খ্যাতি তা হল, ভারতবর্ষের কেবল এই স্থানেই এই বিশেষ দিনেই পার্শ্ববর্তী গৌড়েশ্বরী থানে মহিলা পূণ্যার্থীরা মাতৃপিণ্ডদান করতে পারেন।


এই মেলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আরোও যা জানা যায় তা হলো, পূর্বের কিছু বছর এখানে নানান অদ্ভুত উপায়ে বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের বিবাহের প্রচলন ছিল। কাপড়ের আড়ালে থেকে ক্ষুদ্র ফুটো বের করা, বৈষ্ণবীদের অনামিকা আঙুলটি দেখেই বৈষ্ণবদের বিবাহের রীতির কথা বলেন অনেকে। এই মেলায় কণ্ঠী বদলের মাধ্যমে বিবাহের রীতি এখনও প্রচলিত রয়েছে বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের মধ্যে।
তবে ইতিহাসে কথিত আছে যে, মহামারীর কারণে রাজধানী গৌড়ের পতন হলে (১৬০০ থেকে ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দ অবধি) অর্থাৎ প্রায় দুশো বছর এই রামকেলির মেলা বন্ধ থাকে। তবে এবছরেও করোনা মহামারী আবহ স্বরূপ এই মেলা অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি।