দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: “উত্তর অতলান্তিকে বৃষ্টি হলে/ তোমার-এখানে কেন রৌদ্র হবে /জানি তুমি ডোরাকাটা স্বাতন্ত্র কায়েম রাখবে বলে/ থেকে-থেকে কীরকম অচেনাসমান হয়ে যাও/ এমন কি কেঁপে ওঠো তোমার ডানায় যদি হাত রাখি”
বা
“পানের তলায় তোমার মুখ ঢাকা/বাইরে আমি দাঁড়িয়ে/ পানে ঢাকা তোমার মৌন মুখ/ মুখর আমি বাইরে বাইরে ঘুরছি” এই শব্দ বন্ধ গুলি পঞ্চাশের দশকে রবীন্দ্র অনুসারী কাব্যরুচি থেকে বাংলা কবিতাকে এক পৃথক খাতে বইয়ে দিয়েছিলো। বাঙালি আবার কবিতামুখী হয়ে ওঠে। আর এই নতুন ধরার পথিকৃত ছিলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। কবি শঙ্খ ঘোষের পরমবন্ধু কবি অলোকরঞ্জন জীবদ্দশাতে লিখছেন ২০ টি কাব্যগ্রন্থ।
গতকাল রাত ন’টার সময়ে শূন্য হল বাংলা কবিতার বাহুডোর। চিরঘুমের দেশে পারি দিয়েছেন কিংবদন্তি কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। ৮৭ বছর বয়সী এই কবির জার্মানিতে নিজস্ব বাসভবনে মৃত্যু হয়। বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন কবি। এই মৃত্যুসংবাদ জানান তাঁর স্ত্রী এলিজাবেথ ।
১৯৩৩ সালের ৬ অক্টোবর অলোকরঞ্জনের জন্ম। শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা সেরে অলোকরঞ্জন উচ্চশিক্ষার জন্য পা রাখেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। স্নাতকোত্তর শিক্ষা সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।
এরপর হামবোল্ড ফাউন্ডেশান ফেলোশিপ নিয়ে অলোকরঞ্জন পাড়ি দেন জার্মানিতে। তিনি বাংলা ভাষার সঙ্গে জার্মান সাহিত্যের মেলবন্ধনের রূপকার। দুভাষাতেই অনুবাদ করেছেন বহু গ্রন্থ। এই বিশেষ কাজের স্বীকৃতি দিতে জার্মান সরকার তাঁকে ‘গ্যেটে’ পুরস্কারে ভূষিত করেন। ১৯৯২ সালে পান সাহিত্য অ্যাকা়ডেমি পুরস্কার। ‘মরমী কারাত’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁকে এই অনন্য সম্মান এনে দেয়। তিনি প্রবীন হলেও তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তাঁর এক অদ্ভুত বন্ধুতা ছিল। তবে আজীবন সকলের বন্ধু, সদালাপী মানুষটি চলে গেলেন নি:শব্দে।