” যেতে পারি
যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
একাকী যাবো না অসময়ে। “
ছোটো বেলা থেকে দারিদ্রতার জন্য স্ট্রাগল করে পরবর্তী কালে সাধারণ মানুষের যাপনে অনন্য ছাপ রেখে যান অনেকেই। শিল্প কলার মাধ্যমে অজস্র মানুষ এরকম তার উদাহরণ আর এই বাংলার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলো কবি শক্তি চাটুজ্যে। আজ যে ২৫ শে নভেম্বর, শক্তি বাবুর জন্মদিবস, তাই তাঁকে নিয়ে কিছু কথা না বললে অন্যায় হবে।
বাংলা সাহিত্য ‘শক্তির’ সৃষ্ট কবিতা গুলি যেন বাঙালির সম্পদ। আজকের দিনেই ১৯৩৩ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বহড়ু গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে তিনি বাগবাজারে চলে আসেন। তিনি ১৯৪৯ সালে ‘প্রগতি’ নামে একটি হাতে লেখা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন এবং পরে সেটি ‘ বহ্নিশিখা ‘ নামে মুদ্রিত হিসেবে প্রকাশ পায়। ১৯৫১ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সদস্য হন এবং ১৯৫৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বাংলা সাহিত্যে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হন, কিন্তু তাঁকে দারিদ্র্যতার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়তে হয়। তারপর তিনি বেশ কিছু দিন উল্টোডাঙার বস্তিতে মা ও ভাই কে নিয়ে থাকতেন।


সাহিত্যের চাঁদের হাট। ছবি: আনন্দবাজার পত্রিকা আর্কাইভ
১৯৫৬ সালে বুদ্ধদেব বসুর পত্রিকা তে শক্তি বাবুর যম কবিতাটি প্রকাশিত হয়। বুদ্ধদেব বসু, উনি শক্তি বাবুকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে Comparative Literature এ ভর্তির জন্য আমন্ত্রণ করেন এবং তিনি ভর্তিও হন কিন্তু তিনি এখানেও পড়াশোনা শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি। জীবিকার জন্যেও উনি নানান কিছুর চেষ্টা করেছেন। তিনি কিছু দিন ভবানীপুরে একটি টিউটোরিয়ালে শিক্ষকতা করেন, আবার তিনি কিছু দিন সাক্সবি ফার্মা লিমিটেডে স্টোর সহকারীর চাকিরও করেছেন এবং পরবর্তী কালে ব্যবসা করার চেষ্টা করলেও তাতেও তিনি অসফল হন।
ষাটের দশকের শুরুতে বাংলা সাহিত্য জগতে স্থিতাবস্থা ভাঙার আওয়াজ তুলে, ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে, শিল্প ও সাহিত্যের যে একমাত্র আন্দোলন হয়েছে, তার নাম হাংরি আন্দোলন। আর্তি বা কাতরতা শব্দগুলো মতাদশর্টিকে সঠিক তুলে ধরতে পারবে না বলে, আন্দোলনকারীরা শেষাবধি হাংরি শব্দটি গ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালের নভেম্বরে পাটনা শহর থেকে একটি ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন সমীর রায়চৌধুরী, মলয় রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং হারাধন ধাড়া ওরফে দেবী রায়।


কবিতা সম্পর্কিত ইশতাহারটি ছিল ইংরেজিতে, কেন না পাটনায় মলয় রায়চৌধুরী বাংলা প্রেস পাননি। মলয় রায়চৌধুরী হাংরি শব্দটি আহরণ করেছিলেন ইংরেজি ভাষার কবি জিওফ্রে চসারের ইন দি সাওয়ার হাংরি টাইম বাক্যটি থেকে, অর্থাৎ দেশভাগোত্তর বাঙালির কালখণ্ডটিকে তিনি হাংরিরূপে চিহ্ণিত করতে চাইলেন। আন্দোলনের প্রভাবটি ব্যাপক ও গভীর হলেও, ১৯৬৫ সালে প্রকৃত অর্থে হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে যায়। শক্তি বাবু যদিও ১৯৬৩ তে ‘ হাংরি আন্দোলন ‘ ত্যাগ করে কৃত্তিবাস গোষ্ঠী তে যোগ দেন। তাঁর কবিতা গুলি সত্যিই আজও জীবন্ত এবং উঠতি কবিদের অনুপ্রেরণা জোগায়।