দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ তিনি এক অর্থে শিব্রাম আবার অন্য অর্থে শিব আর রাম। একই শরীরে বিজেতা-সূর্যবংশী-ত্রিভঙ্গ মুরারী আবার অলস কালিধুলো মাখা সাধক। ১৩৪, মুক্তারাম্বাবু স্ট্রীটে তাঁর সাম্রাজ্যবিস্তার করেছিলেন এক চিলতে মেস ঘরে। জমিদারির বাড়ির ছেলে সাহিত্য করতে এসে সটান শুয়ে পড়েছিলেন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের রাস্তায়। তেলেভাজা খেতে খেতে শুয়ে শুয়েই বলেছিলেন এই হল কলকাতার ‘অ্যারিস্টোকেসি’। এহেন শিব্রাম কবিতাও লিখতেন, কিন্তু গদ্যের পাটীগণিত-বীজগণিত আর অ্যালজেব্রার ছকে তিনি রয়ে গেলেন আজীবন।
শিব্রাম কেন অনন্য তা কেউ সঠিক করে বলতে পারবে না। তাঁর গন্ধচুরির মামলা, খোলাখুলির মতো গল্প বা হর্ষবর্ধন, গোবর্ধন, পিসিলার মতো চরিত্ররা আজীবন বাংলা সাহিত্যের প্রাঞ্জলতা জিইয়ে রাখবে। কিন্তু আজ তাঁর জন্মদিনে সাহিত্যবিচারের পালা বসানো যায় না। নয়তো তিনি ঝালাপালা করে ছুটে আসবেন, সরভাজা আর রাবড়ি হাঁড়ি বের করে বেরসিক বাঙালিকে হ্যাঙলা বলে গাল পারবেন। তবু তার মিষ্টির লোভ কমবে না।
আরো পড়ুনঃবাংলা সাহিত্যের ‘শক্তি’ ময়তা আজ ৮৭ বছরে,উল্টে দেখা কিছু স্মৃতি- সৌরদীপ চক্রবর্তী
চাঁচলে নাকি দেশবন্ধুর ভাষণ শুনে এক কাপড়ে ট্রেনে চরে সটান কলকাতা পারি জমিয়েছিলেন। তারপর কলের শহরে এসে কলকবজা ঘাটতে শুরু করেন। শুরু হয়েছিল খবরের কাগজ ফেরি করে আর একদিন সেই খবরের কাগজের আপিসে শেষ করেছিলেন জীবন। কাগজের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগ ছিল নাকি, একবার পাঁচশ টাকার বিনিময়ে ‘যুগান্তর’ পত্রিকা কিনে নিয়েছিলেন। কিন্তু নিজে চালাননি। জমিদারের ছেলে গায়ে তার আলসেমির রক্ত, কেরানিগির সইবে কেন!
“গায়ের জোর নেই বলে রিকশা টানতে পারি না তার বদলে কলম টানি। কলমের ওপর টান আমার এইটুকুই।”, এই কথা যে বলে তার নাম হল শিব্রাম। কখনো নিজের লেখার হিসেব বা রয়াল্টির হিসেব রাখননি। ইচ্ছে ছিল যেন ছোটরা তাঁর লেখা পড়বে কিন্তু যেন সেসব বড় হলে ভুলে যায়। এই আজব ইচ্ছে যে পোষণ করেন তার নাম শিব্রাম। বেহিসেবি রসিক বাঙালির নামও নাকি শিব্রাম।
বন্দেমাতরম স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে একহাতে মিষ্টি মুখে পুরে সেন্ট্রাল জেলে ঢুকেছিলেন সেও নাকি শিব্রাম। জেলে গিয়ে দেখা পান পুরোনো প্রেম রিনির, তারপর বাকি জীবনটা কাটিয়েছেন তারই সঙ্গে। রাস্তা দিয়ে বাচ্চাদের চিনি রুটি খাওয়াতেন যেই বুড়ো সেই বুড়ো মরার পাঁচ মিনিট আগে বলেছিলেন, ‘এই ফার্স্টক্লাস আছি’। তাঁর কথায় তিনিই ‘ঈশ্বর-পৃথিবী-ভালোবাসা’।