দ্য ক্যালকাটা মিরর: আজ স্মরণীয় বাংলা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৪৪ তম জন্মদিন। তিনি চিরকালের এক ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক। সারাজীবন ধরে রচনা করেছেন অজস্র গল্প,উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁর প্রতিটি সৃষ্টির মাধ্যমে। এছাড়াও অভিনয়, গান এবং চিকিৎসায় দক্ষ ছিলেন তিনি।
হুগলীর দেবানন্দপুর গ্ৰামে তাঁর জন্ম। ছোটোবেলা কেটেছে তীব্র অনটনে। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন সাহসী এবং চঞ্চল। গ্ৰামে গ্ৰামে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সাপ ধরে, ডিঙি নৌকা বেয়ে, ডোঙা ঠেলে, মাছ ধরে বাল্যকাল কাটিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল যাত্রার মারাত্মক নেশা। বারবার বাড়ি থেকে বেমালুম গায়েব হয়ে যেতেন। দশম শ্রেণীতে যখন উঠলেন তখন ওনার বাবার আর্থিক অবস্থার এত অবনতি ঘটে যে উনি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে ছিলেন। পরে ভাগলপুরে মামাবাড়িতে এসে তিনি গুণীজনদের সাহায্যে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। শরত্ বাবু পরবর্তী ক্ষেত্রেও টাকার অভাবে কলেজ পাশ করতে পারেননি।
সংসার এবং ভাইদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চাকরী করেছেন বর্মায়। সেখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে গান গাইতেন। এমনই অদ্ভুত মানুষ ছিলেন। বর্মায় থাকার সময় তীব্রভাবে আফিং-এর নেশা করতেন। নিজের জীবনের ভালো খারাপ সবকিছুই স্বীকার করে গেছেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা হল তিনি ছিলেন জনদরদী একজন মানুষ। বিশেষ করে নারী দরদী। তাঁর সৃষ্ট বিভিন্ন নারী চরিত্র যেমন রাজলক্ষ্মী, সাবিত্রী, অভয়া, কিরণময়ী, পার্বতী ইত্যাদি এরা পল্লীগ্ৰামের মেয়ে হলেও তাদেরকে শরৎ চিত্রণ করেছিলেন একেবারেই নতুন রূপে।
সেই সময় সমাজে নারীর অবস্থানের যে কদর্য রূপ ছিল সেটাই তিনি লিখেছেন। নারীর প্রেমকে তিনি বারবার শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে বসিয়েছেন। অথচ নিজে প্রেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন একাধিক বার। বহু নারী সঙ্গ পেলেও কোথাও নিজেকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি তিনি। ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে নিজের ছেলেবেলার অনেক ঘটনাকে সম্বল করেছিলেন তিনি। ইন্দ্রনাথ চরিত্রটির সাথে তাঁর বাস্তবে পরিচয়ও ছিল। এছাড়াও রাজলক্ষ্মী ও অভয়ার মতো নারী চরিত্র তৈরি করেছিলেন এই উপন্যাসে।
‘অরক্ষণীয়া’ গল্পে গ্ৰামের মেয়ের ঠিক সময়ে বিয়ে না হলে কি পরিণতি হয় সেটাই দেখিয়েছিলেন। ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে সব্যসাচীর মতো চরিত্রের মাধ্যমে বিপ্লবের বীজ বপন করে জেলে পর্যন্ত গেছেন। ‘চরিত্রহীন’ উপন্যাসের সাবিত্রী একটি অসামান্য চরিত্র। এছাড়া দেবদাস, বড়দিদি, পরিণীতা, মহেশ, দত্তা ইত্যাদি বহু গল্পে অবিস্মরণীয় কিছু চরিত্র তিনি সৃষ্টি করেছিলেন।
শরৎচন্দ্র আজীবন ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন স্থান থেকে স্থানে। এক গভীর অনিশ্চয়তায় তাঁকে কাটাতে হয়েছে বহুকাল। তিনি প্রচার বিমুখ ছিলেন। পল্লীগ্ৰামের বিভিন্ন মানুষের গল্প মৌলিক ভাবে রচনা করেছিলেন তিনি। তাঁর লেখা আজও বহু ভাষায় অনুবাদ হয়ে চলেছে এবং চলচ্চিত্রেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করে আসছে। তাঁর রচনাশৈলী ও সহজ সরল বাক্যগঠনের জন্যে তিনি ‘কথাশিল্পী ‘ হিসেবেই আমাদের মধ্যে আজীবন বিচরণ করছেন।