দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: এশিয়ার এক নম্বর এবং বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যাক্তি মুকেশ আম্বানি বিশ্বব্যাপী পরবর্তী প্রযুক্তি সংস্থা তৈরি করতে চান। যদি তিনি তাঁর ব্যবসায়িক পন্থা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন তবে তার মোবাইল প্রযুক্তি নির্ভর জিও প্ল্যাটফর্ম শীঘ্রই গুগল, আমাজন, আলিবাবা এবং টেনসেন্ট এর পাশাপাশি স্থান পেতে পারে।
জিও প্ল্যাটফর্ম এ ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এর একটি ইকো সিষ্টেম রয়েছে – যা অনলাইন মুদি দোকান থেকে শুরু করে ভিডিও স্ট্রিমিং পর্যন্ত সমস্ত কিছু পরিষেবা প্রদান করে। শুধু তাই নয় গোটা ভারতে রিলায়েন্স জিও মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ৩৮৮ মিলিয়ন।
আম্বানির “চূড়ান্ত লক্ষ্য” হ’ল প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে জিও’র সবকিছু হয়ে ওঠা
-তরুণ পাঠক, কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ অ্যানালিস্ট
জিওর এই জনপ্রিয়তা মুকেশ আম্বানিকে আরও বেশি উচ্চাভিলাষী করে তুলেছে। এরই ঝলক দেখতে পাওয়া গেল মাত্র ১২ সপ্তাহে ১৪ টি ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বখ্যাত কোম্পানীর জিও-তে একের পর এক বিনিয়োগে। যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ফেসবুক, তারা কিনেছেন ৯.৯ শতাংশ শেয়ার (৪৩,৫৭৩.৬২ কোটি টাকা), সিলভার লেক পার্টনার্স (৫৬৫৫.৭৫ কোটি টাকা), ভিস্তা ইক্যুইটি পার্টনার্স (১১,৩৬৭ কোটি টাকা), জেনারেল অ্যাটলান্টিক (৬৫৯৮.৩৮ কোটি টাকা), কেকেআর (১১,৩৬৭ কোটি টাকা), মুবাডালা (৯০৯৩ কোটি টাকা), সিলভার লেক (৪,৫৪৭ কোটি টাকা)-র, আবু ধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি বা ADIA-এর (৫৬৮৩.৫০ কোটি টাকা), টিপিজি ক্যাপিটাল (৪৫৪৬.৮০ কোটি টাকা), এল ক্যাটারটন (১৮৯৪.৫০ কোটি টাকা) , পিআইএফ (১১,৩৬৭ কোটি টাকা), ইন্টেল (১,৮৯৪.৫০ কোটি টাকা), কোয়ালকম ৭৩০ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ ৩৩ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা লগ্নি করেছে গুগল। এই কোম্পানী জিও-র ৭.৭ শতাংশ শেয়ার কিনছে। এই বিষয়টি ভার্চুয়াল এজিএমে নিজেই জানিয়েছেন রিলায়েন্স চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি।
পিচবুকের বিশ্লেষক ওয়াইলি ফেরিনিহু বলেন- “আম্বানি স্পষ্টতই কেবলমাত্র একটি টেলিকম সংস্থা(জিও প্ল্যাটফর্ম)’র চেয়ে বেশি কিছু হতে চান। তারা পরবর্তী গুগল বা ভারতের টেনসেন্ট হতে চান”।


কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ অ্যানালিস্ট তরুণ পাঠকের মতে আম্বানির “চূড়ান্ত লক্ষ্য” হ’ল প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে জিও’র সবকিছু হয়ে ওঠা এবং দেশের লক্ষ লক্ষ ইন্টারনেট গ্রাহকের জন্য একটি অপরিহার্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ফেলা, যা আদতে একটি নতুন ধরণের টেক জায়ান্ট তৈরি করা।
আম্বানির নেতৃত্বে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ একটি তেল ও জ্বালানী সংস্থা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বিস্তৃত আকারের একটি জরুরী ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে যার মধ্যে খুচরো দোকান, মোবাইল এবং ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, হরেক রকম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে।
সে জন্যেই তার পরিকল্পনাগুলিকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আম্বানির সিলিকন ভ্যালিতে প্রবেশের প্রয়োজন ছিল- সুতরাং, ফেসবুক এবং তার বিশ্বব্যাপী মেসেজিং পরিষেবা হোয়াটসঅ্যাপের সাথে তার ৫.৭ বিলিয়ন অংশীদারিত্ব তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত মাসেই যখন এই চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখনই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাত্রা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
আম্বানির এই সাম্প্রতিক তহবিল (ইনভেস্টমেন্ট) সংগ্রহের ঘটনাটি ভারতের ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর থেকেও আরও বেশি কিছু। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের বিস্তারের জন্যে ধার পরিশোধে অম্বানীরও অর্থের প্রয়োজন ছিল এবং সেটাই এই কোম্পানীর ঋণমুক্ত হওয়ায় দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।