দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ কার্টুন আর বঙ্গ-রাজনীতি এক সময় পরিপূরক ছিল। কার্টুনিস্টদের কন্টেটের অভাব হত না কারণ তখন রাজনৈতিক তর্জা, ব্যক্তি-আক্রমণ চললেও তার মধ্যে উন্নত রসবোধের অভাব ছিল না। অথবা নেতানেত্রীরা সেই সব ক্যারিকেচারকে ব্যক্তিগত স্তরে নিয়েও আসতেন না। বিখ্যাত চিত্রকার ও কার্টুনিস্ট আর.কে.লক্ষণের ‘কমন ম্যান’ সাড়া ফেলে দিয়েছিল ভারতীয় রাজনীতিতে। কিন্তু কার্টুন ও স্যাটায়ারের উৎস কিন্তু মোদের বাংলা।
ঔপনিবেশিক বাংলায় ১৮৭২ সালে প্রথম ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশিত হল কলকাতার দৈনিক সংবাদপত্রে। সেই কার্টুনে দেখান হল যে সাহেবরা কিভাবে তাদের নেটিভ মোসাহেবদের সঙ্গে ব্যবহার করেন। দুই বছরের মধ্যে প্রকাশিত হয়ে গেল দুটি কার্টুন ম্যাগাজিন – হরবোলা ভঁড় আর বসন্তক। কিন্তু ইতিহাসের আলোচনা এখন বিষয় নয়। বঙ্গ-রাজনীতিতে কার্টুন ছিল, আছে থাকবে কিন্তু তার অবস্থান ঠিক কেমন তা একটু জেনে নেওয়া দরকার।




স্বাধীনতা পূর্বকালে দেশের রাজনীতি তো আর এমনটি ছিল না, কিন্তু বিগত ৭৩ বছরে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। অনেক নেতামন্ত্রী তাদের উত্তরপুরুষ পার্লামেন্টের চেয়ার ঘঁষে পালিশ করে দিয়েছে কিন্তু কার্টুনিস্টদের ভাত কেউ মারতে পারেনি। সে যতই মাঝরাতে অম্বিকেশ মহাপাত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়া হোক বা মহারাষ্ট্রে পঁচিশ বছর বয়সী অসীম ত্রিবেদির গ্রেফতারি হোক – রাজনীতির আঙিনা থেকে ব্যঙ্গচিত্রকে সরানো যায়নি। কিন্তু সমাজের সহিষ্ণুতা ক্রমশ কমে আসছে, নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হারাচ্ছে সাধারন মানুষ। তাই আজ সে নাম বদলে সোশ্যাল মিডিয়াতে এসে জুড়ে বসেছে। দেশ পেরিয়ে দুনিয়া সব জায়গাতেই শিল্পীর অস্তিত্ব সংকটে। এমতাবস্থায় কার্টুন কি আবার স্বমহিমায় ফিরে আসতে চলেছে বাংলা রাজনীতিতে?


এই প্রশ্নকে উসকে দিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে একটি কার্টুন চিত্র শেয়ার করেছেন রাজ্যের বিজেপি সম্পাদক দিলীপ ঘোষ। ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে গাধার পিঠে চড়ে বসেছে খোদ মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী আর তার সওয়ার সঙ্গী তাঁর সাধের ‘ভাইপো’ অভিষেক। উড়ে যাচ্ছে ইঙ্গিতমূলক গাড় সবুজ রঙের পতাকা যাতে লেখা জয় বাংলা। নেটিজেনরা লক্ষ্য করলে বুঝবেন এই সবুজ সেই সবুজ নয়, এ তীব্রভাবে ইসলামি সবুজ। আর গাধাটি ব্রেক কষেছে এমনি জোরে যে মুখমন্ত্রী তার ভাইপো সমেত এই বুঝি পরলেন ‘গাড্ডা’য়। তীব্র ইঙ্গিত্মূলক এই কার্টুনকে নিয়ে ব্যঙ্গ-তামাশা চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।


সে যতই মাঝরাতে অম্বিকেশ মহাপাত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়া হোক বা মহারাষ্ট্রে পঁচিশ বছর বয়সী অসীম ত্রিবেদির গ্রেফতারি হোক
আরো পড়ুনঃ এবার “মহারাজ”এর আশায় বিজেপির ‘তুরুপের তাস’ বৈশালী ডালমিয়া! – দেবারুণ রায়
এর আগে বাম জমানায় চণ্ডী লাহিড়ী ছিলেন নাম করা কার্টুনিস্ট, শেষ জীবনে এসে তিনি মমতা-সরকারের হয়েও অনেক সরকারি ব্যানারে ছবি এঁকেছেন। ‘প্রতিদিন’-এর পাতায় ‘অমল আলোয়’ যে কার্টুন স্ট্রিপ প্রথম পাতার বাম দিকে বেরোতো তাও ছিল তীব্রভাবে রাজনৈতিক। ২০১৯-এ লোকসভায় মমতা ব্যানার্জির ভরাডুবির পর তৃণমূল কংগ্রেস ফের ফিরিয়ে এনেছিল কার্টুন সংস্কৃতি।


প্রশান্ত কিশোরের বুদ্ধিবলে ‘বাংলা গর্ব মমতা’ শিরোনামে টুইটার ও সর্বত্র মমতা-সরকারের গুণগান বেরোতে থাকে। কিন্তু সেখানে সেই চির পরিচিত ‘পান’ আর ‘স্যাটায়ার’-এর চিহ্ন ছিল না, তা ছিল নিছকই প্রচারমূলক। কিন্তু দিলীপ ঘোষ আবার রাজনীতির তর্জায় যেভাবে একটি ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে বসলেন তাতে রাজ্য-রাজনীতিতে কিরকম সোরগোল পরে সেটাই দেখার।

