দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ শুক্রবার হাথরাস মামলায় সিবিআই যখন চার্জশিট জমা দেয়, তখন একমাত্র ১৯ বছর বয়সী দলিত মহিলার বড় ভাই তাদের বাড়ির অদূরে অবস্থিত হাথরাস জেলা আদালতে পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন। এমনি তার বাবা-মাকে’ও বলা হয়নি যে চার্জশিট দাখিল করা হচ্ছে। আদালতের বাইরেই তার ভাই বলেন যে, “আমরা চার্জশিট থেকে তেমন কিছু আশা করিনি, তাই আমরা বাবা-মাকে এই নিয়ে বলিনি। কিন্তু আমার বাবা টিভিতে খবরটা দেখেই কাঁদতে শুরু করেন।”
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দাবির বিরোধিতা করে চার্জশিটে বলা হয়েছে যে, ১৪ সেপ্টেম্বর উচ্চবর্ণের চারজন অভিযুক্তই মহিলাকে গণধর্ষণ করে। দলিত হিংসার বিরোধিতায় চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩০২, ৩৭৬, ৩৭৬এ, ৩৭৬ডি ধারায় চার্জশিট জমা পরেছে। হাথরস আদালদের বিচারপরি বিডি ভারতী জানিয়েছেন যে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ৩(২)(v) ধারায় দলিত হিংসার বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশনামাও দাখিল হয়েছে। একইসঙ্গে জানানো হয় যে জানুয়ারির চার তারিখ এই নিয়ে আবার আদালত মোকদ্দমা বসাবে।
উল্লেখ্য, হাথরস কান্ডে কড়া নজর রেখেছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সন্দীপ, রামু, রবি ও লাভ কুশ এই চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। এই প্রসঙ্গে নির্যাতিতার আরেক ভাই বলেছে যে, “ঘটনার পর থেকে আমাদের প্রতিবেশী, গ্রামবাসী এবং এমনকি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) আমাদের বিরুদ্ধে। তারা আমাকে আমার নিজের বোনকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, এটাকে ‘অনার কিলিং’ বলে প্রচার করেছে… আমরা আশা করি আদালত শীঘ্রই অভিযুক্তদের শাস্তি প্রদান দেবে।”
বড় ভাই বলেছে যে, “আমাদের অনেক লড়াই করতে হয়েছে। প্রশাসন আমাদের বিশ্বাস করেনি এবং চিত্রিত করেছে যে আমরা মিথ্যা বলছি, কিন্তু সত্য বেশিদিন লুকিয়ে থাকে না। আজ কিছু আশা আছে… ন্যায়বিচারের সিঁড়িতে এটাই আমাদের প্রথম পদক্ষেপ। এখন চূড়ান্ত ন্যায়বিচার প্রদান করা আদালতের দায়িত্ব। আমরা সেই রায়ের জন্য অপেক্ষা করব যা এই বিষয়ে একবার এবং সকল সত্যের জন্য প্রমাণিত হবে।”
৩০ সেপ্টেম্বর ভোরে তার মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পরে এই মহিলাকে দাহ করা হয়, যেখানে তার পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিল না। এরপরে সরকারী পদক্ষেপে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। যোগী আদিত্যনাথের সরকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫ লাখ টাকার প্রতিশ্রুতি পালন করেছে, কিন্তু পরিবারটি বলছে যে তাদের জীবন আর স্বাভাবিক নেই, যেখানে প্রতিবেশীরা গ্রামে তাদের একঘরে করে রেখেছে সেখানে আর কি করার আছে। কম সংখ্যায় হলেও সিআরপিএফ জওয়ানদের তাদের বাড়ির বাইরে মোতায়েন করা হচ্ছে। আরেক ভাই বলেছে যে তারা নিরাপত্তায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। “প্রতিবেশীরা আমাদের সাথে কথা বলবে না কারণ তারা উচ্চবর্ণের এবং অভিযুক্তকে সমর্থন করে। আমরা কেন আশা করবো যে তারা আমাদের সমর্থন করবে? আমরা শুধু আমাদের বোনের জন্য ন্যায়বিচার চাই।”
উলটে পরিবারের দাবি অস্বীকার করে গ্রামের প্রধান বলেন, তারাই অন্যদের সাথে মিশে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। “আমরা কোন পক্ষ নিচ্ছি না এবং আমরা তদন্ত থামানোর চেষ্টা করছি না… সিবিআইকে এই বিষয়ে পুরোপুরি তদন্ত করতে দিন… আমরা মনে করি না এটা জাতপাতভিত্তিক সহিংসতা। সত্য শীঘ্রই বেরিয়ে আসবে”। যাই হোক না কেন যোগী সরকারের পুলিশ-প্রশাসন যে এই সিবিআই চার্জিশিটে বেশ অস্বস্তিতে তা পরিষ্কার।