দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:গতকাল দিল্লিগামী বিশেষ বিমান ধরেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের অন্যান্যরা।অন্যদিকে শেষ বেলায় দিল্লি যেতে চাওয়া রুদ্রনীলকে আলাদা করে বাণিজ্যিক বিমানে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে তাঁদের বিজেপিতে যোগদান ছিল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
এরপর পূর্ব পরিকল্পনা মতোই গতকাল রাতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাসভবনে গিয়ে তাঁর হাত গেরুয়া পতাকা নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।তাঁর সাথেই গতকাল গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া,উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল, হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী, রানাঘাট পুরসভার পদত্যাগী প্রশাসক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ও।তাঁদের সাথেই এদিন বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন একদা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষও।এদিন নয়া দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক হয় রাজীব, বৈশালী, রথীনবাবুদের।
অন্যদিকে আজ ডুমুরজোলার “যোগদান মেলা” থেকে আরও এক ঝাঁক অভিনেতা অভিনেত্রী সহ তৃণমূল থেকে বড় সংখ্যায় বিজেপি-তে যোগদান করতে চলেছেন। প্রথমে ডুমুরজোলার এই সভায় আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। কিন্তু পরবর্তীতে দিল্লিতে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের কারণে বাতিল হয় সফরসূচি। তাঁর বদলে আজ ডুমুরজোলার সভায় আসছেন স্মৃতি ইরানি। তবে গোটা সভাতেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত থাকবেন অমিত শাহ।
উল্লেখ্য নির্বাচনের আগে তৃণমূলের হেভিওয়েটদের বিজেপি-তে যোগদান তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে একটা বড়সড় ধাক্কা দিতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে দলত্যাগীদের দলবদলকে বিশেষ দিতে নারজ তৃণমূল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তাই এবিষয়ে বিজেপির এই “যোগদান মেলা”র আগেই শুক্রবার কালীঘাটের বাড়িতে ডাকা বৈঠকে দলের কর্মীদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন নেত্রী।দলীয় কর্মীদের ভোকাল টনিক দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন “এ সব নিয়ে কোনও আলোচনাই করবেন না। যদি কারও যাওয়ার ইচ্ছা থাকে চলে যান। তাতে দলের কিছু আসেযায় না।’’
উল্লেখ্য বাংলা বাঁচাতে মরিয়া তৃণমূলনেত্রী।তাই এদিন ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াইয়ের নিদান দিয়ে আগামী ১-১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠাসা কর্মসূচির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন, সাংসদ ও পুরনো বিধায়ক ও পরিচিত মুখের নেতাদের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্য ব্যাপক ভাবে নির্বাচনী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
এসবের মধ্যেই গতকাল বিজেপিতে যোগদানের লক্ষ্যে বিশেষ বিমানে চড়ে বসার পরেও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজের কভার ফটোতে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি।সেই ছবিতে লেখা “বাংলার গর্ব মমতা।”এরপরেই প্রশ্ন উঠতে থাকে বিজেপিতে যোগদানের মনস্থির করে ফেলার পরেও কেন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরানো হল না তৃণমূল নেত্রীর ছবি।যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই বদলে যায় সেই ছবি।গেরুয়া অভায় হাত উঁচু করে রাজীবের ছবির ওপর লেখা হয়, “মানুষের সাথে, মানুষের পাশে।”
এই ছবি বিতর্কে গতকাল দিল্লিতে বিজেপিতে যোগদানের পরেই মুখ খুলেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।ব্যাখা দিয়ে তিনি বলেছেন “আমি আগেই বলেছিলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করব আলোচনা সদর্থক হলে বিজেপিতে যোগ দেব। তাই কাল যতক্ষণ বিজেপিতে যোগ দিইনি তার আগে যা ছিল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এখন আর সেসব কিছু নেই। “
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র সৌগত রায় বলেন, “এগুলোকে নাটক বাজি বলে। রাজীব গণ আন্দোলন থেকে উঠে আসেননি। ওর মতাদর্শের প্রতি আনুগত্য চামড়ার মতো পাতলা। সে কী বলল আর কী করল তাতে কিছু আসে যায় না।”
অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার জানিয়েছেন, “রাজীববাবু অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। ফলে তাঁর পেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকলে আপত্তির কিছু নেই। বিজেপিতে যোগদানের পর এসব বদলানোর প্রশ্ন ওঠে।”