দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:দেশজুড়ে বেজে গিয়েছে ভোটের দামামা।বাংলা, আসাম, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং পুদুচেরির আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের পাশাপাশি পাঞ্জাবের পুরভোট নির্বাচন কে ঘিরেও ক্রমশ বাড়ছে রাজনৈতিক তাপ উত্তাপ। এই নির্বানের মুখে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে কোন রাজ্যে কে কতটা এগিয়ে সে বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো।
রাত পোহালেই পাঞ্জাবে হতে চলেছে পুরভোট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে দেশজুড়ে কৃষি আন্দোলন একটা বড়ো ফ্যাক্টর হতে চলেছে । বিশেষ করে পাঞ্জাবে।এমনিতে পাঞ্জাব বরাবরই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি।ক্ষমতায়ও আছেন তাঁরাই। তবে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে বিজেপিও কড়া টক্কর দিতে চেয়েছিল।কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনা এখন বিশ বাঁও জলে।কারণ অবশ্যই দিল্লির সীমান্ত এলাকার কৃষি আন্দোলন।জলন্ধরের বিজেপি শীর্ষ নেতা রমেশ শর্মা ইতিমধ্যেই সঙ্কটের মধ্যে। বিজেপি নেতারা বলেছেন, ‘আমাদের সর্বত্র অনুসরণ করন প্রতিবাদী কৃষকরা।’বলা হচ্ছে বিজেপি নেতাদের সামাজিকভাবে বয়কট করার কথা ভাবছেন পাঞ্জাবের কৃষকরা।এ বিষয়ে কংগ্রেসের তরফে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে বলেছেন “মোদী-শাহ ঘোষণা করুন কৃষি বিল ফেরত নিচ্ছি, কথা দিলাম কৃষকরা দিল্লি সীমানা থেকে আবার মাঠে ফিরে আসবেন। “
আরো পড়ুন:“দেশ স্বাধীন হলেও গুজরাট পরাধীন”দেশজুড়ে বৃহত্তর কৃষি আন্দোলনের ডাক দিয়ে বললেন রাকেশ টিকাইত
বাংলাতেও জোরকদমে চলছে ভোটের প্রস্তুতি। একদিকে বাংলার মনসদ রক্ষা করতে মরিয়া রাজ্যের শাসক দল তণমূল কংগ্রেস, তো অন্য দিকে আসন্ন একুশের ভোটে বাংলাকে পাখির চোখ করে বাংলা দখল করতে মরিয়া বিজেপিও।তাই প্রায় প্রতিদিনই পরিবর্তন রথযাত্রা সহ একগুচ্ছ নির্বাচনী কর্মসূচি নিয়ে রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রীরা। সেইসাথে চলছে যোগদান মেলা। যেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে তৃণমূল নেতা কর্মীরা এসে যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে।সেই তালিকায় একদিকে যেমন রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রীরা তেমনি রয়েছে অসংখ্য তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা।এসবের মধ্যে গতকালই রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে বেনজির ভাবে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে পদত্যাগ করেছেন দীনেশ ত্রিবেদী। এখন তাঁরও বিজেপিতে যোগ দান শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। দীনেশ ত্রিবেদীর এই নাটকীয় পদত্যাগে কার্যত অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল শিবির বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দের একাংশ।
অন্যদিকে পিছিয়ে নেই তৃণমূল শিবিরও। বিধানসভা নির্বাচনের আগে আজ রাজ্যের শেষ অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশ করে নিঃসন্দেহে চমক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যজুড়ে একাধিক নির্বাচনী সভা করে চলেছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।অন্যদিকে রাজ্যজুড়ে দলবদলের হিড়িকের মাঝেই একে একে তৃণমূল শিবিরে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে অসংখ্য টেলি অভিনেতা অভিনেত্রীদের।
সেইসাথে আসন্ন নির্বাচনে রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্যের বাম কংগ্রেস জোটও।এসবের মধ্যেই গত পরশু ১০টি বাম ছাত্র যুব সংগঠন কর্মসংস্থান, রাজ্যে নতুন শিল্প, সহ একাধিক দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন।সেই মিছিলকে কেন্দ্র করে ডোরিনা ক্রসিং এ বাম কর্মী সমর্থকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় রাজপথ।পুলিশের এই অমানবিক অত্যাচারের প্রতিবাদে গতকাল রাজ্যজুড়ে ১২ বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন বাম কর্মী সমর্থকরা।
এই পরিস্থিতিতে বাংলা দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে কোন শিবির সেবিষয়ে জনতার রায় জানতে সম্প্রতি ভোট সমীক্ষক সংস্থা সি ভোটার জনমত সমীক্ষা চালিয়েছিল। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী দেখে নেওয়া যাক, আসন্ন নির্বাচনে কার পাল্লা কতটা ভারী হতে চলেছে।
রাজ্যের ২৯৪টি আসন থেকেই ১৮ হাজার জনের মধ্যে এই সমীক্ষা চালিয়ে যা ইঙ্গিত মিলেছে, তাতে কিছুটা দুর্বল হলেও তৃতীয় বারের জন্য বাংলার মনসদে বসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। এই সমীক্ষা অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেস পেতে পারে ১৫৪ থেকে ১৬২টি আসন। অন্যদিকে বিজেপির শক্তি বাড়লেও বাংলার গদি এবারও ওল্টাতে পারবে না তাঁরা। সি ভোটার-এর সমীক্ষা বলছে গেরুয়া শিবিরে আসবে ৯৮ থেকে ১০৬ টি আসন। আর বাম ও কংগ্রেস জোট আটকে যাবে ২৬ থেকে ৩৪টি আসনেই। অন্যান্যরা ঝুলিতে যাবে মাত্র ২ থেকে ৬টি আসন।
বাংলার পাশাপাশি এবার ভোট হতে চলেছে পাশের রাজ্য আসামে। প্রতিবেশী রাজ্যের মতোই আসামেও অন্য দল থেকে বিজেপিতে হেভিওয়েটদের যোগদান অব্যাহত । এই পরিস্থিতি নিজেদের শেষ মহূর্তের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে অসমের রাজনৈতিক দলগুলিও।বিজেপিকে ঠেকাতে অসমে কংগ্রেস, এআইইউডিএফ, বাম সহ প্রধান বিরোধী দলগুলি জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়ার কথা ঘোষণা করেছে।অসমের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করতে চাইছে কংগ্রেস।
তবে সি ভোটারের সমীক্ষায় থেকে ইঙ্গিত মিলেছে দ্বিতীয় বারের জন্য আসামে ফের ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের দল। উল্লেখ্য এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকায় ১৯ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে, যার ১২ লক্ষই বাঙালি।তবে মনে করা হচ্ছে এই ইস্যু কে কাজে লাগিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না কংগ্রেস। এমনটাই আভাস মিলেছে সি ভোটারের সমীক্ষায়।বলা হচ্ছে
১২৬ আসনের অসম বিধানসভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেতে পারে ৭৩ থেকে ৮১টি আসন। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পেতে পারে ৩৬ থেকে ৪৪টি আসন। মুসলিম প্রধান দল বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ পেতে পারে ৫ থেকে ৯টি আসন। অন্যান্যরা পেতে পারে শূন্য থেকে ৪টি আসন।সি ভোটারের সমীক্ষায় ইঙ্গিত এনডিএ পেতে পারে ৪৩ শতাংশ ভোট। ইউপিএ-র ঝুলিতে আসতে পারে ৩৫ শতাংশ ভোট। ৮ শতাংশ ভোট পেতে পারে এআইইউডিএফ। অন্যান্য পেতে পারে ১৪ শতাংশ ভোট।
অন্যদিকে নির্বাচন এগিয়ে আসছে তামিলনাড়ুতেও।এই প্রথম দক্ষিণের এই রাজ্যে ভোট হতে চলেছে করুণানিধি এবং জয়ললিতাকে ছাড়াই।এবারের ভোটে একদিকে রয়েছেন করুণানিধির ছোট ছেলে স্টালিন এবং রাহুল গাঁধী তো অন্যদিকে রয়েছেন জয়ললিতার দুই প্রধান শিষ্য ইপিএস ও ওপিএস। এবছর রাজনীতির ময়দানে নেমেছেন বিখ্যাত অভিনেতা কমল হাসানের দলও। এই পরিস্থিতিতে তামিলনাড়ুর ভোটের হাওয়া কোনদিকে তা জানতে একবার নজর দেওয়া যাক সি-ভোটারের সমীক্ষার দিকে। সমীক্ষা অনুযায়ী ২৩৪ আসন বিশিষ্ট তামিলনাড়ুতে এবার ক্ষমতায় আসতে পারে ডিএমকে-কংগ্রেস জোট। জয়ললিতার অবর্তমানে ক্ষমতা হারাতে পারে এআইএডিএমকে।এআইএডিএমকে বর্তমানে বিজেপির এনডিএর অংশ।শরিক বিজেপির সঙ্গে এমনিতেই বনিবনা নেই এআইএডিএমকের।২০২১ ভোটের সমীক্ষা বলছে তামিলনাড়ুতে এআইএডিএমকে, বিজেপির এনডিএ পাবে ৬০ থেকে ৬৮ টি আসন।অন্য দিকে স্টালিন ও রাহুলের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ১৫৮ থেকে ১৬৬ টি আসন পেতে পারে। কমল হাসানের দল MNM সর্বোচ্চ পেতে পারে ৪টি আসন। AMMK পেতে পারে ২ থেকে ৬টি আসন। অন্যান্যর ঝুলিতে যেতে পারে সর্বোচ্চ ৪টি আসন।
নির্বাচন এগিয়ে আসতেই কেরলেও ক্রমশ চড়ছে রাজনীতির পারদ। কেরলে মূল লড়াই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের সঙ্গে বাম নেতৃত্বাধীনে এলডিএফের।সবরীমালা ইস্যু ছাড়াও ইতিপূর্বে বন্যা এবং অতি সম্প্রতি করোনা মোকাবিলা কে কেন্দ্র করে একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করেছিল বিরোধী দল ইউডিএফ। কিন্তু সবরীমালা থেকে শুরু করে বন্যা কিংবা করোনা,ইস্যুকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছেন কেরল সরকার। সি ভোটারের পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয়বার কেরলে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে বাম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ। ১৪০ আসন বিশিষ্ট কেরলে তারা ৮১ থেকে ৮৯টি আসন পেতে পারে।কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ পেতে পারে ৪৯ থেকে ৫৭টি আসন।দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণের রাজ্যটিতে থাবা বসানোর চেষ্টা করেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি বিজেপি।এবারের নির্বাচনেও তারা কেরলের নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে সি ভোটারের সমীক্ষা। এই সমীক্ষা অনুযায়ী তারা সর্বোচ্চ ২টি আসন পেতে পারে। অন্যান্যরাও পেতে পারে সর্বোচ্চ ২টি আসন।
এবারের ভোট যুদ্ধে সামিল হতে চলেছে সমুদ্রতীরের পুদুচেরিও। আকারে ছোট এই রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে মোট ৩০ আসনের লড়াই। একদিকে রয়েছে বিজেপি AINRC ,ADMKজোট এনডিএ, অন্যদিকে কংগ্রেস ডিএমকের জোট এসডিএ।সি ভোটারের সমীক্ষায় ইঙ্গিত পুদুচেরিতে ৩০ বিধানসভা আসনের ভোটে বিজেপি জোটের এনডিএ জিতবে ১৪ থকে ১৮ টি আসন। আর কংগ্রেস ও ডিএমকে জোটের এসডিএ জিতবে ১২ থেকে ১৬ টি আসন।