দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সম্প্রতি, পাঞ্জাবের মোগা জেলার ভুলার গ্রামে এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির গড়ে উঠেছে। ওই গ্রামে শিখদের জন্য সাতটি গুরুদ্বার রয়েছে। হিন্দুদের জন্য রয়েছে দু’খানা মন্দির। কিন্তু এতদিন ওই অঞ্চলে মুসলিমদের জন্য একটাও মসজিদ ছিল না। তাই মুসলিম পড়শিদের কথা মাথায় রেখেই ওই অঞ্চলে এবার মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করলেন শিখ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ জন।
গত রবিবার ছিল সেই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান। ধর্মকে তোয়াক্কা না করে মানবিকতার এই অসামান্য নজির দেখতে সেদিন ভিড় জমিয়েছিল গ্রামবাসীরা। কিন্তু এত ভালোর মধ্যেও সবটা ভন্ডুল করে দেয় বৃষ্টি। আয়োজনের সবটুকুই প্রায় জলে যাওয়ার জোগাড়।
আর ঠিক সেইসময়ে কিছু গ্রামবাসী প্রস্তাব দেয় , সৎসঙ্গ সাহিবের গুরুদ্বার ফাঁকা পড়ে আছে। আর সেই গুরুর ঘরে সকলের অবাধ যাতায়াত । বাকি অনুষ্ঠান তাে সেখানেই সেরে ফেলা যেতে পারে! আর যেই ভাবা, সেই কাজ। শিখ – হিন্দু – মুসলিম ধর্মের চিরাচরিত তকমাকে একপ্রকার মুছে ফেলেই, একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে খুলে ফেলেন লঙ্গর।
সেই গুরুদ্বারেই শুরু হয় রান্নাবান্না করে ভোজের আয়োজন। এমনকি, শেষপাতে মিষ্টি মুখের জন্য জিলিপিও ভাজা হয় সেদিন। এই খুশির মাঝে তৎক্ষণাৎ মিলিয়ে গেছে হিন্দু-মুসলিম-শিখ ধর্মের ভেদাভেদ।
গ্রামের সরপঞ্চ পালা সিং জানান , এটাই প্রথম নয়। সাম্প্রদায়িক সদ্ভাব তাঁদের গ্রামে আগাগােড়া বজায় রয়েছে। পাশাপাশি মসজিদের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তিনি বলেন , ‘৪৭ সালের আগে এখানে একটি মসজিদ ছিল । কিন্তু দেশভাগের পর যখন কাতারে কাতারে মুসলিম গ্রামবাসী পাকিস্তান পাড়ি দেন , তারপর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা ধসে পড়ে । গ্রামে রয়ে যায় চারঘর মুসলিম পরিবার । এতদিন তাদের প্রার্থনার খুব অসুবিধা হত । সেই কারণে আমরা সকলে মিলে ঠিক করি , ভেঙে পড়া মসজিদের জায়গাতেই নতুন মসজিদ তৈরি করা হবে।’
পালা সিং জানান, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তকমা দিয়ে তাঁরা কোনোদিন কাউকে দূরে ঠেলে দেননি। বরং একে অপরের আপদে বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, এই মসজিদ গড়তে শুধু একদিনের কায়িক পরিশ্রমই নয়। মসজিদ গড়তে যে আর্থিক সাহায্যের প্রয়ােজন, তার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সকলে। যে যেমন পেরেছেন, তেমনভাবে সাহায্যে করেছেন নিঃস্বার্থভাবে।