দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: কষ্টের আর মাত্র চার মাস। যাবতীয় করোনা সতর্কতামূলক নিয়ম বিধি পালন করলে করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসবে আর সেই সাথে উপসর্গযুক্ত সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যাও নগণ্য হবে। এমনটাই জানালো কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি।
উল্লেখ্য, দেশ জুড়ে করোনার সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্রের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তে সহায়তার জন্য ১০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির প্রধান ছিলেন আইআইটি হায়দরাবাদের অধ্যাপক এম বিদ্যাসাগর। করোনার গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনার জন্য লকডাউনের সময়, লকডাউনের বিকল্প উপায়, পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর এর প্রভাব, সুরক্ষা বিধি মেনে না চলার মতো বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে একটি গাণিতিক মডেলও তৈরি করা হয়েছিল।
এই কমিটির প্রধান এম বিদ্যাসাগর বলেন, ‘আমরা সবাই যদি করোনা সুরক্ষা বিধি পালন করি, তাহলে আগামী বছরের গোড়াতেই আমরা মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। এই হিসাবে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত খুব অল্পসংখ্যক উপসর্গযুক্ত সক্রিয় আক্রান্ত থাকবেন। আবহাওয়ার ভিত্তিতে এই মহামারীর ভয়াবহতা এবং ভবিষ্যতে ভাইরাসের মিউটেশনের সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে আমরা এখনও অবহিত নই (সাধারণত শীতকালে এই ভাইরাস বেশি সক্রিয় থাকে)।’
তবে মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নতুন করে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পথে না হাঁটার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। সেই সাথে আসন্ন উৎসবের মরশুমেও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে। সেজন্য যাবতীয় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উলটে সুরক্ষা বিধি মেনে না চললে সংক্রমণের গ্রাফ আবারও উর্ধ্বমুখী হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আইআইটি হায়দরাবাদের অধ্যাপক এম বিদ্যাসাগর। তিনি বলেন, ‘তাই আমাদের সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা প্রোটোকল পালন করতে হবে। নাহলে সংক্রমণ হু হু করে বাড়বে। যদি না স্বাস্থ্য পরিষেবার সামনে আসন্ন বিপদ না থাকে, তাহলে নতুন করে জেলা এবং রাজ্যভিত্তিক লকডাউন শুরু করা উচিত নয়।’
প্রসঙ্গত ওই কমিটিতে বিজ্ঞানীরা ছাড়াও ছিলেন আইআইটি এবং আইআইএসের অধ্যাপকরা। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘লকডাউন না হলে ভারতে মহামারীর সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়ত। জুনেই আক্রান্তের সংখ্যা ১.৪০ কোটি হত। সেই সময় আমাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতির কথা বিবেচনা করলে স্বাস্থ্য কাঠামোর দুর্বিষহ অবস্থা হত। তার ফলে আরও অনেকের মৃত্যু হত। ভারত যদি লকডাউনের জন্য মে পর্যন্ত অপেক্ষা করত, তাহলে জুন পর্যন্ত সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াত ৫০ লাখ।’
এই কমিটির বক্তব্য, লকডাউনের জেরেই ভারতে করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পিছিয়ে গিয়েছে। আর সেই সময় আক্রান্তের সংখ্যাও কম ছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘আদতে সক্রিয় আক্রান্তের সর্বোচ্চ পর্যায় এসেছিলে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। সেই সময় সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ লাখের আশপাশে। সেই সময়ের মধ্যে পরিকাঠামো এবং সরঞ্জামের নিরিখে আমরা অনেক ভালোভাবে প্রস্তুত ছিলাম। লকডাউন না হলে সামান্য সময়ের মধ্যেই মৃতের সংখ্যা বাড়ত এবং শেষপর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৬ লাখ ছাড়িয়ে যেত।’