দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: এবার কী তাহলে ভোল বদল মেয়েদের বিয়ের বয়সে। ভারতে মেয়েদের আইনত বিবাহের ন্যূনতম বয়সের পরিবর্তন হতে চলেছে।শুক্রবার এক ভার্চুয়াল-অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। এই দিন তিনি বলেন, “আমরা আমাদের মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার জন্য কমিটি গঠন করেছি। কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরে আমরা যথাযথ সিদ্ধান্ত নেব।” বর্তমানে ভারতে ‘চাইল্ড ম্যারেজ প্রহিবিশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের নূন্যতম বয়স হলো ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর। তবে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স পরিবর্তন হলে তাদের বয়স ঠিক কত হওয়া উচিত তা এখনো জানা যায়নি। তবে সে বিষয়ে কেন্দ্র শীঘ্রই তাঁদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মেয়েদের বিয়ের ঠিক বয়স কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে জরুরি শলা-পরামর্শ চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সচেতন মহিলারা আমাকে চিঠি পাঠান। লেখেন, দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। প্রশ্ন করেন, কমিটির রিপোর্ট এখনও আসেনি কেন? আমি তাঁদের সকলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি সরকার ওই ব্যাপারে পদক্ষেপ করবে।”
এ প্রসঙ্গে নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এক প্রশ্নের উওরে জানিয়েছিলেন, ‘ওই বয়স কত হওয়া উচিত, তা পর্যালোচনার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে কেন্দ্র। আর সেখানে ১০ জন সদস্যের একটি দল ও গঠন করা হয়েছে যারা মহিলাদের বিয়ের সঠিক বয়স ও এই সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় আলোচনা করবেন।এছাড়া বিয়ে এবং মাতৃত্বের মধ্যে সময়ের গড় ব্যবধান, এই দুই বিষয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির যোগ, জন্মের সময়ে শিশু ও মায়ের মৃত্যুর হার, সন্তানধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে রিপোর্ট পেশ করবে ওই কমিটি’। রিপোর্ট হাতে এলেই কেন্দ্র পদক্ষেপ করবে।


ভারতে কন্যাসন্তানদের অপুষ্টিজনিত রোগ ও মৃত্যুর হার বিপজ্জনক। এই অপুষ্টিজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রবণতা আরও বেশি দেখা যায় কম বয়সে বিবাহের কারণে। বিশেষত গ্রামে এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা বহু পরিবারে ছোটো বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবনতা দেখা যায়।কারন কোথাও সেখানে এখনও মেয়েদের বোঝা ভাবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।এছাড়া স্কুলছুট মেয়েকে বেশি দিন বাড়িতে বসিয়ে রাখতে না চাওয়ার কারণেও এর প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়।
হাথরস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিত্যদিন একের পর এক নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুনের ঘটনার সমালোচনায় মুখর গোটা দেশ।এছাড়া মেয়েরা একটু বড় হলেই তার সঙ্গে ধর্ষণ কিংবা শ্লীলতাহানির মতো অপরাধ ঘটে যাওয়ার আতঙ্ক থাকে। এইসকল কারনেই শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী তার বৈঠকে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরির বিষয়ে সরব হন।
প্রতিটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সরব থাকলেও মেয়েদের নিরাপত্তার মতো বিষয়টি নিয়েই এতোদিন চুপ থেকেছেন তিনি। তাই অনেকেই বলছেন, এ দেশে মেয়েদের সামজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না-পারলে, একটু উঁচু ক্লাসে ওঠার পরে অনেক পরিবারে মেয়েদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতায় দাঁড়ি টানা যাবে না। সরকারি ভাবে বিয়ের বয়স বাড়ানোর থেকে বরং এ দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
স্বাধীনতার পর দেশে ১৯৭৮ সাল থেকে মেয়েদের বিবাহের নূন্যতম বয়স ১৫ থেকে বাড়িয়ে নির্ধারিত হয়েছিল ১৮ বছর এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ২১ বছর। এবার এই নিয়মের বদল হবে বলে জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।