দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: করোনা ভাইরাস অতিমারির প্রভাবে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, সকলেই হন্যে হয়ে খুঁজছেন সামান্য উপার্জনের ঠিকানা। যতটুকু খরচ না করলে বেঁচে থাকা যায়, তার থেকে বেশি খরচ করতে চাইছেন না কেউ। অনেকেই বাড়ি থেকে কাজ করছেন, সেই কারণে বাইরের খাবার খেতে হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে পারে পৃথিবী, এমনটা মনে করছে রাষ্ট্রসংঘ।
রাষ্ট্রসংঘের হিসেব অনুযায়ী ২০২০ সালে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়তে পারেন। খাদ্যপ সংকট মানে আয় এর সমস্যা থেকে উদ্ভূত কদধ্য সংকট। আর এই পরিস্থিতিতে নিজেদের রোজকার আয়ের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে এক অভিনব পদ্ধতি চালু করেছে দিল্লির একটি খাবার হোটেল। সেখানে ‘একটি থালি’ অর্থাত্ একবেলার খাবার পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ‘এক টাকার’ বিনিময়ে।
এই অভিনব ভাবনার দোকানটি রয়েছে দিল্লির শিব মন্দির অঞ্চলে। নাম ‘শ্যাম রসই’। এই দোকানের মূল নীতি ‘মাত্র এক টাকা’র বিনিময়ে মানুষের হাতে দুপুরের খাবার তুলে দেওয়া। সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এই খাবার পাওয়া যায়। এই দোকানের মালিক প্রবীন কুমার জানিয়েছেন, গত দু মাস ধরে তিনি অভুক্ত সাধারণ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্যই এই পরিকল্পনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন প্রতিদিন প্রায় দু’হাজার মানুষের খাবার এখান থেকে যায়। তার মধ্যে এক হাজার মানুষ নিয়মিত দোকানে খেতে আসেন, বাকি এক হাজার মানুষকে বিভিন্নভাবে পার্সেল করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য এই দোকান একটি বন্ধ কারখানার খালি জমিতে তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ী রঞ্জিত সিং প্রবীন কুমারের এই উদার ভাবনাকে সাকার করার জন্যে বিনামূল্যে এই জমি দিয়েছেন দোকান করার জন্য। কী কী থাকে এই থালিতে? সাধারণত ভাত, রুটি, পনির, সোয়াবিন, হালুয়া, এছাড়া সকালবেলা পাওয়া যায় ১ টাকার চা-ও। এখানে কাজ করেন মোট ছ’জন কর্মী, যাঁদের দৈনিক বেতনের পরিমাণ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যা বিক্রি হয় তার উপর নির্ভর করে দেওয়া হয় এই বেতন। এছাড়া স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীরাও এগিয়ে এসে সাহায্য করেন।


প্রথমে দৈনিক ১০ টাকায় এই খাবারের প্রথা চালু করেছিলেন প্রবীণ কুমার। তারপর আরও বেশি মানুষকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘এক টাকা’র বিনিময়ে থালি বিক্রি শুরু করেন তাঁরা। দোকানের মালিক জানিয়েছেন, ‘আমরা এই হোটেল চালানোর জন্যে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পাই। কয়েকদিন আগে একজন বৃদ্ধ মানুষ এসে আমাদের আমাদের হাতে তার রেশন তুলে দিয়েছেন। যেখানে গম, চাল ইত্যাদি রয়েছে। এত সাহায্যের জন্যই আমরা দু’মাস ধরে একাজ চালিয়ে যেতে পারছি। ডিজিটাল গেটওয়ের মাধ্যমেও আমাদের কাছে সাধারণ মানুষ অর্থ তুলে দেন। এখনো আমাদের হাতে যা ফান্ড আছে তাতে আমরা আরও সাত দিন এই ‘এক টাকা’র বিনিময়ে খাবার দেওয়ার পরিষেবা চালিয়ে যেতে পারবো।’