দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: কলকাতা পুলিশকে কার্যত ধমক দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত আজ জানিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরকারের সমালোচনা করলেই,এফআইআর দায়ের কওয়ারা যাবে না। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ মতে অকারণে এফআইআর করে, সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করছে কলকাতা পুলিশ।
উল্লেখ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে; এই রাজ্যে অনেককেই পুলিশি হেনস্থার শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে বিরোধী মত প্রকাশ করে; রাজ্য সরকার বা শাসকদলের সমালোচনা করে; কোনও পোস্ট করলেই পুলিশ এফআইআর (FIR) করে তাঁদের গ্রেফতার করছে। সাম্প্রতিক অতীতে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। এই সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত; এদিন কলকাতা পুলিশকে কড়া ধমক দিল।
বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার এক মামলার শুনানিতে, কলকাতা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে; এভাবে তুচ্ছ কারণে পুলিশ যদি সাধারণ মানুষকে সমন পাঠিয়ে; হেনস্থা করা শুরু করে, তাহলে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা রক্ষা করতে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতেই হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনা করলে কাউকে হেনস্থা করা যায় না। আদালত জানিয়েছে, সরকারের সমালোচনা করে কিছু পোস্ট করলেই; তা FIR করার মতো ধর্তব্যযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হয় না।
প্রসঙ্গত, লকডাউনের প্রথম দিকে, কলকাতার রাজাবাজারের লকডাউন অমান্য করার; একটি ভিডিও পোস্ট করেন রোশনি বিশ্বাস নামে এক মহিলা। আদতে দিল্লির বাসিন্দা ওই মহিলা সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও পোস্ট করে পুলিশের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এরপরই কলকাতা পুলিশের তরফে গত ১৩ মে বালিগঞ্জ থানায় এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়। পাশাপাশি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠানো হয়। রোশনি দেবীও এই ইস্যুতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট তাঁকে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে; সহযোগিতার নির্দেশ দেয়।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রোশনি বিশ্বাস। এই মামলাতেই, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ; পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কলকাতা পুলিশকে কড়া ভর্ত্সনা করেছে। বিচারপতিদের বক্তব্য, তুচ্ছ কারণে পুলিশ যদি সাধারণ মানুষকে সমন পাঠিয়ে হেনস্থা করা শুরু করে; তাহলে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা রক্ষা করতে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতেই হবে।
পাশাপাশি বিচারপতিরা এও প্রশ্ন তোলেন যে, যদি বিদেশে বসে কেউ সরকারের বিরোধীতা করে সোশাল মিডিয়ায় সরব হন; তবে কী তাঁকেও সমন পাঠানো হবে কলকাতা বা দিল্লিতে হাজিরা দিতে? এরপরই আদালতের মন্তব্য; এটা একটা ভয়ঙ্কর প্রবণতা। দেশটাকে স্বাধীন থাকতে দিন। উল্লেখ্য এর আগেও রাজ্য সরকারের সমালোচনা করায়; অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মাস কয়েক আগে লকডাউন চলাকালীন; সরকারি হাসপাতালে PPE কিটের বদলে চিকিত্সকদের রেইনকোট দেওয়ায়; রাজ্য সরকারের সমালোচনা করায়; ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল খাঁকে আটক করে এনে সারা রাত থানায় আটকে রাখে পুলিশ। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। এবার সুপ্রিম কোর্টে সারা দেশের সামনে চরম লজ্জায় পড়ল রাজ্যের পুলিশ ও সরকার দুজনেই।