দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো:আজ বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিলো সুপ্রীম কোর্ট। স্ত্রী ও সন্তানরা রক্ষণাবেক্ষণের (খোরপোশ) টাকা পেতে শুরু করবেন আবেদন করার দিন থেকেই। বুধবার এই সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি শেষে এমনটাই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে বিবাহ বিচ্ছিন্নাদের খোরপোশ পাওয়ার ‘সময়’ নির্দিষ্ট হল যা এতদিন পর্যন্ত হিন্দু বিবাহ আইন ও হিন্দু দত্তক ও রক্ষণাবেক্ষণ আইনে সঠিকভাবে উল্লেখ ছিল না।
আজ বুধবার, নাগপুরের বাসিন্দা এক ব্যক্তি যিনি আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ৭ বছর যাবৎ অন্তর্বর্তী খোরপোশ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই মামলার রায় দিতে গিয়েই এই নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের জেরে যে সমস্ত মহিলা বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের হেফাজত ও ভরণপোষণ সংক্রান্ত দীর্ঘ মামলা লড়তে গিয়ে চূড়ান্ত আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাঁরা উপকৃত হবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
আজ সুপ্রীম কোর্টে এই ঐতিহাসিক রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা ও বিচারপতি সুভাষ রেড্ডি বলেন, ‘আর্থিক সমস্যার শিকার হওয়া নির্ভরশীলা স্ত্রীর পক্ষে আদালতে যথাযথ ভাবে মামলা লড়া সম্ভব হয় না। কোনও নির্ভরশীলা স্ত্রী যাতে আর্থিক সংকটের চরম সীমায় না পৌঁছে যান তা রোধ করতে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদালতে আবেদন জানানোর দিন থেকেই এই বাবদ অর্থ পেতে শুরু করবেন।’
এই রায়ের সুবাদে হিন্দু বিবাহ আইন ও হিন্দু দত্তক ও রক্ষণাবেক্ষণ আইনে খোরপোশ দেওয়ার নির্দিষ্ট দিন সম্পর্কে অনুল্লেখ থাকার বিষয়টি আলোচনা করে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ। এতদিন পর্যন্ত আদালত যে দিন রক্ষণাবেক্ষণের আবেদন মঞ্জুর করে, সে দিন থেকেই এই বাবদ অর্থ পেতে শুরু করেন নির্ভরশীল স্ত্রী ও সন্তানরা। একই সঙ্গে নির্ভরশীল স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মায়েদের আদালতের নির্দেশের ৬০ দিনের মধ্যে অর্থ প্রাপ্তি ঘটে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হিন্দু বিবাহ আইনে অন্তর্বর্তী খোরপোশ পাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনের সঙ্গে কোনও সঠিক তথ্য পরিবেশন করা নিয়ে সমস্যা থাকায় পারিবারিক আদালতের পক্ষে অন্তর্বর্তী খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ জারি করায় বাধা তৈরি হয়।
ওই দিন সুপ্রিম বেঞ্চ জানায়, ‘রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত মামলার বিচারে আবেদনকারীকে আগে এই মর্মে কোনও আবেদন করে থাকলে আবেদনকারীকে তার উল্লেখ করতে হবে। এই বিষয়ে একাধিক রায়ের মধ্যে সংঘাত ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে অপরাধ আইনের ১২৫ ধারা, হিন্দু বিবাহ আইন, হিন্দু দত্তক ও রক্ষণাবেক্ষণ আইন, নারীর গার্হস্থ্য নির্যাতন রোধ আইন অথবা স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টে দেওয়া রায়ের মধ্যে সংঘাত ঘটতে পারে।’
সুপ্রিম কোর্টের এই বেঞ্চ আরও জানিয়েছে যে, ‘খোরপোশ আবেদনকারী স্বামী বা স্ত্রী, সামাজিক মিলনের অন্তর্ভুক্ত সঙ্গী, লিভ-ইন সম্পর্ক, সাধারণ বিবাহ আইনের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী খোরপোশের জন্য একটি সামগ্রিক আবেদন করতে হবে। সেই সঙ্গে দিতে হবে এফিডেভিটের মাধ্যমে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির খতিয়ানের ঘোষণাপত্র।’ এই এফিডেভিট দুই পক্ষকেই জমা দিতে হবে।