ছেলে ভালো, বন্ধু খারাপ। অথবা ছেলে আমার হীরের টুকরো। কিন্তু বৌটাই দজ্জাল। তাই এবার আমার ছেলের নতুন বিয়ে দেব। এমন বৌ চাই না। এই তত্ত্বই এবার খাড়া করেছে বিজেপি। বিহারের বিধানসভা ভোটে। মোদি অথবা কোনও রাজ্য বিজেপি নেতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমারের যৌথ জনসভায় আওয়াজ উঠছে , “নীতীশকুমার মুর্দাবাদ” আর “মোদি জিন্দাবাদ।”
বিজেপি চাণক্যনীতির সাম দাম দণ্ড ভেদ সূত্র প্রয়োগ করে জাতপাত, ধর্ম, বর্ণের লাইনে বিভেদ ছড়িয়ে এবারের ভোটের জ্বলন্ত ইস্যুগুলোকে চাপা দিয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই নীতীশের নেতৃত্বে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে ঘোটালার তালিকা পড়ছেন আর ভোট চাইছেন। ভূমিহারদের গড় বরৈয়ায় মেরুকরণ এত তীব্র যে বিজেপির বৃদ্ধ ভোটার থেকে এবারের নতুন ভোটার পর্যন্ত নীতীশের মুণ্ডপাত করে বলেই দিচ্ছেন, “নীতীশের সরকার আর নেই দরকার। তা বলে বিজেপিকে জেডিইউয়ের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না।
মোদি দিল্লিতে যেভাবে চালাচ্ছেন পাটনাতেও সেভাবেই চালাবেন। শুধু নীতীশকুমারকে হঠিয়ে অন্য কেউ আসবেন। লোকজনশক্তির চিরাগ পাসোয়ানের দিকে নজর রাখুন। রামবিলাসের ছেলে। তিনি মোদির হাত শক্ত করতে নীতীশ হঠাও নারা দিয়েছেন। নয়া ভোটারের মতে, বিহারে জোটের ফর্মাটাই এবার বদলে দেবে আমরা জনতা। এজন্যই তো জোট থেকে বেরিয়ে রামবিলাসের দল নীতীশ কুমারের পার্টির সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে।” বলা বাহুল্য এই বিরাট রণনীতির রচয়িতা প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।
নীতীশকুমারের পাশে দাঁড়িয়ে প্রচার করতে করতেই ঘুঁটি সাজিয়েছে বিজেপি। আর উচ্চবর্ণের ভোটের উচ্চাশায় নিচুতলার ভোট খুইয়ে নীতীশ এখন ঘরেও নহি পারেও নহি দশায় কার্যত ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজের শেষ ইনিংসের ব্যাটিং করছেন কোনওমতে। তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে। সব সঙ্গীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া। বিহারের ১৫ বছরের মুখ্যমন্ত্রী। যাকে সুভদ্র সুশাসক সুরাজনীতিক বলে লালুর বিরুদ্ধে ঢাল করে বিজেপি বকলমে সত্তাসুখ ভোগ করেছে, সেই মসনদেই টিকে থাকার অমোঘ তাগিদে সেই মুখ্যমন্ত্রীকেই এক লহমায় বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।
ক্লিক করে দেখুন মোদী কী বলছে
বিহারে ক্ষমতাসীন থাকার দরুণ জনসমর্থন ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচার এটাই রাস্তা। মুখ্যমন্ত্রীর কাঁধে চাপিয়ে দাও ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর বা সরকারের ভুলভ্রান্তি বা কুশাসনের দায়। তাহলেই নিষ্কলঙ্ক গলবস্ত্র হয়ে ভোটভিক্ষায় সুবিধে। যত দোষ নীতীশ নামক নন্দ ঘোষ বলেই বৈতরণী পেরতে মরিয়া বিজেপি। যদিও বিপরীতে চোরাস্রোত টের পাচ্ছে বলেই তেজস্বীর ভূত দেখছে গেরুয়া শিবিরের তিলক, তরাজু, কলম, তলওয়ার। শুধু বিজেপিরই যে ক’জন নেতানেত্রী আছেন তাঁরাও হালে পানি পাননি। শুধু উচ্চবর্ণের সংহতির মন্ত্র তাদের মুখে। কিন্তু তাদের কোনও ক্যারিশমা নেই। বিজেপির জনসাধারণের দাবি শুধু মোদির মিটিং।


আর এর ঠিক উল্টোদিকে তেজস্বীর তেজস্ক্রিয় জনসভায় নেমেছে জনশৈলাব। এই জনজোয়ারের উৎসমুখে লালুপুত্রের পাশে দাঁড়িয়ে কানহাইয়া কুমার, সীতারাম ইয়েচুরি, দীপংকর ভট্টাচার্য, রাহুল গান্ধী। উচ্চবর্ণের বড়াই ভাঙতে বিহারে এবার গরিষ্ঠ অংশের নিচুতলার মানুষের সঙ্গে হাজির লঘিষ্ঠ হলেও বেশ কিছু উচ্চবর্ণের মানুষ এবং সংখ্যালঘুরা। হেমন্ত বাতাসে ভাইরাস রুখতে ভ্যাকসিনের জীবনদায়ী নির্যাস। পরিবর্তনের পরিচিত সুগন্ধ।