দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: গতকাল অর্থাত ১০’ই নভেম্বর দেশের মানুষের কাছে বিহার নির্বাচন ‘আইপিএল’ ফাইনালের রোমাঞ্চকেও হার মানিয়েছে। মোদী-শাহ-নিতীশের এনডিএ-র বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে মহাজোট। সকল থেকেই মহাজোট এগিয়ে থাকলেও, দুপুরের পরই NDA অতিক্রম করে ম্যাজিক ফিগার। এরপর আবার সন্ধ্যে’র দিকে মহাজোট কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও শেষ রক্ষা হল না। অবশেষে ১২৫ টি আসন পেয়ে অবশেষে বিহার জয় এনডিএ’র। তবে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে আরজেডি, যা বিহার রাজনীতিতে ‘তেজস্বীর’ মহা তেজের উত্থান বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। RJD বা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ঝুলিতে রয়েছে মোট ৭৫ টি আসন।
এই জয়ের আনন্দ ভাগ করে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গভীর রাতে টুইট করে লেখেন ” বিহারের জনতা জনার্দনের আশীর্বাদে গনতন্ত্র আর একবার বিজয় পেয়েছে। NDA এর সাথে হাতে হাত মিলয়ে বিজেপি বিহারের সব কর্মকর্তারা যেভাবে নিরলস ও সংকল্প নিয়ে লড়াই করেছেন তা অভিভূত করে দেওয়ার মতই। আমি সকল কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সেই সাথে বিহারের জনগণের প্রতিও হৃদয় থেকে অভিনন্দন প্রকাশ করছি”
এবার দেখে নেওয়া যাক এই নির্বাচনে বাকি দলগুলির সামগ্রিক পরিস্থিতি। বিরোধী মহাজোটে ভালো ফল করেছে বাম দলেরাও। এবার বাম শিবিরে ছিল তিন বাম দল সিপিআই(এম-এল), সিপিআই ও সিপিআইএম। মহাজোটের পক্ষ থেকে ২৯ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বামেরা। তাঁর মধ্যে জয় এসেছে ১৬ টিতে। অর্থাত্ অর্ধেকের বেশি আসনেই জয়ী হয়েছে বাম শিবির। যা দীর্ঘ দশ বছর পড়ে আবার বিহারের মাটিতে বামেদের পুনর্জন্ম বলা যেতে পারে।
কিন্তু এই নির্বাচনে আরও একবার সামনে এল কংগ্রেসের কঙ্কালসার অবস্থা। কংগ্রেস যে নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে সেই সাথে পরিবার তন্ত্র যে আসলে ফ্লপ শো; সেই ধারা বিজরেও বজায় থাকলো। অধিকাংশ রাজনীতিকের মন্তব্য, কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়েই বিহারের মসনদে বসার স্বপ্ন হাতছাড়া হল তেজস্বীর। এবারের বিহার নির্বাচনে কংগ্রেস লড়েছিল ৭০ টি আসনে। কিন্তু সেখান থেকে জয় তুলে আনতে পেরেছে মাত্র ১৯ টিতে। যা ৩০% এর ও কম আসন এবং যথেষ্টই ধাক্কা দিয়েছে মহাজোটকে। যদি কংগ্রেস আর ৮-১০ টি আসন বেশি তুলে নিতে পারত, তবে নিঃসন্দেহে ওপরে উঠে যেত মহাজোট। সেক্ষেত্রে চাপে পড়ে যেত এনডিএ। এবারের বিহার নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে মহাজোটের পক্ষ থেকে আসনে প্রার্থী দেওয়া ও সেখন থেকে জয় তুলে আনার বিচারে সবচেয়ে করুন পরিস্থিতি হাত শিবিরেরই। মহাজোটকে এর মাশুল গুনতে হলো।
উল্লেখ্য, গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়ে বুধবার রাত পার করে অবশেষে ভোরের দিকে এসে শেষ হয় গণনা। মোট ২৪৩ টি আসনের গণনা শেষ হয় বুধবার ভোরের কিছুটা আগে। দেখা যায় এনডিএ-র ঝুলিতে রয়েছে মোট ১২৫ টি আসন। এরমধ্যে বিজেপি-র রয়েছে ৭৪ টি আসন, জেডিইউ-র ৪৩ টি, ৪ টি ও এইচএএম ৪ টি আসনে জয়ী। অন্যদিকে মহাজোট জয়ী ১১০ টি আসনে। এর মধ্যে আরজেডি পেয়েছে ৭৫ টি, কংগ্রেস ১৯ টি, বামেরা ১৬টি আসন পেয়েছে। এছাড়া আসাউদ্দিন ওয়াইসির দল পেয়েছে ৫ টি আসন, বিএসপি-র খাতায় আসন সংখ্যা ১, এলজিপি ১ টি ও নির্দল প্রার্থী পেয়েছে ১ টি আসন।
এবার একটি ময়নাতদন্ত করে দেখে নেওয়া যাক এই ভরাডুবির কী করোন থাকতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যাবে নির্বাচনের আগে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিহার সফরে গিয়েছিলেন কিন্তু কংগ্রেসের র্যালি তেমন ভাবে দাগ কাটেনি বিহারবাসির মনে। আর তা এই ফলাফলেই স্পষ্ট। তবে লালু প্রসাদ যাদবের অনুপস্থিতিতেও তেজস্বী যেভাবে বর্ষীয়ন ও দুঁদে রাজনীতিকদের বেগ দিলেন, লড়লেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে ভবিষ্যতে ‘তেজস্বী’ বিহারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী’র মুখ।