26 C
Kolkata
Saturday, April 1, 2023
More

    ১২ দফা আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণায় ‘মুখরিত’ আত্মনির্ভর ভারত অভিযান ৩.০

    দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ আর দুদিন বাদেই দীপাবলি। আর এই উত্সবের মুখে নতুন আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই আর্থিক প্যাকেজ আত্মনির্ভর ভারত অভিযান ৩.০ নামে পরিচিত। এই প্যাকেজে মোট ১২ টি ঘোষণা করা হলো-

    ১) সংগঠিত ক্ষেত্রে রোজগার নিশ্চিত করার জন্য ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ‘আত্মনির্ভর রোজগার যোজনা’-র ঘোষণা করা হলো। যে কর্মীরা ইপিএফওয়ের (EPFO)আওতায় ছিলেন না এবং ১ লা মার্চ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের যে সংস্থাগুলি নিয়োগ করবে, তারা এই সুবিধা পাবে। তবে সেই সংস্থাগুলিকে ইপিএফওয়ের কাছে নথিভুক্ত থাকতে হবে। ১ লা অক্টোবর থেকে যে সংস্থাগুলি এইরকম কর্মীদের নিয়োগ করেছে বা করছে, তাঁরা আগামী দু’বছরের জন্য সেই সুবিধা পাবে। তবে এক্ষেত্রে কর্মীদের মাসিক বেতন ১৫,০০০ টাকার কম হতে হবে।

    ২) এই কোম্পানী গুলিকে দুটি শর্ত মানতে হবে। প্রথমত, যে সংস্থার ৫০ জন কর্মী আছেন, তাঁদের ন্যূনতম দু’জন নতুন কর্মী থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, ৫০ জনের বেশি কর্মী থাকলে তাহলে নতুন কর্মীর সংখ্যা হতে হবে ন্যূনতম পাঁচজন। এই যোজনা ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চালু থাকবে।

    ৩) এই নতুন কর্মীদের নিয়োগের কারণে দু’বছরের জন্য ভর্তুকি দেবে কেন্দ্র। যে সংস্থাগুলিতে ১,০০০ জন পর্যন্ত কর্মী আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ অর্থ দিতে হবে কর্মীদের। ১২ শতাংশ দেবে সংস্থা। আর এই ২৪ শতাংশ টাকা কেন্দ্র ভর্তুকি দেবে। যে সংস্থাগুলিতে ১,০০০ জনের বেশি কর্মী আছেন, তাঁদের শুধু কর্মীদের ১২ শতাংশের ভর্তুকি দেবে কেন্দ্র। যাতে সংস্থাগুলির উপর কম বোঝা হয়। তবে এই সুবিধা পেতে শুধু আধারের সঙ্গে ইপিএফও অ্যাকাউন্টএর লিঙ্ক থাকতে হবে।

    ৪) উল্লেখ্য, এর আগের ঘোষণাতে আত্মনির্ভর ভারতের আওতায় ক্রেডিট লাইনের উল্লেখ করা হয়েছিল, তা বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র, ছোটো ও মাঝারি শিল্পের জন্য সেই ঋণের ঘোষণা করা হয়েছিল, তা বাণিজ্য সংস্থা, ব্যবসার জন্য ব্যক্তিগত ঋণ এবং মুদ্রা ঋণ গ্রাহকদেরও সেই ক্রেডিট লাইনেরআওতায় আনা হয়েছিল।

    ৫) কামাথ কমিটির চিহ্নিত ২৬ টি ক্ষেত্র এবং স্বাস্থ্য খাতের সংস্থাগুলির জন্য অর্থ সাহায্য করা হবে। তাতে নির্ধারিত হারে সুদের ব্যবস্থা থাকবে।

    ৬) লকডাউনের আগেই তিনটি ক্ষেত্রকে উৎপাদন সংক্রান্ত বিশেষ উৎসাহ বা ইনসেনটিভ প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। বুধবার আরও ১০ টি ক্ষেত্রকে যুক্ত করা হয়েছে। ১.৪৬ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তার ফলে ঘরোয়া উৎপাদন চাঙ্গা হবে। তাতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী।

    ৭) অত্যাধুনিক রাসায়নিক সেল ব্যাটারি (১৮,১০০ কোটি টাকা), বৈদ্যুতিন বা প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম (৫,০০০ কোটি), অটোমোবাইল ও গাড়ির সরঞ্জাম (৫৭,০৪২ কোটি টাকা), ওষুধ (১৫,০০০ কোটি টাকা), টেলিকম এবং নেটওয়ার্কিং পণ্য (১২,৯১৫ কোটি টাকা), বস্ত্র (১০,৬৮৩ কোটি টাকা), খাদ্যদ্রব্য (১০,৯০০ কোটি টাকা), উচ্চক্ষমতার সৌরযন্ত্র (৪,৫০০ কোটি টাকা), শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র-সহ বিভিন্ন পণ্য (৬,২৩৮ কোটি টাকা) এবং বিশেষ ইস্পাত (৬,৩২২ কোটি টাকা) ক্ষেত্রে সেই প্যাকেজের ঘোষণা করা হয়েছে।

    ৮) নির্মাণ এবং পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে অনেক সময় সংস্থাগুলিকে বেশি ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হত। এবার তা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ইএমডি (EMD) দিতে হবে না। পরিবর্তে কার্যত ‘সিকিউরিটি ডিক্ল্যারেশন’-এর দিতে হবে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেটির মেয়াদ থাকবে।

    ৯) আবাসন ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরি এবং বাড়ি কিনবেন যাঁরা, তাঁদের জন্য বড় ঘোষণা করা হল আজ। আয়কর আইন অনুযায়ী, সার্কেল রেট এবং এগ্রিমেন্ট ভ্যালুর মধ্যে ১০ শতাংশ পার্থক্য ছিল। কিন্তু আসল দাম তার থেকে কম হত। এবার তা বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। তার ফলে লাভবান হবেন মধ্যবিত্তরা। চাঙ্গা হবে আবাসন ক্ষেত্রও।

    ১০) ভর্তুকিযুক্ত সারের ক্ষেত্রে ৬৫,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করা হচ্ছে।

    ১১) পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ১১৬ জেলায় প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা চলছে। সেজন্য ইতিমধ্যে ৩৭,৫৪৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে ২৫১ কোটি মানুষের কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্র যাতে সমস্যার মুখে না পড়ে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার আওতায় আরও ১০,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০০ দিনের কাজের জন্য এবারের বাজেটে ৬১,৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পরে আরও ৪০,০০০ কোটি টাকা দেখা হয়েছিল।

    ১২) রফতানি চাঙ্গা করতে এগজিম ব্যাঙ্ককে আরও ৩,০০০ কোটি টাকার লাইন অফ ক্রেডিট হিসেবে দেওয়া হল। মূলধনী এবং শিল্প খাতে ব্যয়ের জন্য অতিরিক্ত ১০,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। তার ফলে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, শিল্পের পরিকাঠামো ভারতেই তৈরি হয়। করোনাভাইরাস টিকা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে যাবে। পাবে কেন্দ্রীয় সরকারের জৈবপ্রযুক্তি দফতর। কোভিড সুরক্ষা মিশনের আওতায় তা দেওয়া হবে।

    আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের আওতায় এখনও পর্যন্ত যে পরিমাণ আর্থিক প্যাকেজের (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়ার পদক্ষেপ নিয়ে) ঘোষণা করা হয়েছে, তা জিডিপির ১৫ %। আর শুধু কেন্দ্রের ধরলে তা জিডিপির ৯%। সবমিলিয়ে ২,৯৮৭,৬৪১ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করা হয়েছে।

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    জানেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ কোনটি ? কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : পার ক্যাপিটা জিডিপি, জনস্বাস্থ্য, আয়ু, সামাজিক ন্যায়, যাপনের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিহীনতা-- এই একক গুলির...

    কেন্দীয় পুলিশে কয়েক হাজার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর। কারণ, কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা...

    আসন্ন IPL-এ কোন দলের অধিনায়ক কে হলেন ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কলকাতা নাইট রাইডার্স সোমবার তাদের দলের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি আইপিএল দলের...

    বাড়ল প্যান ও আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চলতি মাসের মধ্যেই প্যান ও আধার লিংক করিয়ে...

    মোদীর লক্ষ্য ৪০০ পার ! বঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ২৫

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : দিল্লি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। আব কি বার ৪০০ পার। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা...