দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ বিহারের এবারের নির্বাচনে ভোট দান প্রক্রিয়া ও গণনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন যতটা স্বস্তিতে ঠিক ততটাই অস্বস্তিতে বা বলা ভালো প্রবল চাপে রয়েছেন নীতীশ কুমার। কারণ জোট ভিন্ন তাঁর দল এবার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে প্রতি মুহর্তে তাঁকে দ্বারস্থ হতে হবে বিজেপির। ফলত এক কথায় এবার নিতীশের সরকার ‘পুতুল সরকার’ ভিন্ন আর কিছুই নয়। এখনো অবধি যা খবর তাতে বিজেপি চাইছে তিনিই হোন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী কাল থেকে এই সরকারের গঠনের সূচি তৈরি হবে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু নীতীশজির ভাব গতিক নাকি ভাল ঠেকছে না!
এবার বিহার বিধানসভার নির্বাচনে ৫টি দলের চমকপ্রদ উন্নতি হয়েছে। যেমন লালু প্রসাদ জেলে থাকলেও সবথেকে বেশি ৭৫টি আসন পেয়েছে বিরোধী মহাজোটের তেজস্বী পরিচালিত আরজেডি (RJD)। আর ঠিক এর পরেই আছে নীতীশ-বিজেপি জোট বা এনডিএ শিবিরের বিজেপি। তাদের দখলে ৭৪টি আসন। আর ৪৩টি আসন পেয়ে তৃতীয় হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ (JDU)। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে ১২টি আসন পেয়ে চমক দিয়েছে সিপিআই(এম-এল)। সবশেষে ওয়েইসির এআইএমআইএম (MIM) । এদের দখলে ৫টি আসন।
এই চিত্র থেকে পরিস্কার যে আসাদুদ্দিন ওয়েইসি ঐ ৫ টি আসন দখলের পাশাপাশি অন্যান্য আসনেও ভোট কেটে বিজেপির জয় কে সুগম করেছেন। আর অন্যদিকে খুব উল্লেখযোগ্য না হলেও গুপ্ত ছোড়ার আঘাতের মোট লোজপার চিরাগ পাসোয়ানের জয় করা একটি আসন নীতীশ কুমারের দলকে মোক্ষম কামড় দিয়েছে।
সুতরাং সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে ২৪০টি আসনের মধ্যে ১২২টি আসন দরকার সরকার গঠনের জন্য। এনডিএ পেয়েছে ১২৫টি। গরিষ্ঠতার থেকে মাত্র তিনটি আসন বেশি। আর মহাজোট দখল করেছে ১১০টি আসন। অন্যান্যদের দখলে আছে ৭টি আসন।


বিশ্লেষকদের মনে করছেন ,সরকার চালাতে গিয়ে মাত্র তিনটি আসনের গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সমস্যায় পড়তে পারে এনডিএ শিবির। কারণ, বিহারে এবার বিরোধীরা প্রবল শক্তিশালী, বিশেষ করে তেজস্বী তাঁর হার এখনো মেনে নিতে চাইছে না। সেক্ষেত্রে, যদি কিছু কারচুপি বা অন্যান্য অভিযোগ প্রমাণিত না হয় তাহলে সে বিহারের সরকার কে যথেষ্ট বেগের মধ্যেই রাখবে। সেক্ষেত্রে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে অন্যান্যদের দখলে থাকা ৭ জনকে নিজ শিবিরে আনতে মরিয়া হবেই বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের অপছন্দের কারণ হলেও বিজেপি বিষয়টিকে পাত্তা দেবে বলে মনে হয় না।
বিজেপি প্রথম থেকেই বলে আসছে নীতীশ কুমারের সরকার সুশাসন দেবেই আর এখানেই টুইস্ট। বিশেষজ্ঞদের ধারণা নীতীশ কুমার কে সামনে রেখেই বিভিন্ন এজেন্ডা পাশ করাবে বিজেপি। সেই সময়ে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির শীর্ষ নেতা সুশীল মোদীর গুরুত্ব বাড়বে । কিন্তু বিজেপির এখন মাথাব্যথা নীতীশ কুমারের নিরবতা। কারণ নীতীশ কুমার আগেই হাত তুলে রেখেছেন যে তিনি আর এই গুরু দ্বায়িত্ব নিতে চান না। তিনি বলেওছেন, আমি মন্ত্রী হতে চাই না।
তাই এই ক্ষমতার জাগলিং এ প্রাথমিকভাবে নীতীশকেই সামনে রাখবে বিজেপি। আর প্রবল চাপের মুখে নীতীশ কুর্সি ছাড়বেনই। তখন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন বিজেপির সুশীল মোদী। আর বিজেপির এই পরিকল্পনার মধ্যেই বিহারে বিধায়ক নিয়ে ঘোড়া কেনা বেচার অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। যেমনটি আমরা কর্ণাটকের ক্ষেত্রেও দেখেছিলাম। আর সেই বিষয়টা উত্সবের পরে তা আরও প্রকট হবে এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।