33 C
Kolkata
Sunday, April 2, 2023
More

    ভাই ফোঁটা, ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে ভিন্ন ধর্মকে আপন করার ইতিহাস- সৌরদীপ চক্রবর্তী

    উৎসব বিষয় টা যেমন মানুষকে একটা ভালোবাসার বাসভূমিতে নিয়ে আসে আবার উৎসব ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে ভিন্ন ধর্মকে একটা অসীম আনন্দের পটভূমিতে নিয়ে আসে। ভাইফোঁটা নির্দিষ্ট ধর্মের উৎসব হলেও সকল ধর্মের কিছু কিছু মানুষ ধর্মের ছুৎমার্গ সরিয়ে রেখে এই উৎসব কে আপন করে নেয়।

    ভাইফোঁটার আদলটা আসলে ধর্মকেই স্থাপন করে। এর পেছনে নানা ইতিহাস। বাঙালীরা বাংলা বছরের কার্তিক মাসের অমাবস্যার পরে শুক্ল পক্ষে দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা বা ভাতৃদ্বিতীয়া পালন করেন। বোন বা দিদি ফোঁটা দেয় ভাই বা দাদা কে তাদের মঙ্গল কামনায়। সঙ্গে থাকে এক ভালোবাসার ছড়া

    ” ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
    যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা,
    যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
    আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা “….

    পুরাণে কথিত আছে যে সূর্য এবং সংজ্ঞার কন্যা যমুনার সাথে বলরামের বিয়ে হয় কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে, এই দিনের আগে যমুনা তার ভাই অর্থাৎ সূর্য এবং সংজ্ঞার দুই পুত্র যম এবং মনুকে তাদের কল্যাণ কামনায় ফোঁটা দেন। সেই থেকেই হয়তো ভাইফোঁটার সুত্রপাত। ভাইফোঁটাকে ‘ যমদ্বিতীয়া ‘ ও বলা হয়।

    আর একটা বিষয় হয়তো সবাই জানেন যে জৈন ধর্মের প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পরে তাঁর অন্যতম শিষ্য এবং সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন শোকে বিহ্বল হয়ে পরেন এবং খাওয়াদাওয়া ত্যাগ করেন। এই অবস্থায় তাঁর বোন অনসূয়া নিজের বাড়িতে দাদা কে নিয়ে গিয়ে কপালে রাজতিলক পড়িয়ে তাকে খাবার খাওয়াতে সক্ষম হন। চতুর্দশ শতাব্দীতে এক আচার্য পণ্ডিত সর্বানন্দসুরী নামে তাঁর ‘ দীপোৎসবকল্প ‘ পুঁথিতে বর্ণিত এই ইতিহাস ও কাহিনী থেকে ভাইফোঁটার সূচনা হয়।

    কিছু কিছু জায়গায় একটা মত প্রচলন আছে, ভূত চতুর্দশীর দিন নরকাসুরকে বধ করে শ্রীকৃষ্ণ দ্বিতীয়ার দিন ফিরে আসার পর উচ্ছসিত হয়ে বোন সুভদ্রা ভাই এর কপালে বিজয়ীর তিলক পরিয়ে দেন, সেই থেকে ভাইফোঁটার সৃষ্টি।

    অপর একটি সূত্রে জানা যায় যে একদা প্রবল পরাক্রমশালী বলির হাতে বিষ্ণু পাতালে বন্দি হন। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন স্বয়ং লক্ষ্মী। তিনি বলিকে ভাই হিসেবে স্বীকার করেন। সেই উপলক্ষে তাঁর কপালে তিলক এঁকে দেন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তখন স্বীকার করে বলি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী ভগবান বিষ্ণুকে চেয়ে নেন। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা।

    শুধু পশ্চিম বঙ্গ নয়, পাশের দেশ বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভাইফোঁটার চল আছে। আমরা বাঙালীরা ভাইফোঁটা বললেও, মহারাষ্ট্র – কর্ণাটক – গুজরাট – গোয়ায় বলা হয় ‘ ভাইবিজ ‘, মহারাষ্ট্রে মেয়েদের ভাইবিজ পালন অবশ্যকর্তব্য। এমনকি, যেসব মেয়েদের ভাই নেই, তাঁদেরও চন্দ্র দেবতাকে ভাই মনে করে ভাইবিজ পালন করতে হয়। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত ‘ভাইটিকা’ নামে। সেখানে বিজয়াদশমীর পর এটিই সবচেয়ে বড় উৎসব। উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে বলা হয় ‘ ভাইদুজ ‘। ভাইফোঁটা ধর্মীয় উৎসব হলেও বর্তমানে সামাজিক উৎসব বলেই পালন করা হয়।

    Related Posts

    Comments

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    সেরা পছন্দ

    জানেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ কোনটি ? কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : পার ক্যাপিটা জিডিপি, জনস্বাস্থ্য, আয়ু, সামাজিক ন্যায়, যাপনের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিহীনতা-- এই একক গুলির...

    কেন্দীয় পুলিশে কয়েক হাজার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ !

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : চাকরিপ্রার্থীদের জন্য সুখবর। কারণ, কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করল সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা...

    আসন্ন IPL-এ কোন দলের অধিনায়ক কে হলেন ?

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কলকাতা নাইট রাইডার্স সোমবার তাদের দলের অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি আইপিএল দলের...

    বাড়ল প্যান ও আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা ! সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : কেন্দ্রের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, চলতি মাসের মধ্যেই প্যান ও আধার লিংক করিয়ে...

    মোদীর লক্ষ্য ৪০০ পার ! বঙ্গে বিজেপির লক্ষ্য ২৫

    দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো : দিল্লি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে। আব কি বার ৪০০ পার। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে সারা...