দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: সরকারি কর্মী থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে নাহলে বাংলায় অনুপ মাঝি ওরফে লালার ‘কয়লা সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলতে পারতেন না। গোপন সূত্রে এমনটাই জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। নিখুঁত হিসেবকষে এই গোটা প্রক্রিয়া চলত। মাসের নির্দিষ্ট সময়ে টাকার ভাগ এইসব সাহায্যকারীদের কাছে পৌঁছে দিত লালা নিজেই। তবে এই চক্রের নেপথ্য কোনও আঞ্চলিক বা জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের যোগ রয়েছে কি না, সেটাও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা খতিয়ে দেখছে।
আজ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড সহ উত্তরপ্রদেশের ৪২ টি যায়গায় প্রায় ৩০০ জন গোয়েন্দা একই সময়ে তল্লাশি অভিযান চালায়। বাজেয়াপ্ত করে বহু নথি। আজ শনিবার কলকাতা, আসানসোল, রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর, সল্টলেক সেক্টর ওয়ান-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে তল্লাশি অভিযানে নামে সিবিআই। কলকাতায় বেপাত্তা লালার ফ্ল্যাট সিল করে দেওয়া হয়েছে। আজ সল্টলেকে প্রায় ৭ ঘন্টা তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। একইভাবে পুরুলিয়ার লালার বাড়িতেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা হানা দিয়েছেন।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে অনেক বছর ধরেই চলছে কয়লা পাচার চক্র। তবে গোয়েন্দাদের দাবি কয়লা পাচারের মূল উত্স ছিল খোদ ইস্টার্ন কোলভিল্ড লিমিটেড (ইসিএল)-এর বিভিন্ন খনি এবং অফিস। তবে প্রথম কয়লা-দুর্নীতির আঁচ পায় কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স ডিপার্টমেন্ট এবং ওই সংস্থারই টাস্ক ফোর্স। সূত্রের খবর ইসিএল-এর খনিগুলোতে বেআইনি ভাবে কয়লা খনন (মাইনিং) করা হত সেখানকার কর্মীদেরই মদতেই। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং সিআইএসএফ-এর কর্মীদের মদতে লালার লোকেরা পাচার করত সেসব কয়লা। রেলকর্মীদের একাংশও এই কয়লা পাচারের সাথে যুক্ত, এ ক’মাসের সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।


উল্লেখ্য গত ৭’ই আগস্ট পাণ্ডবেশ্বরের রেলওয়ে সাইডিং এলাকায় প্রায় ৯ মেট্রিক টন কয়লা চুরি যাওয়ার এই ঘটনা সামনে আসে। ওই ঘটনার সূত্র ধরে এগতেই জানা যায় যে একই ভাবে অন্যান্য রেলওয়ের সাইডিং-এও চুরির ঘটনা ঘটেছে। এবার তদন্তে নামে আয়কর দফতরও। বিভিন্ন জিএসটি-সহ নানা নথিপত্রে প্রমাণ আরও জোরাল হয়। বোঝা যায় এর শিকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গিয়েছে। অত:পর আসরে নামে সিবিআই। সামনে আসে বিহার, উত্তরপরদেশ আর ঝাড়খণ্ডেও এই ‘গ্যাং অব লালা’-এর চক্র ভালভাবেই সক্রিয় রয়েছে।
অন্যদিকে তল্লাশি অভিযানের আঁচ পেতেই গা ঢাকা দেয় লালা উরফ অনুপ মাঝি। তদন্তে নেমে তল্লাশি চালানো হতেই এই চক্রের সাথে যুক্ত বেশ কয়েকজনের নাম সামনে আসে। ইতিমধ্যে কুনস্তরিয়া ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার, সিকিউরিটি ইন্সপেক্টরের এবং কাজোরিয়া ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার, আসানসোলের চিফ সিকিরিটি ম্যানেজার, কাজোরিয়ার সিকিউরিটি ইনচার্জ এবং লালার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ১২০বি, ৪০৯ এবং পিসি অ্যাক্ট ১৩(২) আর/ডব্লু, ১৩ (১),(এ)-তে এফআইআর করেছে সিবিআই। এফআইআর-এ ইসিএল, সিআইএসএফ, ভারতীয় রেল এবং অন্যান্য সরকারি দফতরের ব্যক্তিদেরও নাম রয়েছে।
এদিকে শনিবার সিবিআই তল্লাশির সময় অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন ইসিএল-এর নিরাপত্তা আধিকারিক ধনঞ্জয় রায়। আজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ইসিএল-এর নিরাপত্তা আধিকারিক জামুড়িয়ার বাসিন্দা ধনঞ্জয়ের বাড়িতে যান। তার পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। তাঁকে কোলিয়ারি কাল্লা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকেরা মৃত ঘোষণা করেন। তবে সিবিআই তল্লাশির সময় ধনঞ্জয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আজ ইসিএল-এর জেনারেল ম্যানেজার স্তরের কয়েকজন কর্তার বাড়ি এবং অফিসেও যান সিবিআই কর্তারা। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে আসানসোল, পুরুলিয়ায় আয়কর কর্তারাও তল্লাশি চালান। এখন দেখার আজকের এই অভিযানের পর আর কোন কোন বড় মাথার নাম প্রকাশ্যে আসে।