দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: নির্ভীক সাংবাদিকতার দাম দিতে হলো নিজের জীবন দিয়ে! রাকেশ সিং নির্ভীক ও পিন্টু সাহু নামক দুই সাংবাদিককে স্যানিটাইজার ঢেলে ঘরের মধ্যে জীবন্ত দগ্ধ করেছে। সোমবার উত্তরপ্রদেশে এই নৃশংস খুন কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, খুনের অভিযোগে এখনো পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের তিনজন হলেন রিঙ্কু মিশ্র (পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে), ললিত মিশ্র এবং আক্রম। ধৃত তিনজনের মধ্যে আক্রম পুরনো ক্রিমিনাল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই এই খুন।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশে ‘রাষ্ট্রীয় স্বরূপ’ নামক পত্রিকার সাংবাদিক রাকেশ সিং এবং তার বন্ধু পিন্টুকে সকলেই নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবেই চিনতেন। ধৃতদের বাহাদুরপুর ক্রসিংয়ের নিকটবর্তী জঙ্গল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলরামপুর দেবরঞ্জন ভার্মা বলেছেন, জেরায় ধৃতরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। এদের মধ্যে কেশবানন্দের মা একটি গ্রামের প্রধান। কারণ হিসেবে যা সামনে এসেছে তাতে জানা গিয়েছে সাংবাদিক রাকেশ সিং কেশবানন্দের মায়ের অধীনে থাকা একটি তহবিলের বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন। এখান থেকেই অভিযুক্তরা তার ওপরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
ধৃতরা এরপর পরিকল্পনা করে আলাপ জমানোর অজুহাতে বলরামপুরের রাকেশের বাড়িতে যায়। সেখানে তারা সিং ও তার বন্ধু পিন্টুকে মদ খেতে বাধ্য করে এবং পরে খুন করে। ধৃতদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বিষয়টিকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে। রাকেশ এবং পিন্টু যখন নিজেদের বাড়িতে ছিলেন তখন অতর্কিতে এই হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলে পিন্টুর মৃত্যু হলেও রাকেশ লড়াই চালাচ্ছিলেন। জীবন্ত দগ্ধ রাকেশের দেহের ৯০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে লখনউয়ের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় হলে তাঁকে মৃত হিসেবে ঘোষণা করা হয়!


বলরামপুরের পুলিশ সুপার দেব রঞ্জন বর্মার মতে রাকেশের সাংবাদিকতা এবং পিন্টুর সাথে প্রধানের ছেলে রিংকুর টাকা-পয়সার নিয়ে পুরোনো বিবাদ এই খুনের মূল কারণ। বেশ কিছুদিন ধরেই ওই পঞ্চায়েত প্রধান এবং তার দুষ্কর্ম নিয়ে নিজের পত্রিকায় লিখেছিলেন নির্ভীক রাকেশ। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিজের এই করুন পরিণতির জন্য পঞ্চায়েত প্রধানের দিকে আঙুল তুলছেন রাকেশ। পুলিশ সংবাদমধ্যম ও রাকেশের পরিবার কে আশ্বস্ত করেছেন যে আরো অনেককে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, রাকেশ সিং ও তার স্ত্রীর মধ্যে কিছু সাংসারিক বিবাদের জেরে ঘটনার দু’দিন আগে তার স্ত্রী ও সন্তানরা আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। শুক্রবার রাতে বাড়ির মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটে যার ফলে একটি দেয়াল ভেঙে যায় এবং গোটা ঘরে আগুন ধরে যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনা নিহত সাংবাদিকের বাবা মুন্না সিংহের খুন বলে সন্দেহ হওয়ায় তিনি পুলিশি তদন্তের আর্জি জানান। ধৃতরা এই মূহুর্তে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সূত্রে খবর , বিধায়ক পল্টুরামের সহায়তায় নিহতের পরিবারের হাতে পাঁচ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী বিভা সিংকে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়েছেন বলরামপুর চিনি মিলস পরিচালন সমিতি। এছাড়াও প্রশাসন জানিয়েছেন, নিহতের কন্যা যাতে নিখরচায় শিক্ষা লাভ করতে পারে সে বিষয়ে সুনিশ্চিত ব্যবস্থা করবেন তারা। গোটা পরিবারকে চব্বিশ ঘন্টা পুলিশ নিরাপত্তা দেবে ও এই ঘটনার তদন্ত করতে চারটি দল গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। যদিও এর আগে অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারলে সাংবাদিকের স্ত্রী আত্মহত্যা করবেন, এমনই হুমকি দেওয়া হয়েছিল।