দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরোঃ এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ৫০ বছর পূর্তি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে যত রকমের যুদ্ধ’র সন্ধান পাওয়া যায় তার মধ্যে সবথেকে সাম্প্রতিকতম সংগ্রামের আজ সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন। কিন্তু কেন এই আনন্দোল্লাস? যুদ্ধ শেষের আনন্দে কতখানি বা আনন্দ থাকে? আর কতখানি থাকে স্বজন হারানোর বেদনা! তবু ‘বিজয় দিবস’ যেন আপামর বাঙালিকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইচ্ছেশক্তির জোরে সামান্য একটি জাতি কতখানি ভয়ঙ্কর হয়ে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারে। আজ সেই অধিকারলাভের ও বর্ষপূর্তি।


১৯৪৭ এ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার নামে তার দুই অংশজ ভূখণ্ডকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। আজকের বাংলাদেশ পূর্ব-পাকিস্তান নামে পশ্চিম পাকিস্তানের অংশ হিসেবে এক বিরাট ভূখণ্ডের পূর্ব পাশে অস্তিত্বের লড়াইতে জেগে উঠছিল। প্রথমে ভাষার অধিকার, তারপর এলো বেঁচে থাকার অধিকার। ততদিনে স্বৈরাচারী পাকিস্তানি সেনা গলা টিপে ধরেছে তাদের, স্বায়ত্তশাসনের নামে সেখানে নৃশংস অরাজকতা চলছে। এইসবের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ালেন এক নির্ভীক বাঙালি, নাম শেখ মুজিবর রহমান। তাঁর আওয়ামি লিগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতে নিল নির্বাচন। পশ্চিম পাকিস্তান বুঝতে পারল যে অত্যাচারের সীমা পেরিয়ে গেছে, মানুষ এখন সশস্ত্র বিপ্লবের সামনে দাঁড়িয়ে। তবুও তারা নির্বাচনকে অস্বীকার করে গেল। সেটা সাল ১৯৭১, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবর এক ঐতিহাসিক ভাষণে জনগণকে জানিয়ে দিলেন যে যুদ্ধ আসন্ন।




আরো পড়ুনঃ ‘সত্যান্বষী’ নাকি জেলবন্দি! ২০২০-এর রিপোর্টে উঠে এল গা হিম করা তথ্য
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়ে বর্বর অত্যাচার আর হত্যালীলা শুরু করে দিল। ৩২ নম্বর ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার হলেন শেখ মুজিব। কিন্তু ততদিনে বাঙালি প্রাণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিপুল সেনা নিয়োগ করলেন শেখ মুজিবের ‘মুক্তিসেনা’র সঙ্গে যৌথভাবে লড়াইয়ের জন্য। দীর্ঘ নয় মাস লড়াইয়ের পর পাকিস্তান আত্মসমর্পণ ঘোষণা করলেন ইন্ডিয়ান আর্মির মেজর জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে।
সেই রেসকোর্সের ময়দানে পাকিস্তানের আর্মি জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলে সই করলেন। ১৬ ডিসেম্বর রাতে ৩১ টি তোপধ্বনির মাধ্যমে সূচনা হল বিজয় দিবসের। জন্ম নিল একটি স্বাধীন দেশ যাদের স্বাধীনতা এলো ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে আর না জানি কত মায়-বোনের আঁচল শূন্য করে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি তার ৯৩,০০০ সৈন্যসহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই লড়াইতে বাংলাদেশের মুক্তিসেনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়েছিল ভারতীয় সেনা। ঐতিহাসিকদের দাবী ইন্দিরা গান্ধী সেনা নিয়োগ না করলে ইতিহাস অন্য কিছুই হত।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক জয় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশের উদযাপিত হয়। ভারতীয় সেনার ইতিহাসে সেটিও স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা ‘বিজয় দিবস’। দীর্ঘ ৮ মাসের লড়াইতে নিজের শক্তি-সংযম-সহমর্মিতা প্রকাশ করেছিল ভারতীয় সেনা। তারপরে অনেক যুদ্ধ পরিবেশ সংঘটিত হলেও পাকিস্তান এই হারের ক্ষত থেকে বেরোতে পারেনি।
এখনো অনেক মুক্তিসেনার কাছে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের দিন। কোভিড-১৯ অতিমারির মধ্যেও সমস্ত রকম বিধিনিষেধ মেনে জাতির বিজয় দিবসের সূচনা করেছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনা। পদ্মা নদ যা হল বাংলাদেশের প্রাণশক্তি, তার বুকে এক ঐতিহাসিক ব্রিজের উদ্বোধন হতে চলেছে আজ। স্বাধীনতার ৫০বছর পার হয়ে গেলেও সমস্ত রকম সমস্যার হয়তো দূরীকরণ হয়নি। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে উঠে আসছে বাংলাদেশ, আর তাঁদের উন্নতিকল্পের বুনিয়াদ তাদের ভাষা-সংস্কৃতি-ইচ্ছে।



