দ্য কলকাতা মিরর ব্যুরো : স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভারত যে কটি যুদ্ধ জয় করেছে তার মধ্যে কারগিলের যুদ্ধ বিশেষ তাত্পর্য পূর্ণ। আজ ২৬ শে জুলাই। দিনটি ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালিত হয় সারা দেশে। আজ থেকে ২১ বছর আগে এই দিনেই কারগিল যুদ্ধ জয় করেছিলেন ভারতীয় সেনা।
বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারী জনিত সুরক্ষা বিধি প্রণয়নের কারণে সশরীরে সেনা ছাউনিতে উপস্থিত না হয়ে ট্যুইটারেই একটি ভিডিও বার্তার মধ্য দিয়ে সেনাদের শ্রদ্ধা জানলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিংহ।
আজ থেকে কুড়ি বছর আগে হিমালয়ের দুর্গম কারগিল রেঞ্জে সাহস ও দক্ষতার সাথে পাক সেনাদের হঠিয়ে কারগিল শৃঙ্গে তেরঙ্গা উড়িয়েছিলেন দেশের বীর জওয়ানরা। সেই জয়ের নেপথ্যে ছিল বহু তাজা বীর জওয়ানের আত্মাহুতি।
আজ সেই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করে পালিত হচ্ছে কারগিল বিজয় দিবস। শহিদ জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করতে রবিবার সকালে ‘মন কি বাত’ বেতার অনুষ্ঠানে সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী।
১৯৯৯ সালের এই দিনেই ‘অপারেশন বিজয়’ সম্পন্ন করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় কারগিল সেক্টরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মোট ৬৩ দিন যুদ্ধ চলে। ১৯৯৯ সালের ৩ মে যুদ্ধ শুরু হয় এবং শেষ হয় ২৬ জুলাই । যদিও ১৪ জুলাই তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ‘অপারেশন বিজয়’-এর সাফল্য ঘোষণা করেছিলেন।
ভারতের চিরশত্রু প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতার চরম নিদর্শন এই ১৯৯৯ সালের ‘কারগিল যুদ্ধ’। এই সংঘর্ষের মাত্র দু’মাস আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী সম্প্রীতি ও মিত্রতার বার্তা নিয়ে লাহোর সফর করেছিলেন। আর তার ফল স্বরূপ পাকিস্তানের এই নির্লজ্জ প্রত্যুত্তর। কারগিল যুদ্ধ যখন চলছে, তখন ভারত-পাক দু’টি দেশই পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ। ১৯৭১-এর ‘মুক্তিযুদ্ধ’-র পর থেকে দীর্ঘকালীন শান্তি বজায় থাকলেও ১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে। আর ১৯৯৮-এর মে মাসে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশেরই নতুন করে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের পটভূমিকা রচিত হতে থাকে।
শীতে যখন কাশ্মীর সীমান্তের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রিতে নেমে যায় তখন ছাউনি ছেড়ে সেনারা কিছুটা সরে আসে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান সেনা কারগিল সেক্টরে অযাচিত ভাবে প্রবেশ করে।
এই যুদ্ধে মোট ৪৫৩ জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়। যুদ্ধবন্দির সংখ্যা ৮ জন। এই যুদ্ধে পাকিস্তান প্রায় ৫ হাজার সেনা পাঠিয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন তারা দু’টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছিল। আরও একটি ভেঙে পড়েছিল মাটিতে।
এই যুদ্ধের নেপথ্যে পাকিস্তানের মূল উদ্দেশ্য ছিল লাদাখ এবং কাশ্মীরের মধ্যে যাবতীয় সংযোগ ছিন্ন করা। এবং এই যুদ্ধ কে সামনে রেখেই কাশ্মীর সমস্যাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে আসা, যাতে বিভিন্ন অজুহাতে তারা তাদের এই অযাচিত জমিদখল সফল করতে অন্যান্য দেশের সাহায্য পায়। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। এমনকী, পাকিস্তানের চিরবন্ধু চিনও এই যুদ্ধে সাথ দেয়নি ।
আজ সকালে বীর সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ট্যুইট করেছেন রাজনাথ সিং। তিনি বলেছেন , ‘কারগিল বিজয়ের ২১তম বর্ষপূর্তিতে আমি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেই সব সাহসী ও বীর সৈন্যদের জানাচ্ছি সশ্রদ্ধ স্যালুট ‘।