মেয়েটির বুকে আগুন ছিল, সে তো সবারই জানা।
বুকের ভিতরে স্বপ্ন ছিল স্বাধীনতার।
রবীন্দ্রনাথ মেয়েটির নাম দিয়েছিলেন “অগ্নিকন্যা”।
আগুনের বুকটায় প্রেমও ছিল, সময় পায়নি বেড়ে ওঠবার।
যখন বোমা বানাতে শিখেছিল তখন বয়স মাত্র ষোলো।দুহাতে চালাতে পারতো রিভলবার। কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে চট্টগ্রামে ফিরে নাম লিখিয়েছিল মাস্টারদার দলে। যে কোনও মুল্যে দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বাজী রাখা জীবন। সেখানেই দেখা ছোটবেলার চেনা ফুটুদার সঙ্গে। মাস্টারদার বিশ্বস্ত সৈনিক ফুটু। ব্রিটিশের ওয়ান্টেড লিস্ট এ মাস্টারদার সঙ্গেই থাকে ফুটুর নাম। যদিও ভালো লাগাটা এগোয়নি বেশিদূর। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করে বিপ্লবীরা। নেতৃত্বে মাস্টারদা, ফুটুর সঙ্গে সেই মেয়েটিও ছিল কর্মকাণ্ডের প্রথম সারিতে। পুলিশ তখন হন্যে হয়ে খুঁজছে ওঁদের। তাই আড়াল হতে হল সবাইকে। সূর্য সেনের নির্দেশ মত গেরিলা হানায় পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে আক্রমণ করার জন্য মেয়ের নেতৃত্বে তৈরি হল মহিলা ব্রিগেড, সঙ্গে পেল আর এক আগুন প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দারকে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল সেই মেয়ে।
এরপরে একের পর এক ধরা পড়ল মাস্টারদা সূর্য সেন, তাঁর ফুটুদাও। শুরু হল বিচারের নামে প্রহসন। সেই আদালত কক্ষে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ফুটুদা জিজ্ঞেস করেছিল, “আমার তোকে ভালো লাগে। যদি ফিরে আসি, আমার জন্য অপেক্ষা করবি?” মেয়ে কিছু বলেনি। নীরবে একবার তাকিয়েছিল ফুটুদার দিকে। বিচারে সূর্য সেনের পাশাপাশি ফুটুদারও ফাঁসির নির্দেশ হয়। বয়স কম হওয়ায় মেয়েটির হয় যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর। ১৯৩৩ সালের ১৪ আগস্ট ফাঁসি হয় মাস্টারদা সূর্য সেন এবং ফুটু ওরফে তারকেশ্বর দস্তিদারের।
নিজের “অগ্নিকন্যা”র আন্দামানের দ্বীপান্তর রদ করার জন্য চিঠিও লিখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও । দেশজোড়া দাবির জেরে তাই আন্দামানে যেতে হয়নি তাকে। সাতটা বছর ঘুরতে হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলে। মাস্টারদা আর ফুটুদার ফাঁসির খবর পেয়েছিলেন জেলে বসেই। মুক্তি পাওয়ার পরেও অবশ্য মাস্টারদার আদর্শে অবিচল ছিলেন আজীবন। ভালোবাসার মানুষ ছিলেন ফুটুদা।
১৯৪৩ সালে সিপিআই নেতা পি সি যোশি যখন তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন মেয়েটি জানায়, “আই হ্যাভ প্রমিসড তারকেশ্বর দস্তিদার”। পরে অবশ্য বি টি রনদিভে সহ বেশ কয়েকজন কম্যুনিস্ট নেতার অনুরোধে মেয়েটি পি সি যোশীকে বিয়ে করে। যদিও আমৃত্যু মাস্টারদার আদর্শ আর ফুটুদার আত্মত্যাগ ও ভালোবাসা ছিল তাঁর পথ চলবার পাথেয়।
অগ্নিযুগের এই “অগ্নিকন্যা”র নাম কল্পনা দত্ত। আজ ২৭ জুলাই ছিল তাঁর জন্মদিন।