দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: বিশেষজ্ঞদের ধারণা সত্যি প্রমাণ করে জুলাই থেকে অগস্টে পা রাখতে না রাখতেই নিজের শক্তি আরও বৃদ্ধি করছে কোভিড-১৯। বিগত ৬ মাসের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ৫৫,০০০ এরও বেশি মানুষের শরীরে আক্রমণ করেছে এই ভাইরাস। তাও মাত্র ২৪ ঘণ্টায়। তাহলে কী ভারতে করোনা ভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু?
আজ সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিনে দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে সারা দেশেই এই রোগের প্রকোপ হু-হু করে বাড়ছে। তবে এই রোগের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বেশি করে করোনা পরীক্ষার দিকে জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
এর আগে গত মে মাসেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন যে জুলাই আগস্ট মাসে এই ভাইরাসের সংক্রমণ সর্বোচ্চ হতে পারে। তাদের সেই ভবিষ্যতবাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। তবে দেশ জুড়ে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের শরীরে কোরোনা ভাইরাস পাওয়ার একটা বড় কারণ এখন টেস্ট এর পরিমাণ বেড়েছে। শুধু বৃহস্পতিবারই সারাদিনে দেশ জুড়ে ৬.৪২ লক্ষেরও বেশি মানুষের শরীরে থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান বলছে এই মান এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
বর্তমানে ভারতে মোট ১৬.৩৮ লক্ষ মানুষ এই রোগের কবলে পড়েছে এবং এর মধ্যে ৩৫,৭৪৭ জনের প্রাণহানী হয়েছে। গোষ্ঠী সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেওয়ায় বেশি মাত্রায় সংক্রমিত শহরগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক ও আন্ত:দেশীয় উড়ান ১৫ অগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলিকে।


করোনা সংক্রমণের অপ্রতিরোধ্য গতি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। মাত্র ৩ দিনের মধ্যেই দেশে ১৫ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষেরও বেশি মানুষের শরীরে এই রোগের ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে আরও ৭৭৯ জনের প্রাণ কেড়েছে কোভিড-১৯।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগ জনক দেখে অনেক রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সেখানকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্থানীয় পর্যায়ের লকডাউন আরও দীর্ঘায়িত করেছেন। যেমন ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ু উভয় রাজ্যের সরকারই লকডাউন বাড়ানোর নির্দেশ জারি করেছে। ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরেও লকডাউনের সময়সীমা ৩১ জুলাই থেকে বাড়ানোর বিষয়ে পর্যালোচনা করছে। অন্ধ্রপ্রদেশ ৩ আগস্ট থেকে মাছিলিপত্তনমে লকডাউন ঘোষণা করেছে।
উত্তর পূর্বের পাহাড়ী রাজ্য ত্রিপুরা ৪ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন বাড়িয়েছে, অন্যদিকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রশাসন ঠিক করেছে প্রত্যেক সপ্তাহান্তে সম্পুর্ন লকডাউন করবে। একইভাবে, জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় ৩১ জুলাই থেকে সপ্তাহান্তে লকডাউন পালন করবে বলে ঘোষণা করেছে।
১৬ লক্ষের বেশি মানুষের শরীরে এই সংক্রমণ ছড়াতে মাত্র ১৮৩ দিন সময় লেগেছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সপ্তাহে দুদিন করে কঠোর লকডাউন পালন করছে। আগামী সপ্তাহে ৫ অগাস্ট পূর্ণ লকডাউন পালন করা হবে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে পর্যায়ক্রমে সপ্তাহের বিশেষ বিশেষ তারিখ সম্পুর্ন লকডাউন থাকবে বলে জানিয়েছে মমতা শাসিত রাজ্যসরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য চলতি বছরের ৩০ শে জানুয়ারি ভারতের মধ্যে কেরলে প্রথম করোনা সংক্রমিতের সন্ধান মেলে। তারপর থেকে একে একে সারা দেশে এই রোগের সংক্রমণ বেড়েছে। যেখানে ১১০ দিন পরে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ অতিক্রম করেছিল সেখানে ১৬ লক্ষের বেশি মানুষের শরীরে এই সংক্রমণ ছড়াতে মাত্র ১৮৩ দিন সময় লেগেছে।
যদিও ভারতে সুস্থতার হারও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই বেশি কিন্তু বিপুল পরিমাণে মানুষ এই রোগের কবলে পড়লে রাজ্য তথা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে এই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন মাস্ক পরার ঝক্কি নেই এই দেশে
উল্লেখ্য আজই কলকাতায় পিয়ালি সরকার নামে এক যুবতীর মৃত্যু হয়েছে শুধু মাত্র অক্সিজেন পরিষেবা না পাওয়ার জন্যে! তাকে ৯ টি হাসপাতাল ঘুরতে হয়েছে অক্সিজেনের জন্যে যদিও তিনি করোনা নেগেটিভ ছিলেন। কিন্তু এই স্বাস্থ্য পরিষেবার এই অব্যবস্থা দেখিয়ে দেয় যে গোষ্ঠী সংক্রমণ হলে কলকাতা তথা জেলার রাস্তায় রাস্তায় মানুষের শরীর পড়ে থাকবে যেমনটা যুদ্ধের সময়ে দেখতে পাওয়া যেত।