দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: পড়শী দেশের বুকে আবার কাঁপুনি ধরাতে, রাফাল এর পাশাপাশি এবার ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসছে লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (এলসিএ) তেজস। যা হালকা এবং তীরের মত। এবার সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে বায়ুসেনার জন্য ক্ষিপ্র গতির তেজস বানাচ্ছে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)।
ইতিমধ্যে প্রথম দফার পাঁচটি রাফাল ফাইটার জেট চলে ফ্রান্স থেকে ভারতে পৌঁছেছে। সেগুলিকে আম্বালা এয়ারবেসের গোল্ডেন অ্যারো ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০১৮ সালে মার্কিন অ্যারোস্পেস কোম্পানি লকহিড মার্টিন এবং সুইডেনের সাব এবি-র থেকে ১১৪টি তেজস ফাইটার জেট কেনার চুক্তি হয়েছিল। তবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীর কারণে সেই আন্তর্জাতিক চুক্তি আপাতত স্থগিত।
সূত্রের খবর এমত পরিস্থিতিতে দেশীয় সংস্থা হ্যালের থেকেই ৮৩টি এলসিএ তেজস কেনার চুক্তি করেছে বায়ুসেনা। এই ৮৩টি তেজসের মধ্যে ৭৩টি ফাইটার জেট ও ১০টি দুই আসনযুক্ত ট্রেনার ভ্যারিয়ান্ট।
এই ৮৩টি তেজস ফাইটার জেট কেনার জন্য হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্সের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ৩৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে। আনন্দের খবর এইযে ডিসেম্বরের আগেই তেজস হাতে চলে আসবে।
সব থেকে রোমহর্ষক বিষয় ফ্রান্সের রাফালের মতোই শক্তিশালী ও শব্দের চেয়েও দ্রুতগামী এই তেজস। লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট, বা ওজনে হালকা হওয়ার জন্যে শব্দের চেয়েও বেশি বেগে উড়তে পারে।
হ্যালের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এটি একটি ডাবল ইঞ্জিন, মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট। ক্ষিপ্র গতির হলেও তেজসের নিশানা নির্ভুল। যেখানে রাফাল প্রায় সাড়ে ৯টন ওজন বইতে পারে, সেখানে হালকা ওজনের এই বিমান তেজসও ৯ টনের বেশি ওজন বয়ে নিয়ে যেতে পারে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো দ্বিতীয় এই যুদ্ধবিমানটি শক্তিতে এবং আক্রমণের ক্ষমতায় সুপারসনিক এয়ারক্র্যাফ্ট রাফালেরই সমতুল্য।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ক্ষিপ্র গতির তেজসকে নিশানা করা যেমন অসম্ভব, তেমনি আকাশে একে ধাওয়া করে যাওয়ায় বেশ কঠিন।
সামরিক পরিভাষায় রাফাল হল একটি ‘মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট’। অর্থাত্ এটি অনেক গুলো কাজে ব্যবহার করা যায়, যেমন অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, যুদ্ধজাহাস ধ্বংস করা, মিসাইল নিক্ষেপ এমনকী পরমাণু বোমা বহন করে হামলা চালানোর ক্ষমতাও রয়েছে রাফালের।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ক্ষিপ্র গতির তেজসকে নিশানা করা যেমন অসম্ভব, তেমনি আকাশে একে ধাওয়া করে যাওয়ায় বেশ কঠিন। তেজসের ককপিটে থাকা পাইলট সহজেই শত্রুপক্ষের মিসাইলের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারেন। একারণে শত্রুপক্ষের নজরদারির বাইরে থেকেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে পারে তেজস। দিনে-রাতে, আবহাওয়ার যে কোনও পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারে তেজস।
তেজস মার্ক ১এ ভ্যারিয়ান্ট বা হ্যাল তেজসে আছে কমপাউন্ড ডেল্টা উইং। এয়ার-টু-সারফেল অর্থাৎ আকাশ থেকে ভূমিতে নির্ভুল টার্গেট করতে পারে তেজস। এর সাতটা হার্ড পয়েন্ট রয়েছে যার মাধ্যমে ৫ থেকে ৯ হাজার কিলোগ্রাম অবধি যুদ্ধাস্ত্র বইতে পারে তেজসের এই ভ্যারিয়ান্ট। মাল্টি-মোড রাডার আছে তেজসের এই ভ্যারিয়ান্টে। এর হেলমেট-মাউন্টেড সিস্টেম ও নাইট ভিশনের ক্ষমতা রয়েছে।


ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) জানিয়েছে, তেজসকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য এর সঙ্গে ইজরায়েলি ডার্বি ও রাশিয়ার ক্লোজ কমব্যাট মিসাইল যোগ করা হবে। ডিআরডিও আরও জানিয়েছে, যে তেজসকে আরও আক্রমণাত্মক করে তুলতে ইজরায়েলি আই-ডার্বি এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল যুক্ত করা হবে এর সঙ্গে। ডার্বির ভ্যারিয়ান্ট আই-ডার্বি ই আর আরও বেশি শক্তিশালী।
তেজস থেকে বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ এও মিসাইল ছোড়া যায় ব্রাহ্মসের মতো। এছাড়া সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তিও রয়েছে তেজসে। আর-৭৭ ও পাইথন-৫ এর মিসাইল ছোড়ার ক্ষমতাও আছে তেজস মার্ক ১এ ভ্যারিয়ান্টের।
এই আর-৭৭ হল রাশিয়ার তৈরি মাঝারি পাল্লার এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল। পাইথন-৫ মিসাইল তৈরি করেছে ইজরায়েলের রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম। এটি বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ (BVR)এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল।
ইতিমধ্যে ভারতীয় নৌসেনার সামরিক ভাণ্ডারে বায়ু থেকে বায়ুতে নিশানার জন্য রাশিয়ার আর-৭৩ ক্লোজ কমব্যাট মিসাইল রয়েছে। সারফেস-টু-এয়ার (SAM) অর্থাৎ ভূমি থেকেও আকাশে টার্গেট করা যায় এই ক্ষেপণাস্ত্র। তেজসের এই ভ্যারিয়ান্টের জন্য ডার্বির উন্নত সংস্করণকেই বেছে নিচ্ছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।