দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: বিহার সরকার সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু মামলায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছেন। বিশেষ সংবাদ সংস্থা এএনআই (ANI) কে দেওয়া এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার জানিয়েছেন-“ ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিস আজ মঙ্গলবার সকালে সুশান্ত সিং এর বাবার সাথে কথা বলেছেন এবং তিনি এই মামলায় সিবিআই তদন্তের জন্যে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। সেই কারণে আমরা এই বিষয়টি সিবিআই এর হাতে নেওয়ার সুপারিশ করছি।
মঙ্গলবার সকালে নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করেন সুশান্তের বাবা কেকে সিং। সোমবারই একটি ভিডিয়ো বার্তায় তিনি চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। মুম্বই পুলিশের তদন্তে চরম গাফিলতির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আমি বান্দ্রা পুলিশকে জানিয়েছিলেন আমার ছেলের জীবন বিপদের মুখে। ১৪ জুন ও মারা গিয়েছে এবং আমি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাই। ছেলের মৃত্যুর ৪০ দিন পরেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাই আমি পটনাতে এফআইআর দায়ের করেছি।’
সংবাদ সংস্থা পিটিআই এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন ইতিমধ্যে বিহার পুলিশ এই অভিনেতার মৃত্যু সম্বন্ধিয় কিছু তথ্য ও বয়ান তাঁর, বন্ধু, পরিবার পরিজন ও ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট ম্যানেজার সিদ্ধার্থ পিঠানির কাছ থেকে রেকর্ড করেছেন। শুধু তাই নয়। এর সাথে সাথে বিহার পুলিশ সুশান্ত সিংয়ের ম্যানেজার দীপেশ সাবন্ত এর বয়ান ও নথিবদ্ধ করেছেন। এখনো পর্যন্ত মোট ১০ জনের বয়ান নেওয়া হয়েছে। এর আগে এই তদন্তকারী পুলিশের দল সুশান্তের দিদি, প্রাক্তন বান্ধবী অঙ্কিতা লখণ্ডে, পরিচালক রুমী জফ্রে, তাঁর রাধুনি, বন্ধু ও ডাক্তারের বয়ান ও রেকর্ড করেছে।
অন্যদিকে সুশান্তের বন্ধু তথা ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট ম্যানেজার সিদ্ধার্থ পিঠানির বয়ান অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাকে ফোন করে সুশান্ত। সুশান্ত বার বার তাকে ফিরে যাওয়ার জন্যে বলেছিল। দু’জনে মিলে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করছিল সুশান্ত কারণ অভিনয় করতে আর ভালো লাগছিল না সুশান্তর। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি অথবা কনটেন্ট সংক্রান্ত কোনও কাজ শুরু করার কথা হচ্ছিল আর সুশান্তের মতে এই কাজে ওর যোগ্য সহযোগী আমিই হতে পারি। যে কারণে চাকরি ছেড়ে চলে আসতে বলে। এমনকি চাকরিতে যে বেতন পেতাম সেটাই দেবে বলেছিল।’


এর আগে সুশান্ত সিং এর মৃত্যুতে অভিনেতার বাবার করা অভিযোগ অনুযায়ী বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী ও তার পরিবারে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বিহার পুলিশের একটি দল মুম্বাই পৌঁছেছে।
এর মধ্যে এই মৃত্যু রহস্য বিহার পুলিশ বনাম মুম্বাই পুলিশের লড়াই এর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলস্বরূপ রবিবার দিন মুম্বাই এ নামতে নামতেই আই পি এস অফিসার বিনয় তিওয়ারী কে মুম্বাই পুলিশ আগামী ১৫’ই আগস্ট পর্যন্ত ‘সিলেকটিভ আইসলেশনে’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যা এই অফিসারের মতে ভ্রান্ত ও সম্পুর্ন ভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত। গত সপ্তাহে সুশান্ত সিং রাজপুতের বাবার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পাটনা সেন্ট্রালের এস পি, তিওয়ারীকে মুম্বাই পাঠানো হয়েছিল, সুশান্ত সিং এর মৃত্যু তদন্তে মুম্বাইয়ে আসা বিহার পুলিশের দলটিকে তদারকি করার জন্যে।
মুম্বাইয়ের পুলিশ কমিশনার পরম বীর সিং বলেছিলেন যে বিষয়টি বিএমসি (বম্বে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের) ইস্যু হওয়ায় ওই কর্মকর্তাকে আলাদা করে দেওয়ার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারেননি, তবে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এই মামলাটিতে মুম্বাই পুলিশের তদন্তের এখতিয়ার রয়েছে।


সিং বলেছিলেন যে -“ এ বিষয়ে আইনটি খুব স্পষ্ট। যখনই কোনও জ্ঞানীয় অপরাধ নিবন্ধিত হয়, স্থানীয় পুলিশ এটি নিবন্ধ করার জন্য দায়বদ্ধ। তবে, অপরাধের দৃশ্য যদি সেই পুলিশের অধীনে না থাকে তবে একটি শূন্য এফআইআর নথিভুক্ত করা হয় এবং মামলাটি সেই থানায় স্থানান্তর করা হয় যার অধীনে ঘটনাটি ঘটেছে। বিহার পুলিশ দলটি আমাদের কাছে এসে বলেছিল যে তারা মামলার সাথে সম্পর্কিত কিছু দলিল চেয়েছিল। আমরা জানি না আপনারা কীভাবে আপনার এখতিয়ারের বাইরে কোনও মামলা তদন্ত করতে পারেন… আমরা আইনী মতামত নিচ্ছি … অন্য কোনও রাজ্য থেকে কোনও অভিযোগ পেলে আমরা তা নিবন্ধভুক্ত করি এবং সেই স্থানে স্থানান্তর করি। আমরা এটি তদন্ত করি না…। ”
সিং আরও যোগ করেছিলেন যে , “অপরাধের দৃশ্যটি তাদের এখতিয়ারের বাইরে থাকায় আমরা বিহার পুলিশকে এই মামলাটি কী বিভাগ এবং বিধানের অধীনে তদন্ত করতে চাইছে সে সম্পর্কে আমাদের একটি ব্যাখ্যা দিতে বলেছি।”
রিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী একজন আইনজীবী বলেছেন যে বিহার সরকারের সিবিআইয়ের কাছে এই মামলার সুপারিশ করার কোনও আইনী সত্যতা নেই কারণ এই মামলার তদন্ত তার রাজ্য পুলিশের এখতিয়ারে নেই।
“এমন মামলার স্থানান্তর হতে পারে না যাতে বিহার জড়িত হওয়ার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। সর্বাধিক, এটি মুম্বাই পুলিশের কাছে হস্তান্তরযোগ্য একটি ‘জিরো এফআইআর’ হবে। আইনজীবী সতীশ মানেশিন্দে এএনআইকে বলেছেন যে কোনও মামলা, যার উপর বিহারের কোন এখতিয়ার ছিল না, সেটি সিবিআই-তে স্থানান্তরিত হওয়ারও কোন আইনী ভিত্তি নেই।