দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারী বৃষ্টিতে কেরালার কোজিকোড় বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুবাই থেকে যাত্রা পথে ১৯১ জন যাত্রী নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বিমান রানওয়ে থেকে বিছিন্ন হয়ে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বিমান চালকসহ কমপক্ষে ১৭ জন মারা যায়। কেরালার মন্ত্রী কেটি জালিল আগে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, আর বিজেপি সাংসদ কে জে অ্যালফোনস জানিয়েছেন, সমস্ত যাত্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার স্থানের প্রাথমিক চিত্রগুলি দেখায় যে বিমানটি দুটি টুকরোতে বিভক্ত। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭.৪৫ এর দিকে ঘটনাটি ঘটেছিল যখন IX ১৩৪৪ নম্বরের CO ৭৩৭ বোয়িং বিমানটি ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে কারিপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা করছিল এবং সেটা একটি টেবিলটপ রানওয়ে থেকে পিছলে ৩৪ ফুট নীচের একটি খাদে পড়ে দু টুকরো হয়ে যায়।
ম্যাংগালরুর মতোই, কোজিকোড় বিমানবন্দরে একটি টেবিলটপ রানওয়ে রয়েছে যা একটি টিলাকে খোদাই করে তার অপরিভাগ সমান করে করা হয়েছিল। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই বিমানবন্দরগুলিতে রানওয়েগুলিতে যখন কোনও পাইলট অবতরণের জন্য আসে তখন এটি নীচের সমভূমির সমান স্তরে থাকার জন্যে একটা অপটিক্যাল ইল্যুশন তৈরি করে।


ডিরেক্টরেট গেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন এর সুত্র মারফত জানা যাচ্ছে যে- “বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে উপত্যকায় পড়ে দু খন্ড হয়ে গিয়েছে। সেখানে বেশ কিছু মানুষের এখনো বেঁচে থাকার কথা।”
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, এখনো অবধি এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন। বিজেপি সাংসদ কে জে আলফোন্স জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ওই বিমানের এক জন পাইলটও রয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে কম পক্ষে ১২৩ জন। আহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের।
এমপি ইটি (ET) মোহাম্মদ বশির জানিয়েছেন-” একজন বাদে সকল প্যাসেঞ্জারকেই বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। একজন বিমানে আটকে আছেন কিন্তু তিনি সুস্থ আছেন।”
বন্দে ভারত মিশনের অন্তর্গত এই বিমানটি করোনা -পরিস্থিতির আবহে বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসছিল। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের তরফে রাজীব জৈন জানিয়েছেন, ওই বিমানে ১৭৪ জন যাত্রী, ১০ টি শিশু, ২ জন বিমানচালক এবং ৫ জন বিমানকর্মী ছিলেন।
ঘটনাস্থলে ২৪টি অ্যাম্বুল্যান্স এবং দমকলবাহিনী-সহ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। বিমানে আটকে পড়া সকলকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্রে খবর। তবে আহতদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের অবস্থা গুরুতর। ফলে হতাহতের সংখ্য়া আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার জায়গাতে ধোঁয়া বেরচ্ছিলো এবং বিমানটি দুটি অংশে বিভক্ত বলে মনে হয়েছিল।
বিজেপি সাংসদ কে জে অ্যালফোন্স বলেছেন- “কেরালায় এটি আজ দিনের দ্বিতীয় দুর্ঘটনা: এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস কোজিকোড়ের রানওয়ে থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, বিমানের সামনের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, পাইলট মারা গিয়েছেন এবং প্রচুর যাত্রী আহত হয়েছেন। সমস্ত যাত্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুব ভাগ্য ভালো যে বিমানটিতে আগুন ধরেনি।”


কেরালার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজা জানিয়েছেন, আহতদের দ্রুত কোজিকোড় এবং মলপ্পূরমের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, বিশেষ করে কোজিকোড় মেডিকেল কলেজে যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন টুইট করেছেন “কোজিকোড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মন্ত্রী এ সি মইন উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দেবেন।” তিনি আরও বলেছেন যে, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ টুইটে জানিয়েছেন- “কেরালার কোজিকোডে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস বিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে ব্যথিত। এনডিআরএফকে দ্রুত জায়গায় পৌঁছে দেওয়া এবং উদ্ধার কাজগুলিতে সহায়তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”


কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাদরা বলেছেন- “আমার হৃদয় ক্যালিকটে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ক্রূ এবং যাত্রীদের কাছে এবং তাদের পরিবারগুলিতে পৌঁছে গেল। এই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক মুহূর্তে আমাদের প্রার্থনা আপনার সাথে রয়েছে।”
ভারতের রাষ্ট্রপতি মাননীয় শ্রী রামনাথ কোবিন্দ মহাশয় টুইট করেছেন -“কেরালার কোজিকোডে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানের ট্র্যাজিক বিমান দুর্ঘটনার কথা শুনে গভীরভাবে শোকাহত। কেরালার রাজ্যপাল শ্রী আরিফ মোহাম্মদ খানের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্থ যাত্রী, ক্রু সদস্য এবং তাদের পরিবারগুলির সাথে চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনা রইল।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন- “কোজিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে আমি মর্মাহত। আমার চিন্তাভাবনা তাদের সাথেই রয়েছে যারা তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। গুরুতর আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে রয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্থদের সমস্ত সহায়তা প্রদান করছেন।”


বিমান দুর্ঘটনার পরে নাগরিক বিমান মন্ত্রনালয় নয়াদিল্লির রাজীব গান্ধী ভবনে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। ডিজিসিএর মহাপরিচালক পাশাপাশি মন্ত্রক, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ভারত ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।