দ্যা ক্যালকাটামিরর ব্যুরো: শুক্রবার কেরালার কোঝিকোড়ে বিধ্বস্ত এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন দীপক ভি সাতে পুনের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির (এনডিএ) প্রাক্তন ছাত্র এবং ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্মকর্তা ছিলেন।
ক্যাপ্টেন সাতে এয়ার ইন্ডিয়ার সাথে প্রায় ১৮ বছর ধরে যুক্ত রয়েছিলেন এবং তাঁর ৩০ বছর ব্যাপী এবং দুর্ঘটনামুক্ত উরানের রেকর্ড ছিল।
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল ভূষণ গোখলে বলেন- “ক্যাপ্টেন দীপক ভি সাতে পুনের ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমীর ৫৮তম কোর্স এর ছাত্র ছিলেন। তিনি জুলিয়েট স্কোয়াড্রনের ও সদস্য ছিলেন।”


তিনি আরও বলে যে, “সাতে ১৯৮১ সালের জুন মাসে এয়ার ফোর্স একাডেমী থেকে ‘সোর্ড অফ অনার’ নিয়ে পাশ করেন এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীতে একজন ফাইটার পাইলট ছিলেন।
দুবাই থেকে কোঝিকোড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস প্রত্যর্পণ ফ্লাইট বিধ্বস্ত হওয়ার পর অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি যাত্রী আহত হয়েছে। পাইলট এবং কো-পাইলট, ফার্স্ট অফিসার অখিলেশ কুমার, দুজনেই দুর্ঘটনায় মারা যান।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস আইএক্সবি ১৩৪৪ অনুসারে, ১৯১ জন লোক নিয়ে একটি সিও ৭৩৭ বিমান ভারী বৃষ্টিতে ২০০০ মিটার দৃশ্যমানতার মধ্যে ১০ নং রানওয়েতে অবতরণ করে, কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা পিছলে যায় এবং একটি টেবিলটপ রানওয়ে থেকে পিছলে সামনের ৩৮ ফুট নিচের উপত্যকায় আছড়ে পড়ে দু টুকরো হয়ে যায়। এই বিমানটি বন্দে ভারত মিশনের অন্তর্গত ছিল। দুবাই এ কোভিড-১৯ মহামারীর জন্যে আটকে যাওয়া মানুষদের কে দেশে ফিরিয়ে আনছিলো।
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী শুক্রবার এই অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং কম দৃশ্যমানতার কারণেই এই দু:সংবাদ পাওয়া গিয়েছে।
উল্লেখ্য ক্যাপ্টেন সাতে, ১৯৯৯ সালে যে স্কোয়াড্রন কার্গিল যুদ্ধের কাজ দেখেছিল এবং সম্প্রতি ফ্রান্সের ড্যাসল্ট দ্বারা নির্মিত বহু-ভূমিকা যুক্ত রাফাল জেট ফাইটার অন্তর্ভুক্তিকরণের বিষয়েও বিশেষ অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
সাতে, যিনি এয়ার ফোর্স ট্রেনিং একাডেমীতে প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন, তিনি আইএএফ থেকে অকাল অবসর গ্রহণ করেন, বেসামরিক বিমানে স্থানান্তরিত হন এবং এয়ার ইন্ডিয়ায় যোগ দেন।
পওয়াইয়ের জলভায়ু ভবনের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন সাতে’র মৃত্যুর পর উত্তর-পূর্ব মুম্বাইয়ের পোওয়াই শহরতলীতে এক হতাশার সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, তাঁর দুই ছেলে আছে। যাদের মধ্যে একজন বেঙ্গালুরুতে বাস করেন এবং অন্যজন আমেরিকায় থাকেন। তারা শীঘ্রই কেরালা য় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এয়ার মার্শাল ভূষণ এও মনে করিয়ে দিলেন, সাতে একজন চমৎকার স্কোয়াশ খেলোয়াড় ছিলেন।
অন্যদিকে এই বিমানেই ছিলেন অখিলেশ কুমার। যিনি ছিলেন দীপক ভি সাতের কো পাইলট। মাত্র ৩২ বছর বয়সী এই পাইলট শুক্রবারের দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ১৯ জন যাত্রীর মধ্যে একজন।


অখিলেশ, ফ্লাইট কমান্ডার ক্যাপ্টেন দীপক সাতে সহ, যিনিও দুর্ঘটনায় মারা যান, নিরাপদে রানওয়েতে অবতরণ করার চেষ্টা করেন। দুইবার বিমানবন্দর প্রদক্ষিণ করার পর, তারা বিমান অবতরণের চেষ্টা করেন, কিন্তু বিপর্যয় এড়ানো যায়নি।
বিমানটি ককপিট দিকে দু-ভাগ হয়ে যায়। যদিও কি ভুল হয়েছে ব্ল্যাকবক্স থেক প্রাপ্ত বিবরণই বলবে। বেঁচে যাওয়া অনেক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে পাইলটরা নিজের জীবন দিয়ে ১৭০ জনেরও বেশী জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন, তারা তাদেরকে ‘ইউনিফর্ম পরা নায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, অখিলেশ কুমার উত্তর প্রদেশের মথুরার বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী মেঘা সন্তান সম্ভবা । দম্পতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বিয়ে করেন। তাঁর দুই ছোট ভাই, একটি বোন এবং পিতামাতা বেঁচে আছেন। লকডাউন হওয়ার আগে তিনি একবার মথুরা গিয়েছিলেন।
২০১৭ সালেই এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে উড়ান শুরু করেন অখিলেশ। তিনি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইটের প্রথম কর্মকর্তা ছিলেন যা বন্দে ভারত মিশনের প্রথম পর্যায়ের অংশ ছিল।