দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ভারতের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদ ডক্টর মনমোহন সিং ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির প্রধান স্থপতি হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে তিনি ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা। এই মূহুর্তে গোটা বিশ্বের সাথে সাথে ভারতেও অর্থনৈতিক মন্দা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
এই অর্থনৈতিক মন্দা দূরীকরণে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রক ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সচেষ্ট ও একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করলেও ভারতের জিডিপি ক্রমশই নিম্নমুখী।
এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি কে দেওয়া একটি ইমেল সাক্ষাৎকারে মনমোহন সিং জানান এই মূহুর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের বিনিময়ের সময় তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যা তিনি বিশ্বাস করেন যে সরকারকে এই সংকট থামাতে এবং আগামী বছরগুলোতে অর্থনৈতিক স্বাভাবিক অবস্থায় উন্নত করতে বিশেষ সহায়ক হবে।
কী রয়েছে তাঁর এই তিন ধাপে? তাঁর মতে প্রথমত, সরকারের উচিত “জনগণের জীবিকা সুরক্ষিত রাখা এবং তাদের একটি উল্লেখযোগ্য সরাসরি নগদ সহায়তার মাধ্যমে ব্যয় করার ক্ষমতায় উন্নীত করা।”
দ্বিতীয়ত, “সরকারের উচিত সমর্থিত ক্রেডিট গ্যারান্টি প্রোগ্রামের” মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত মূলধন উপলব্ধ করা ।
তৃতীয়ত, এটি “প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন এবং প্রক্রিয়ার” মাধ্যমে আর্থিক খাতকে সঠিক দিশাতে পরিচালনা করা।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই ভারতের অর্থনীতি মহামারী শুরুর আগে মন্দার মুখে ছিল। ভারতের জিডিপি ২০১৯-২০ সালে মাত্র ৪.২% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রায় এক দশকের মধ্যে সর্বোত্তম ধীর গতির বৃদ্ধি। যদিও এখন দেশ ধীরে ধীরে তার অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করছে কিন্তু সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পরছে। গত বৃহস্পতিবার, ২০ লক্ষ্য মানুষ সংক্রমিত দেশের তালিকায় ভারত তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে।
এই ঘটনা মাথায় রেখে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি দ্রুত সংকুচিত হতে পারে, যার ফলে ১৯৭০-এর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ প্রযুক্তিগত মন্দার মুখোমুখি হবে ভারত।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল মাসে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ২৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্দীপনা ঘোষণা করে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন লিকুইডিটি এবং অর্থনীতি শুরু করার জন্য সংস্কার। এছাড়াও ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক ঋণের উপর হার হ্রাস এবং স্থগিতাদেশ চালু করেছে।
ডক্টর সিং এর মতে “আগের সংকট ছিল সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট যার জন্য প্রমাণিত অর্থনৈতিক সরঞ্জাম ছিল।” “এখন আমাদের একটি অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে যা সমাজে ভয় এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, এবং এই সঙ্কট মোকাবেলার জন্য একটি অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে মুদ্রা নীতি যে ভোঁতা তা প্রমাণিত হচ্ছে।”
পরিশেষে, কেউ এখনো জানে না করোনাভাইরাস মহামারীর পূর্ণ অর্থনৈতিক প্রভাব, এবং এর থেকে আরোগ্য লাভ করতে দেশের কতসময় লাগবে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে ডক্টর সিং-এর মত অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের অভিজ্ঞতাকে অগ্রাহ্য করে চলেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক।