দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ইকুয়ালিটী বা সমানতা নিয়ে মেয়েদের মধ্যে বরাবর একটি দাবি ছিল। পুরুষ শাসিত সমাজে আদি কাল থেকেই মেয়ের ছিল শুধু বংশ বিস্তারের মাধ্যম। লোপা, অপলা, গার্গী, মৈত্রেয়ী দের কথা বাদ দিলে এর পর মেয়েরা যুগে যুগে সব কিছু থেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বঞ্চিত। এমন কী এই ২০২০ তে মানুষ যখন মঙ্গলে যাওয়ার প্ল্যান করছে তখন ও প্রতি মিনিটে হাজার হাজার মেয়ে অপমানিত বা অত্যাচারিত হচ্ছে। নিজ গৃহ থাক সত্বেও শুধু মাত্র মেয়ে হওয়ার কারণে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে এসেছে মেয়েরা। কিন্তু ২০০৫ সালে হিন্দু পৈতৃক আইন সংশোধন করে সুপ্রীম কোর্ট জানায় যে মেয়েরাও এবার থেকে তার বাবা-মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হতে পারবে। কিন্তু ২০০৫ সালের আগে যাদের বাবা মা মারা গিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? হ্যাঁ, এবার সেই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করল সুপ্রীম কোর্ট।
২০০৫ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের সংশোধনী কার্যকর হওয়ার আগে যাঁদের বাবা-মা মারা গিয়েছেন, তাঁরাও কি পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাবেন? এই নিয়ে একাধিক মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। আজ সেই মামলাতে হিন্দু-আনডিভাইডেড ফ্যামিলি (HUF) প্রপার্টিতে মেয়েদের পক্ষেই রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত। এই রায় অনুযায়ী, পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার রয়েছে মেয়েদের। বিচারপতি অরুণ মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার এই ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। এই রায় এর মর্মার্থ, ২০০৫ সালের আগে অর্থাৎ হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (Hindu Succession Act) সংশোধনী কার্যকর হওয়ার আগে যদি কারও বাবা-মা গত হয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলেও তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন সেই ব্যক্তির মেয়েরা। এদিন রায় ঘোষণার আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, ‘কন্যা সন্তান চিরকালই প্রিয় কন্যা সন্তান হয়েই থাকেন। মহিলার জন্ম যবেই হয়ে থাক না কেন এবার থেকে আইন অনুযায়ী বাবার সমস্ত সম্পত্তির সমানধিকার পাবেন মহিলারা।’
মঙ্গলবারের রায়ে এও বলা হয়েছে যে ইতিমধ্যে হিন্দু-সাকসেশন অ্যাক্ট সংশোধন হওয়ার পরে মেয়েদের এই আইনি অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। কিন্তু এই সংশোধনের আগে বাবা বেঁচে থাকলে বা না থাকলেও সকল মেয়েদেরই এই সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে প্রকাশ বনাম ফুলবতী শীর্ষক একটি মামলাতে এই আইন কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছিল আদালত। আবার ২০১৮ সালে এই একই বিষয়ে অন্য আরেকটি মামলার ক্ষেত্রে এই আইন কার্যকর হবে বলে রায় দিয়েছিলো সুপ্রিম কোর্ট। ফলে বিষয়টি নিয়ে একটি ধাঁধা তৈরি হয়ে ছিল। কিন্তু আজ যখন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দান করেন তখন পুরোনো দুটি রায়ের আর কোনও বৈধতা থাকলো না। এদিন রায় ঘোষণার সাথে সাথে বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, ‘মেয়ে বরাবরই সারাজীবন বাবা-মায়ের আদরের। সুতরাং সম্পত্তির মালিক বেঁচে থাকুক আর না থাকুক, সেই সম্পত্তির উপর মেয়ের সারাজীবন অধিকার থাকবেই।’
এই রায়ের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট এদিন স্পষ্টতই জানায়, যেহেতু শীর্ষ আদালতে এই সংক্রান্ত মামলার বিভ্রান্তি মিটলো, তাই সারা দেশে কন্যা সন্তানের আইনি উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যে সমস্ত মামলা রয়েছে, সেগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। আজকের এই রায়ের পর সংসারে মেয়েদের দাবি ছেলেদের মতই অধিকার লাভ করল সে কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।