দ্যা ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়া জেলার ঝদিয়াবাদাম গ্রামে গেলে বুঝতে পারবেন, শিল্পীর আসলে সঠিক কোনো পেশা হয় না। এই যেমন অনিল কুমার। এক নিতান্ত সাদামাটা দেহাতি রাখাল (এক দর্শনে আপনি যা বুঝবেন) নিজেকে শিখিয়েছেন কিভাবে গবাদি পশু চরানোর সময় খেজুর পাতা ব্যবহার করে রাখী বানাতে হয়। এবং যখন গ্রামবাসীরা তার সেই মনের খেয়ালে বানানো রাখীর প্রশংসা করে, তখন তিনি তাঁর গ্রামের মহিলাদের এই হস্তশিল্প শেখাতে শুরু করেন।
আসলে শিল্পীর সেভাবে কোনও শিক্ষা হয় না। শিল্পের বোধ আর ভাবনার মেল বন্ধন হটাত্ করেই শিল্পীর কাছে থেকে বাইরে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এই যেমন কুমারের বেলাতেও তার অন্যথা হয় নি। ছত্তিশগড়ের বিস্তৃত অঞ্চলে চরম আবহাওয়াতে খেজুর গাছের অপ্রতুলতা নেই। গবাদি পশু চড়ানোর ফাঁকে হয়তো দাঁত দিয়ে খেজুর পাতা কাটতে কাটতে কুমারের স্বয়ংক্রিয় শিল্পী সত্বা আনমনে বানিয়ে ফেলেছিল প্রথম রাখি। হ্যাঁ, কুমার সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানান যে তিনি গত এক বছর ধরে তার এই শিল্প চর্চা করছেন। কিভাবে শিখেছেন এই শিল্প? উত্তরে জানান- “আমি নিজে নিজেই শিখেছি। ভেতর থেকেই হয়েছে, আপনা আপনিই”।
প্রশাসন কুমারের এই শিল্পকর্ম কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে উৎসাহ দিচ্ছেন। যদিও বর্তমানে করোনা মহামারীর কারণে পরিস্থিতি অনুকূল নয়। অনিল কুমারের বিষয়ে দান্তেওয়াড়া জেলা কালেক্টর দীপক সোনি বলেন, “লকডাউন থাকার কারণে এবারে সেভাবে রাখী বাজারে আসে নি। তবুও, আমরা হোয়াটসঅ্যাপের মত সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে তার উদ্যোগকে তুলে ধরেছি। অল্প বিস্তর সাফল্যও পেয়েছি।”
কুমার বলেন যে তিনি শুধু রাখি নয়, তিনি খেজুর পাতা দিয়ে ফুলের তোড়াও তৈরি করেন। তাঁর একটি কান শ্রবণ শক্তিহীন। শৈশব থেকে এই সমস্যা কে বাহন করেই নিজের স্ব-শিক্ষিত শিল্পের প্রতি সে যথেষ্ট মনোযোগী। তাঁর এই খেজুর পাতার শিল্পের ব্যবসা শুরু করার আগে, শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। কখনো কখনো তাঁর গ্রামের অন্যদের গবাদি পশুর দেখাশোনা করতেন। আর এই পশুদের দেখাশোনা করার সময়ই তিনি প্রায়ই ভাবনার জগতে হারিয়ে যেতেন এবং খেজুর পাতা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন।
তিনি প্রথমে এই খেজুর পাতা ও অন্যান্য শুকনো ফুল থেকে ঘরে সাজিয়ে রাখার ফুলের তোড়া তৈরি করতেন। তারপর কোনো এক মুহূর্তে অনুভব করেন যে এই শিল্পে অভিনবত্ব আনতে তাদের জটিল নকশায় বুনতে হবে যা কিছুটা অলঙ্কার সদৃশ হয়। অবশেষে তিনি আজকাল যে রাখী বুনছেন সেই শিল্পের ওপরে তাঁর দারুন দক্ষতা এসে গিয়েছে। রাখীর প্রতিটি ডিজাইন তৈরি করতে তাঁর প্রায় আধ ঘন্টা সময় লাগে।
তাঁর এই কুটির শিল্পকে আয়ের একটি টেকসই এবং কার্যকর উৎস হিসেবে গড়ে তুলতে, গ্রামের মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তিনি জানান- “বেশিরভাগ মহিলা এবং তরুণী আমার এই শিল্প শিখতে আসে। ইদানিং কিছু যুবকও এসেছে শেখার জন্যে।
তিনি আরও বলেন, “দিনে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়জন লোক আসে। আমি আশা করি প্রশাসন আমাকে কোনভাবে বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে সাহায্য করবে যা আমাকে এই শিল্পকর্ম বিক্রি করতে এবং জীবিকা উপার্জন করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করবে।”
এই প্রসঙ্গে ঝদিয়াবাদাম গ্রামের চাঁদনি, যিনি অনিলের কাছ থেকে শিল্প শিখছেন, তিনি বলেন যে আরও সুযোগ পেলে অনিল কুমারে দক্ষতা সারা দেশকেই তাক লাগিয়ে দেবে। এতটাই দক্ষ শিল্পী সে। এটা খুব স্বাভাবিক যে অনিল কুমারের এই শিল্পী হয়ে ওঠা আর পাঁচ জনের জন্যে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণার।