দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: আগামী কাল উস্তাদ বিসমিল্লা খানের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। আর তার ঠিক কয়েকদিন আগেই তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ির একাংশ বল-পূর্বক ভেঙে ফেললেন কিছু পরিচিত। বেনারসের হাদহা সরাইয়ের ওই বাড়িটি ছিল তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। ওই বাড়ির দোতলায় বসেই তিনি প্রতিদিন রেওয়াজ করতেন। এমন কী জীবতকালে ওই বাড়ি কখনই ছাড়তে পারেননি তিনি। এই বাড়িতেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন নিজের সাধনার সেই গুম্ফা। কিন্তু উস্তাদজির রেওয়াজের সেই ঘরটি বর্তমানে ধ্বংসস্তপূপে পরিণত হয়েছে।
দোতলা বাড়ির ওপরের অংশটি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত সদস্যদের বক্তব্য ওই বাড়িটি ভেঙে একটি বিশাল শপিং মল তৈরি হবে। গত ১২ অগস্ট ওই ঘরটি প্রথম ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই বাড়িটির মালিক ওস্তাদজির পাঁচ ছেলের এক ছেলে মেহতাব হুসেনের ছেলে। ওস্তাদজির আত্মীয়রা অবশ্য এই ঘটনা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, স্থানীয় এক দোকান তৈরির জন্য বাড়িটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে যখন ওস্তাদ প্রয়াত হন, তখন তাঁর শিষ্য ও ভক্তরা ওই বাড়িটিকে একটি মিউজিয়াম করার আবেদন জানিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে। তাদের সেই আবেদনে বলা হয়েছিল যে উস্তাদের স্মরণে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হোক, তাতে প্রদর্শিত হোক তাঁর বিভিন্ন স্মারক। সানাইয়ের মতো একটি ‘সাধারণ’ বাদ্য যন্ত্রকে মার্গসঙ্গীতের স্তরে উন্নীত করে তাকে বিশ্বজনীন করে তোলায় উস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ’র অবদান সর্বজনস্বীকৃত। তাঁর স্মৃতিতেই বেনারসের এই বাড়িটি হেরিটেজের তকমা দেওয়ার দাবিও করা হয়েছিল। কিন্তু এই ১৪ বছরেও কেউই এগিয়ে আসেননি। না রাজ্য সরকার, না কেন্দ্রীয় সরকার।
১৯৬৩ সালে হাদহা সরাইয়ের ভিক্ষমশাহ লেনের ধারে এই বাড়িটি কেনেন উস্তাদ জি। দোতলা বাড়ির উপরের একটি ঘরে, তিনি থাকতেন। রোজ স্নান করে ওই ঘরে রেওয়াজ করতেন তিনি। এই প্রসঙ্গে উস্তাদজির পালিতা কন্যা ও সঙ্গীতশিল্পী সোমা ঘোষ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন- বাবার ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, এটা শোনার পরই আমি ভেঙে পড়েছি। খুব অবাকও হয়েছি। শুধু ঘর ভেঙে ফেলাই নয় এর সাথে সাথে তাঁর মহামূল্যবান জিনিসপত্রগুলোও ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘরটি সঙ্গীত অনুরাগীদের জন্য উপাসনার একটি পবিত্র স্থান ছিল যার একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। তাঁর সব জিনিসপত্র যত দ্রুত সম্ভব সংরক্ষিত করা হোক।
এটা নতুন নয় এর আগে ২০১৭ সালে, উস্তাদের প্রিয় সানাই বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়েছিল শিল্পীর নাতি নাজরে হাসান। অভিযোগ, মাত্র ১৭ হাজার টাকার নিবিময়ে সে ওই রুপো দিয়ে বাঁধানো সানাই বিক্রি করে দিয়েছিল দুটি গয়নার দোকানে। প্রতিটি সানাইয়ের রূপো বাঁধানো অংশ গায়েব ছিল। গুণধর নাতি সেই রূপো গলিয়ে ফেলেছিল। পরে সেই রূপো উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
ভারতীয় মার্গসংগীতের অলংকার বিসমিল্লা খানের ছোট ছেলে নাজিম হুসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, এই বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে তিনি আদৌও কিছু জানেন না। যদি তেমন কিছু হয়, তাহলে সে ব্যাপারটি দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি এখন ওই বাড়িতে নেই। আগামী ২৪ অগস্টের পর বাড়ি ফিরে তারপর ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
১৯৪৭ এর ১৫’ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমন্ত্রণে রেড ফোর্টে সানাই বাজিয়েছিলেন উস্তাদ জি। তিনি বারবার বুঝিয়েছেন, যেমন সুরের কোনও ধর্ম হয় না, তেমনি শিল্পীরও কোনও ধর্ম হয় না। স্বাধীনতা দিবসের দিন যে সানাই বাজিয়েছিলেন, সেই সানাইও নাকি বাড়ি ভেঙে ফেলার সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুর পর ভারত ও বিদেশে ছড়িয়ে থাকা শিষ্য ও ভক্তরা খান সাহেবকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানালেও, বাড়ির অন্দরেই তাঁর মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের কোনও কদর ছিল না।