দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: বাড়ি থেকে বোর্ড এর নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব ১০৬ কিমি। দশম শ্রেণীর ছাত্র আশীসের কাছে যেখানে পৌছানো রীতিমত চ্যালেঞ্জের বিষয়। করোনা মহামারীর কারণে না চলেছে বাস না চলছে টেম্পো। সেই মূহুর্তে তার বাবা আবির্ভাব হলেন পরিত্রাতা হিসেবে। বাবা শোভারাম নিজের সাইকেলের পেছনে বসিয়ে ছেলেকে পৌঁছে দিলেন ১০৬ কিমি দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে। আর যা তাদের অজান্তেই হয়ে রইল একটা রেকর্ড!
গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশর ধার শহরে। পেশায় দিনমজুর শোভারমের স্বপ্ন ছেলেকে ‘বড় মানুষ’ করার। আর সেই স্বপ্নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে ১০৬ কিমি পথ সেটা সে মানতে নারাজ। ছেলেকে নিজের বাইসাইকেলের পেছনে বসিয়েই এই দীর্ঘ পথ সাইকেল চালালেন তিনি। শোভরামের ছেলে আশিস মধ্যপ্রদেশ বোর্ডের দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে ব্যাক পেয়েছিল। মঙ্গলবার সেইই অংক এবং সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষা ছিল। ছেলেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার আর কোনও উপায় না পেয়ে অগত্যা সাইকেলটাকেই বেছে নেন বাবা।
ধার জেলার মানাওয়ার তেহশিলের একটি ছোট গ্রামে বাস শোভরামের। গ্রাম থেকে ১০৬ কিমি দূরের শহরে যাওয়ার জন্যে তিন দিনের মতো রুটি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তাঁরা। পরীক্ষা কেন্দ্রে ছেলেকে নির্বিঘ্নে পৌঁছে দেওয়ায়র পর শোভরাম জানান- ‘আমি দৈনিক শ্রমিক। কিন্তু আমি চাই আমার সন্তান যেন একটা ভালো জীবন পায়। ও যদি পরীক্ষায় একটা দ্বিতীয় সুযোগ পায়, তার জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি আছি।’


ছেলে আশিসও পড়াশোনা করে বড় হতে চায়। একবার অকৃতকার্য হওয়ার পর এবার পাশ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে সে। তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌছনোর ভরসা বলতে একটা দু-চাকার সাইকেল। পথে বিপদে আপদে পড়লে বিকল্প উপায় হিসেবে বন্ধুর কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার করে শোভারাম। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার বিকেলে বাবা ও ছেলে সাইকেলে বেরিয়ে পড়েন। রাতের অন্ধকার আর সাইকেল চালানো নিরাপদ নয় বুঝে পথে চলতে চলতে রাত নটা নাগাদ মাণ্ডুতে থামেন তাঁরা। কোনও মন্দির পেলে সেখানেই রাত কাটাবেন বলে ঠিক করেন দুজনে।
তবে এক স্বহৃদয় গৃহস্থের বাড়িতে রাতের মতো আশ্রয় ও খাবার পান। আবার ভোর ৪ টেয় রওনা হয়ে যান। আশীষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল সকল ৮টায়। সকাল ৭.৪৫-এ পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছন তাঁরা। আশিস যখন পরীক্ষা দিচ্ছিল, তখন শোভরাম ওইদিনের রাত কাটানোর মতো জায়গা খুঁজছিলেন। অবশেষে একটা ফাঁকা সরকারি বিল্ডিং-এর করিডোরে কোনওভাবে রাত কাটান তাঁরা।
ওই দিন রাত কাটিয়ে পরের দিন রওনা দেন তাঁরা। কিন্তু পরের দিন সকাল হতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। মূহুর্তে ভাইরাল হয়ে যায় ১০৬ কিমি পথ সাইকেল চালিয়ে পরীক্ষা দিতে আসা এই বাবা-ছেলের খবর। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং সরকারি অফিসারেরা তাঁদের খোঁজে আসেন। সব পরীক্ষা কেন্দ্রেই তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেদিনের পরীক্ষা শেষে খাবার ও সরকারি হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় দুজনের।
আগামী ২৪ তারিখ আরও একটা পরীক্ষা আছে। শোভরাম ভেবেছিলেন সাইকেল চালিয়ে ছেলেকে নিয়ে ফিরে এসে আবার ২৩ তারিখ রওয়না দেবেন। তবে সেই পরিশ্রমের আর দরকার পড়েনি। বাকি কদিন সরকারি হোস্টেলেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে তাঁদের। পরীক্ষা শেষে সরকারি গাড়িতেই তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
পথ চলতি অচেনা মানুষদের থেকে এত উপকার পেয়ে অভিভূত হয়ে পড়েছেন শোভরাম। মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথও শোভরামের সাহসকে স্যালুট জানিয়ে কুর্নিশ করেছেন। এই করোনা পরিস্থিতিতে যে রাজ্য সরকারেই পড়ুয়াদের পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা উচিত, সেই দাবিও জানিয়েছেন তিনি।