দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় ব্রতী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীরা। চলছে নানান গবেষনা। পরীক্ষা হওয়া থেকে শুরু করে রিপোর্ট পাওয়া অবধি যে সংগ্রাম তা আমারা সকলেই লক্ষ্য করেছি। এই নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে সবাইকেই। তবে গার্গল -এর মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা হবে এবার ঘরে বসেই। হ্যাঁ, নিজেরাই করতে পারবেন নিজেদের নমুনা পরীক্ষা। জনগন নিজের লালারস নিজেই এই পদ্ধতিতে টেস্টিংয়ের জন্য দিতে পারবেন।এতে প্রয়োজন হবে না কোনো স্বাস্থ্যকর্মীর। কম খরচে করা যাবে এই পরীক্ষা জানাচ্ছেন এইমস-এর নতুন গবেষণা।
গার্গল জলেই এবার সহজে নমুনা পরীক্ষা। করোনা পরীক্ষার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় সকলেই অস্থির। পরীক্ষা থেকে রিপোর্ট আসা ওবধি সাধারণ মানুষকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে আর দাঁড়াতে হবে না সাধারণ মানুষকে। আর লাগবেনা PPE কিট পরা নমুনা সংগ্রহকারীদের। নিজের নমুনা এবার নিজেই সংগ্রহ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। এইমসের গবেষণা নিয়ে এল নতুন এক দিশা। এর ফলে কমবে আক্রান্তের নমুনা গ্রহণের সংখ্যা।
মে-জুন মাসে AIIMS-এ চিকিৎসাধীন ৫০ জন কোভিড রোগীর ওপর এই ‘ক্রস ফাংশনাল’ গবেষণা করা হয়। আক্রান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লালারসের নমুনা ও গার্গেল করা জলের নমুনা নেওয়া হয়। এরপর RTPCR পদ্ধতিতে তার পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, সব গার্গেল নমুনা পজিটিভ হয়েছে। দেখা গিয়েছে শতকরা ৭৪% রোগী লালারসের এর মাধ্যমে নমুনা নেওয়াতে অসুবিধাবোধ করেন। অন্যদিকে মাত্র ২৪% রোগী গার্গেলের নমুনা নেওয়াতে অসুবিধাবোধ করেন। রিপোর্টের শেষে বলা হয়েছে যে, সমীক্ষায় উঠে এসেছে গার্গেলের মাধ্যমেও নমুনা নেওয়া যেতে পারে।
কেউ যদি নিজেকে করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ করেন, তাহলে সে নিজেই গার্গেল করার সময় তার গার্গল করা জল আলাদা করে রেখে পরীক্ষাকেন্দ্রে দিয়ে আসতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে কোভিডের চিকিত্সার খরচও কমবে। AIIMS-এর চিকিৎসকদের করা এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’-এ।
এই গবেষণার নাম “Gargle lavage as a viable alternative to swab for detection of SARS_COV_2″। AIIMS-এর মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরা এই গবেষণা করেন। তাদের দলে রয়েছেন অঙ্কিত মিত্তল নামে একজন বাঙালি চিকিৎসকও। গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘লালারস সংগ্রহ করার সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের বেশি করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসতে হয়। ফলে তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নয়া এই পদ্ধতিতে সেটা থেকে বাঁচা যাবে’। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিকল্প পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ করা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এই বিকল্প পদ্ধতি “gargle lavarge”-র সঙ্গে ন্যাসোফ্যারাইঙ্গেল ও অরোফ্যারাইঙ্গেলকে তুলনা ও করা হয়।
বিকল্প এই পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা কবে শুরু হবে তা নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ICMR। সংক্রামক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলেন, “এখন যেভাবে ন্যাসোফ্যারিংক্স ও অরোফ্যারিংক্স থেকে নমুনা নেওয়া হয় তাতে অ্যারোসল তৈরি হয়ে থাকে, যাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এই পদ্ধতি শুরু হলে সেটা কমবে।
গার্গেল করা জলের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ হলে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্তের কম সংস্পর্শে আসবেন, যেটা ভালো। আর এতে খরচও কম পড়বে।” জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রণজয় মজুমদার জানান, “এটা ভালো হবে। আরও মানুষ পরীক্ষা করাতে পারবে।”সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ সায়ন ব্যানার্জি জানান,’এই পদ্ধতি অনেক অস্বস্তিকর’। যদিও আরও অনেক মানুষের থেকে নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছেন বলে দাবি একাধিক বিশেষজ্ঞদের।