দ্য ক্যালকাটা মিরর ব্যুরো: মঙ্গলবারই প্রকাশ্যে এল প্রধানমন্ত্রীর করোনা মোকাবিলায় গঠিত পিএম কেয়ার্সে দুর্নীতির অভিযোগ। এবার অভিযোগ উঠল পিএম কেয়ার্স বা প্রধানমন্ত্রী যত্ন তহবিলে ব্যাপক কারচুপির।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে পিএম কেয়ার্স নিয়ে একটি মামলা গড়িয়েছিল। কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের দেওয়া সেই রায়ে কেন্দ্রের স্বস্তি মিললেও এবার এই তহবিলের বরাদ্দ অর্থে ভেন্টিলেটরগুলির কেনায় প্রদত্ত দামে বিস্তর কারচুপির অভিযোগ উঠল!
অঞ্জলি ভরদ্বাজ নামে এক সমাজকর্মীর করা একটি আরটিআই-র উত্তরে এই বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ১৮ জুন, ২০২০ তারিখে তিনি কেন্দ্র পরিচালিত হাসপাতালগুলোর বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিলেন যা অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে অথবা পিএম কেয়ারস ফান্ডের মাধ্যমে দেওয়া ভেন্টিলেটর সরবরাহ করা হয়েছে, যার মধ্যে হাসপাতালের নামও রয়েছে। তিনি পিএম কেয়ারস ফান্ড থেকে বরাদ্দ কৃত মোট পরিমাণ, সরবরাহকৃত ভেন্টিলেটরের মোট সংখ্যা এবং তহবিল কর্তৃক সরবরাহ কৃত ভেন্টিলেটরের সংখ্যা জানতে চেয়েছেন।


ভরদ্বাজের সেই আরটিআই-এর উত্তরে জানানো হয়, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রোগ্রামের অন্তর্গত ভেন্টিলেটর কেনা হয়েছে ৫৮৮৫০টি। এর জন্যে পিএম কেয়ার্স ফান্ড থেকে বরাদ্দ করা হয়েছিল মোট ২০০০ কোটি টাকা! রাজ্য/ইউটিতে ১৭,১০০ টি ভেন্টিলেটর বরাদ্দ করা হয়েছে।
অঞ্জলি দেবীর অভিযোগ ভেন্টিলেটর কেনার ক্ষেত্রে ও বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি দুর্নীতি নজরে এসেছে। সমস্যা সেই বরাত দেওয়াতে। দেখা গিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংস্থার থেকে ভিন্ন দামে ভেন্টিলেটর কেনা হয়েছে। ২০ জুলাই, ২০২০ তারিখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলেছে, “দিল্লির ডিআরডিও সিওভিড হাসপাতালে ২৫০ টি-কেয়ার ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়েছে এবং তিনটি দিল্লির আয়ুর্বেদ ইনস্টিটিউটে সরবরাহ করা হয়েছে। ভেন্টিলেটর কেনার জন্য হাসপাতালে কোন তহবিল সরবরাহ করা হচ্ছে না।
আরটিআই-এর যে জবাব পাওয়া গিয়েছে, তা অনুযায়ী, অ্যালায়েড মেডিক্যাল নামে একটি সংস্থা প্রতিটি ভেন্টিলেটরের দাম ধার্য করেছে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকা করে, অথচ আগভা হেলথ কেয়ার নামে একটি সংস্থা ওই একই ভেন্টিলেটর বিক্রি করেছে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা/ প্রতি ভেন্টিলেটর!
শুধু তাই নয়, আর টি আই এ জানানো হয়েছে মোট ৬টি সংস্থা থেকে ভেন্টিলেটর কেনা হলেও তার মধ্যে দুটিকে বিশেষজ্ঞ কমিটি অনুমোদনই দেয়নি। এই দুই সংস্থা যথাক্রমে জ্যোতি সিএনভি অটোমেশন ও এএমটিজেড। করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসা সামগ্রী কিনতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হলেও তার অনুমোদন ছাড়া দুটি সংস্থার থেকে কেন ভেন্টিলেটর কেনা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।


উল্লেখ্য, এর আগে ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলের টাকায় ভেন্টিলেটর কেনার ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ তুলেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁন্ধী। সোমবারই নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, ‘আপনার টেক কেয়ার ফান্ডে কত জমা পড়েছে, সেটা আগে বলুন!’
আর আজ সেই আর টি আই-এ সেই তথ্যটিই যেন প্রকাশ্যে একই দাবি তুলছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও এই অস্বচ্ছতার অভিযোগই কেন্দ্রকে বিঁধছে এখন। ভ্রষ্ঠাচারহীন যে ভারতের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী, আজ যেন সেই কথাই মেকি বলে পরিগণিত হচ্ছে।